অস্তিস্ত্ব, মান রক্ষায় গবেষণা চান চা ব্যবসায়ীরা

 চা উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছেন আমেরিকার কিছু ব্যবসায়ী। আর তা হচ্ছে ভারতের চা ব্যবসায়ীদের একাংশের হাত ধরেই। এই ঘটনায় ভবিষ্যতে ভারতীয় তথা উত্তরবঙ্গের চায়ের বাজার নিয়ে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন চা ব্যবসায়ীদের অনেকে।

Advertisement

সৌমিত্র কুণ্ডু

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৩১
Share:

চা উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছেন আমেরিকার কিছু ব্যবসায়ী। আর তা হচ্ছে ভারতের চা ব্যবসায়ীদের একাংশের হাত ধরেই। এই ঘটনায় ভবিষ্যতে ভারতীয় তথা উত্তরবঙ্গের চায়ের বাজার নিয়ে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন চা ব্যবসায়ীদের অনেকে।

Advertisement

অনেেক আবার এটা নিয়ে মাথা ঘামাতেই রাজি নন। তাঁদের মত, প্রতিযোগিতার যুগে গবেষণার মাধ্যমে চায়ের মান, বাজার ধরার ক্ষমতা বাড়াতে পারলেই মিলবে কদর। কিম্তু গবেষণা হচ্ছে না বলে আক্ষেপ করছেন তাঁরাও।

উত্তরবঙ্গের চা ব্যবসায়ীদের একাংশ জানান, ‘ইউএস লিগ অব টি গ্রোয়ার্স’ নামে এক দল আমেরিকার ব্যবসায়ী সেখানে চা চাষে উদ্যোগী। মিসিসিপি, টেক্সায়, লুইসিয়ানা এলাকায় ইতিমধ্যেই চা চাষ শুরু হয়েছে। অন্তত ৫০০ ছোট চা উৎপাদনকারী যুক্ত রয়েছেন এর সঙ্গে। তাদের সহায়তা করছে এদেশের চা উৎপাদনকারী একটি সংস্থা। বিহারের কোঠিয়ায় চা বাগান এবং উৎপাদন ইউনিট বানিয়েছেন উত্তরবঙ্গের চা ব্যবসায়ী রাজীব লোচন। তিনি কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ড্রাস্ট্রি’র উত্তরবঙ্গ শাখার চেয়ারম্যান। বছর দুয়েক আগে ইউএস লিগ অব টি গ্রোয়ার্সদের প্রতিনিধি দল তাঁর বাগান পরিদর্শনে আসেন। তিনি জানান, চায়ের ব্যবসা বৃদ্ধি করতেই ভারত, আমেরিকা, চিন-এর ব্যবসায়ীরা মিলে ‘গ্রুপ অব থ্রি’ তৈরি করা হয়েছে। ঠিক হয়ছে তারা একে অপরকে এই ব্যবসায় সাহায্য করবেন।

Advertisement

রাজীব জানান, আমেরিকার আটটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং চিনের আটটি বিশ্ববিদ্যালয় চায়ের গবেষণার কাজ নিয়ে তাদের সঙ্গে রয়েছেন। কিন্তু ভারতের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়কে পাওয়া যায়নি যেখানে চা নিয়ে উল্লেখযোগ্য কোনও গবেষণা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, চা উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত এদেশের আরও কিছু সংস্থাও বিদেশে চা চাষের ক্ষেত্রে সহায়তা দিয়ে থাকে।

রাজীববাবু বলেন, ‘‘নিজেদের ব্যবসার স্বার্থেই আমরা কাজ করছি। আমাদের দেশের চায়ের সুনাম রয়েছে। দার্জিলিং ব্র্যান্ড বিশ্ববাজারে সমাদৃত। কিন্তু গবেষণার কাজ না-এগোলে বড় কিছু করা সম্ভব নয়।’’

নর্থ বেঙ্গল টি প্রোডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা প্রবীর শীল জানান, শ্রীলঙ্কা এবং কেনিয়ার চা ভারতীয় চায়ের বাজারকে চাপে রাখছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে চিনও। যারাই ভাল কিছু করবে বাজার ধরতে তারা ঝাঁপাবে এটাই স্বাভাবিক। আমেরিকায় ভারতীয় চায়ের বড় বাজার রয়েছে। প্রবীরবাবু বলেন, ‘‘আমেরিকা চা উৎপাদনে এগিয়ে এলে সেখানে ভারতীয় চা গুরুত্ব হারাতে পারে।’’

চা ব্যবসায়ীদের দাবি, চায়ের মান, অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কী ভাবে চায়ের বাজার ঠিক রাখা যায় তা নিয়ে আর ভাবতে হবে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘টি ম্যানেজমেন্ট’ বিভাগ চালু হয়েছে। তবে এখনও সেখানে খুব বেশি গবেষণা হচ্ছে না বলেই রাজীব লোচন মনে করেন। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উদ্যোগে হওয়া আন্তর্জাতিক কনফারেন্সেও বিষয়টি নিয়ে চর্চা হয়েছে। কলা, বাণিজ্য ও আইন বিভাগে ডিন সঞ্চারী মুখোপাধ্যায়ও মনে করেন, উত্তরবঙ্গের চা চাষের উন্নতির জন্য গবেষণামূলক কাজ করা যেতে পারে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন