নেতৃত্বে: কর্মিসভায় শুভেন্দু অধিকারী। নিজস্ব চিত্র
মালদহে তৃণমূলের দ্বন্দ্ব চলছেই। পঞ্চায়েত ভোটের আগে কোথাও তা হাতাহাতি বা একেবারে মারপিট পর্যন্ত গড়িয়েছে। এ বার ঘরের অন্দরেও সেই দ্বন্দ্বকে ঘিরে চলল তুমুল তর্ক-বিতর্ক। বসে থেকে যা শুনলেন তৃণমূলের মালদহ জেলার পর্যবেক্ষক, পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। কখনও উঠে তর্ক থামালেন, কখনও কাউকে সতর্ক করলেন, কখনও আবার দ্বন্দ্ব মেটাতে বিবদমান দুই নেতাকে একসঙ্গে বসিয়ে কথাও বলালেন। মঙ্গলবার রাতে পুরাতন মালদহের একটি বিলাসবহুল হোটেলে তৃণমূলের মালদহ জেলা ও ব্লক নেতাদের নিয়ে বৈঠকের ধরা পড়ল এমন ছবিই।
দলীয় সূত্রে খবর, নেতৃত্বের এ হেন খেয়োখেয়িতে প্রচণ্ড বিরক্ত শুভেন্দুবাবু। পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী বাছাই নিয়ে সেই দ্বন্দ্ব যাতে চরমে না পৌঁছয় সে কারণে বুধবার গাজোল হাইস্কুল মাঠে দলীয় কর্মিসভায় প্রার্থী বাছাই করতে ব্লকে ব্লকে স্ক্রিনিং কমিটি গড়ার কথাও ঘোষণা করেন। গাজোল ব্লকের কমিটিতে বিবদমান সব গোষ্ঠীর নেতা-নেত্রীদেরই রাখা হয়েছে।
মালদহে তৃণমূলের দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। কিন্তু সেই প্রবল দ্বন্দ্বের মধ্যেও গত ১২ ফেব্রুয়ারি পুরাতন মালদহের নারায়ণপুরে দলের জেলা বুথ কর্মী সম্মেলনে কর্মীদের ঢল দেখে উত্সাহিত হয়ে পড়েন রাজ্য নেতৃত্ব। দলীয় সূত্রে খবর, এরপরই দলের জেলা পর্যবেক্ষক শুভেন্দুবাবু মালদহের ব্লকে ব্লকে কর্মিসভা করার সিদ্ধান্ত নেন। বুধবার সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত গাজোল, বামনগোলা ও হবিবপুর এই তিন ব্লকে তিনটি কর্মিসভা করেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবার পুরাতন মালদহ ও ইংরেজবাজার ব্লকে কর্মিসভা করবেন।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনায় মঙ্গলবার রাতেই পুরাতন মালদহের একটি বিলাসবহুল হোটেলে দলের জেলা ও ব্লক কমিটির নেতাদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছিলেন তিনি। দলীয় সূত্রে খবর, সেই বৈঠকেও চাঁচল ১, কালিয়াচক ৩, রতুয়া ১- সহ বিভিন্ন ব্লকের বিবদমান গোষ্ঠীর নেতাদের মধ্যে চরম তর্ক-বিতর্ক বেধে যায়। যেমন, চাঁচল ১ ব্লকে দলীয় কর্মসূচি পালন থেকে শুরু করে অঞ্চল কমিটি গঠন, সরকারি প্রকল্পের সুবিধা প্রাপকদের তালিকা তৈরি সহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্লক সভাপতি সচ্চিদানন্দ চক্রবর্তী ও কার্যকরী সভাপতি ইনতাজ হোসেন একে অপরের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন। একইভাবে কালিয়াচক ৩ ব্লকের সভাপতি নালেপ আলি ও চেয়ারম্যান নলিনী সরকারও তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। শুভেন্দুবাবু সে সময় উঠে দুজনকেই সতর্ক করেন এবং বুধবার দুপুরের মধ্যে বিবাদ মিটিয়ে রাতে ফের তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বলেন। প্রাক্তণ মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীতো বলেই বসেন যে দলে সিপিএম থেকে আসা লোকজনের মতামত তিনি শুনবেন না। দলে থেকেই তার বিরোধিতা করে যাবেন। এদিকে মানিকচক ব্লকের দ্বন্দ্ব মেটাতে ব্লক সভানেত্রী সাবিত্রী মিত্র ও জেলার পরিষদের সহকারী সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডলকে আলাদা ডেকে নিয়ে আলোচনায় বসেন শুভেন্দুবাবু। যদিও বৈঠক নিয়ে জেলা নেতৃত্ব কেউ মুখ খুলতে নারাজ।
বৈঠকে কোনও ইঙ্গিত না দিলেও এ দিন বেলা ১১টায় গাজোল হাইস্কুলের মাঠের দলের কর্মিসভায় গিয়ে প্রার্থী বাছাই নিয়ে শুভেন্দুবাবু স্ক্রিনিং কমিটি গড়ার কথা ঘোষণা করে দেন। তিনি বলেন, ‘‘ব্লকে ব্লকে স্ক্রিনিং কমিটি ৩১ মার্চের মধ্যে প্রার্থী তালিকা তৈরি করে জেলায় পাঠাবে।’’ পাশাপাশি ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করে পঞ্চায়েত দখলেরও ডাক দেন তিনি। মালদহে ৫১ শতাংশ ভোট পেয়ে জেলা পরিষদ দখলের লক্ষ্য রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি ঘোষণা করেন, মুর্শিদাবাদের মতো মালদহেও উইকেট পড়বে এবং নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ও ছবি থাকলে বিরোধীরা ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে।