বাবার বকুনি, আত্মঘাতী বালক

রান্নাঘরে গিয়ে ফিরোজের ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে চমকে যান সকলে। সঙ্গে সঙ্গে ওড়না কেটে তাকে নামানো হয়। খবর দেওয়া হয় জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানায়। পুলিশ গিয়ে দেহ জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৮ ০৩:২৮
Share:

প্রতীকী ছবি

দুই ভাই স্কুলে গিয়েছে। কিন্তু আট বছরের ফিরোজ মহম্মদ যায়নি। কাজ থেকে ফিরে তাকে বাড়িতে দেখে তাই বাবা খইরুল বকুনি দেন। সেই বকুনি শুনে বাড়ি থেকে ছুটে পালায় ফিরোজ। ঘণ্টাখানেক পরে খোঁজাখুঁজি করে দেখা যায়, বাড়ির এক কোণে রান্নাঘরে মায়ের ওড়নার ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে সে।

Advertisement

জলপাইগুড়ির বেলাকোবা গ্রাম পঞ্চায়েতের মুদিপাড়ায় বাড়ি ফিরোজদের। আট বছরের ফিরোজ পড়ত মহম্মদ মুদিপাড়া প্রাইমারির স্কুলের তৃতীয় শ্রেণিতে। বাবা খইরুল চাষি। এ দিন মাঠ থেকে ফিরে তিনি দেখতে পান, ফিরোজ স্কুলে যায়নি। সেই নিয়ে বকাবকি করেন। পরে কাঁদতে কাঁদতে আত্মীয়রা বলছিলেন, একরত্তি ছেলে যে এক বকায় এতটা করে ফেলবে, সেটা কেউই বোঝেনি!

রান্নাঘরে গিয়ে ফিরোজের ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে চমকে যান সকলে। সঙ্গে সঙ্গে ওড়না কেটে তাকে নামানো হয়। খবর দেওয়া হয় জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানায়। পুলিশ গিয়ে দেহ জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।রান্নাঘরে গিয়ে ফিরোজের ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে চমকে যান সকলে। সঙ্গে সঙ্গে ওড়না কেটে তাকে নামানো হয়। খবর দেওয়া হয় জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানায়। পুলিশ গিয়ে দেহ জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এ দিন বিকেলেই দেহ ময়নাতদন্তের পরে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। দেহ বাড়িতে পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। চোখের জল বাঁধ মানেনি পাড়াপড়শিদেরও। ছেলের দেহ আকড়ে ধরে কপাল চাপড়াছিলেন বাবা খইরুল মহম্মদ। নাবালকের সম্পর্কিত দাদু ওসমান আলি জানিয়েছেন, ‘‘নাতি একটু জেদি ছিল। কিন্তু এমন কাণ্ড ঘটাবে তা ভাবাই যাচ্ছে না।’’

Advertisement

এই নাবালকের মৃত্যু অন্য এক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। মাত্র আট বছর বয়েসে আত্মহত্যার চিন্তা খুব স্বাভাবিক কিনা, তাই নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এর আগেও একাধিকবার এই বয়সী বালক-নাবালিকদের আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কখনও বাবা-মায়ের বকুনি, কখনও ভাইবোনের সঙ্গে ঝগড়া— এ রকম সামান্য সব কারণে শিশু বয়েসেই আত্মঘাতী হওয়ার প্রবণতা যে বাড়ছে, তা মেনে নিচ্ছেন মনোবিদরা। তাঁদের বক্তব্য, এই বয়সে মন বেশি আবেগপ্রবণ হয়। মোবাইল, টিভিতে এই ধরনের সব ঘটনা দেখে তারা। অনেক সময় কিছু ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীও হয় তারা। সেটাও ছাপ ফেলে তাদের মনে। যখন কোনও কিছু পছন্দ হয় না, তখন সেই সব পন্থা বেছে নেয় তারা। মনোবিদরা আরও বলছেন, এই বয়েসে ফাঁস লাগালে বা বিষ খেলে লাগালে তার অন্তিম পরিণতি কী হতে পারে, তার কোনও স্পষ্ট ধারণাও থাকে না শিশুদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন