রাজ্যের শিশু বিকাশ, মহিলা ও সমাজকল্যাণ দফতরের সচিব রোশনি সেন, স্টেট রিসার্চ সেন্টারের ডিরেক্টর নন্দিনী কাজুরি-রা মঞ্চে বসে। রয়েছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান বিশ্বনাথ চক্রবর্তী, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-অধ্যাপকদের অনেকেই। ভরা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের যৌন হেনস্থার প্রসঙ্গ তুলে এক ছাত্রীর প্রশ্ন, মেয়েরা কী ভাবে রুখে দাঁড়াবে?
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফারেন্স রুমে এ দিন আলোচনাচক্রটি ছিল ‘সুশাসন ও মহিলাদের ক্ষমতায়ন’ নিয়ে। সেখানে ছিলেন শিলিগু়ড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি তাপস সরকার এবং পঞ্চায়েত স্তরের জনপ্রতিনিধিরাও। সকলের মাঝে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্রী শ্রাবন্তী বসাকের প্রশ্ন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের নানা ভাবে যৌন হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে। মেয়েরা যাতে নিজেরাই সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে পারেন, সে জন্য কি কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে?’’
সম্প্রতি ক্যাম্পাসে একাধিকবার শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ওয়াচ অ্যান্ড ওয়ার্ড’ ঘেঁষা একটি মেসে আইন বিভাগের এক ছাত্রীর আত্মহত্যা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তাকে একটি ছেলে উত্যক্ত করছিল বলে পরিবারের লোকেরাও অভিযোগ করেন। এর কিছু দিনের মধ্যে রাতে পড়ে ফেরার সময়ে আর এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করা হয় বলে অভিযোগ। পরপর দু’টি ঘটনায় এলাকায় ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানোর দাবি ওঠে। কিন্তু এখনও তা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের মধ্যে দিয়ে একটি পাকা সড়ক দু’দিকের পাড়াকে যুক্ত করেছে। রাস্তাটি দিয়ে বেশ কিছু গাড়িঘোরা চলাফেরা করে। তাদের নিয়ন্ত্রণেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এই অবস্থায় এ দিনের মঞ্চে বিষয়টি তুলে এনে শ্রাবন্তী অনেককেই অস্বস্তিতে ফেলে দিলেন। তবে বন্ধুদের মধ্যে কেউ কেউ তাঁকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গীতশ্রী সরকারের সঙ্গে তুলনা করছেন। ‘হোক কলরব’ আন্দোলনের সময়ে সমাবর্তনে মালদহের মেয়ে গীতশ্রী মঞ্চে দাঁড়িয়ে পদক ও শংসাপত্র নিয়ে অস্বীকার করেছিলেন। এ দিন শ্রাবন্তীর প্রশ্ন অবশ্য তুলনায় অনেক সহজ ও সরাসরি, বলছেন শিক্ষকরা। রোশনি নিজেও শ্রাবন্তীর এই প্রশ্নের জবাব সরাসরি দিয়েছেন—‘‘মেয়েদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো, আত্মরক্ষার কৌশল শেখানো— এটা বিভিন্ন জায়গায় করা হচ্ছে। তবে এখানে তেমন কিছু হবে কি না, সেটা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই বলতে পারবেন।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং রেজিস্ট্রার অবশ্য এই নিয়ে কিছু বলতে চাননি।