এই ভাবেই ‘অবরুদ্ধ’ হয়ে থাকে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। —নিজস্ব চিত্র।
মাধ্যমিকের সময় দেখা গিয়েছিল ছোট গাড়ির ছাদে করেও ছাত্রেরাও যাচ্ছে পরীক্ষা দিতে। রাস্তায় যানজটে আটকে থাকছে বাস। ভিতরে উৎকণ্ঠায় আকুল পড়ুয়ারা। উচ্চ মাধ্যমিকের আগের দিনও সেই আশঙ্কা থেকে মুক্তি পাননি অভিভাবকেরা।
সুজাপুর নয়মৌজা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নাজির বিশ্বাস বলেন, সেই সঙ্গেই তাঁর বক্তব্য, ‘‘রাস্তায় গাড়ি কমানোর দায়িত্ব নাগরিকদেরও। উচ্চ মাধ্যমিকের কথা ভেবে যাঁদের ব্যক্তিগত গাড়ি না বার করলেও চলে, তাঁরা বরং এই ক’দিন গাড়ি ছেড়ে সাধারণ যানবাহনে যাতায়াত করুন।’’
তিনি বলেন, ‘‘রাস্তায় গাড়ি কমলে সকলেরই লাভ। সে কথাটা শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষরা ভাবুন। ক’টা দিন তাঁরা একটু কষ্ট করুন না।’’ সুজাপুরেই যানজটের সমস্যা কাটছে না দীর্ঘকাল ধরে। মুর্শিদাবাদ থেকে গাড়ি এসে দাঁড়িয়ে থাকে ঘণ্টার পরে ঘণ্টা। তাই ছোট গাড়ি কমলে যানজট একটু হলেও কমবে। নাজির বিশ্বাসের কথায়, ‘‘পরীক্ষা শুরুর সময় তো আর পিছিয়ে দিতে পারি না। কিন্তু জানি, যানজটের জন্যই কিছু ছাত্র ঠিক দেরি করে পৌঁছবে।’’ তিনি জানিয়েছেন, পরীক্ষাকেন্দ্রে নজরদারির জন্য শিক্ষকদের সকাল ৯টার সময়ে আসতে বলেছেন তিনি।
সুজাপুর গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা জয়শ্রী পালের বক্তব্য, মাধ্যমিকের সময় যানজটের জন্য অনেক শিক্ষিকা সময় মতো স্কুলে আসতে পারেননি। পরীক্ষা শুরু করতে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। এ বারও তেমন হলে খুব বিপাকে পড়তে হবে। তিনি বলেন, ‘‘অনেক ছাত্র প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে বাসের ছাদে চেপেও সময়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে চলে আসে। মেয়েদের পক্ষে তো তা-ও সম্ভব নয়। প্রশাসন অন্তত এই ক’টা দিন বেশি নজর রাখুক রাস্তার উপরে।’’
মাধ্যমিক শুরু হচ্ছিল বেলা ১২টা থেকে। কালিয়াচক হাইস্কুলের শিক্ষক সামিম মিঞার কথায়, ‘‘যানজট সব থেকে বেশি হয় ব্যস্ত সময়। অর্থাৎ বেলা ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত। তাই মাধ্যমিকে যাও-বা একটু ছাড় মিলেছিল, উচ্চ মাধ্যমিকের সময় পুরোপুরি যানজটের কবলে পড়ার আশঙ্কা থাকছে।’’ স্থানীয় বাসিন্দারাও জানান, সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত রাস্তা আটকে থাকছে। সামিমের কথায়, ‘‘একে তো পরীক্ষার উদ্বেগ, তার উপরে যানজটের দুশ্চিন্তা। ছাত্রছাত্রীরাও তাই একটু আগে বেরোলেই ভাল করবে।’’ অনেক অভিভাবক ভয় পেয়ে গাড়ি ভাড়া করে ফেলেছেন। এক একটি গাড়িতে পাঁচ থেকে দশ জন করে উঠে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাবে। কিন্তু প্রশাসনের একটি অংশের ধারণা, এই ছোট গাড়ির ভিড় যানজট আরও বাড়াবে। এক অভিভাবকের অবশ্য বক্তব্য, ছোট গাড়িই ভরসা, কেননা, তা হলে বড় রাস্তা যানজটে ভরে থাকলে গ্রামের ভিতরের ছোট রাস্তা দিয়ে চয়ে যাওয়া যাবে।
তবে মূলত সকলেই দাবি, প্রশাসনকে আরও উদ্যোগী হতে হবে। নাজির বিশ্বাসের বক্তব্য, ‘‘যে মোড়গুলোয় বেশি যানজট হয়, সেখানে ট্রাফিক পুলিশ রাখা হোক। তবে সেই সঙ্গেই নজর রাখতে হবে, যানজট এড়িয়ে আসার জন্য কেউ যেন অবৈধ ভাবে গাড়ি না চালান। সকলেরই তাড়াতাড়ি থাকলে আরও যানজট বাড়বে।’’
মালদহে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে রোজ যানজটের যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছেই নিত্যযাত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষকে। শুক্রবারও দিনভর মালদহের একাধিক জায়গায় দেখা গিয়েছে যানজটের চেনা ছবি। কালিয়াচকের কিছু অংশ, ইংরেজবাজার এবং পুরাতন মালদহের কয়েকটি এলাকায় যানজট অব্যাহত। তা সত্ত্বেও পুলিশ প্রশাসন বাড়তি কেন পদক্ষেপ করছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জেলাবাসী। এই বিষয়ে দক্ষিণ মালদহের সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী বলেন, ‘‘কালিয়াচকে প্রতিদিন যানজট লেগে থাকে দিনভর। সাধারণ মানুষকে ঘুর পথে যাতায়াত করতে হয়। তবুও প্রশাসন যানজট মেটাতে কোনও কাজ করছে না। একই সঙ্গে জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণেরও কাজ ধীর গতিতে চলছে বলে অভিযোগ করেছেন ডালুবাবু। এই বিষয়ে মালদহের জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের প্রোজেক্ট ডিরেক্টর সঞ্জীব কুমার শর্মা বলেন, ‘‘জাতীয় সড়ক মেরামতির কাজ মাসখানেকের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। আর রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ শেষ হতে অক্টোবর পর্যন্ত সময় লাগবে। এ ছাড়া রাস্তা ভালো হলে যান সমস্যা অনেকটা মিটবে।’’ মালদহ প্রশাসনের পক্ষ থেকেও আশ্বস্ত করা হয়েছে, রাস্তার উপরে নজরদারি রাখা হবে।
কিন্তু এখনও পর্যন্ত মালদহে যানজট চললেও হেলদোল নেই পুলিশ প্রশাসনের। যার জন্য দৈনিক যানজট যন্ত্রণায় নাকাল হতে হয় নিত্যযাত্রীদের। জেলার মধ্যে কালিয়াচকের চৌরঙ্গি মোড়, কলেজ মোড়, নওদা যদুপুর, জালালপুর, সুজাপুরে সব থেকে বেশি যানজট হয়। সেই সঙ্গে রয়েছে ইংরেজাবাজারের রথবাড়ি, সুকান্ত মোড় ও কৃষ্ণপল্লি এবং পুরাতন মালদহের মঙ্গলবাড়ি এলাকায় যানজটের চেনা ছবি দেখা যায়। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ইংরেজবাজারের রবীন্দ্র ভবন থেকে পুরাতন মালদহের নারায়ণপুর পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার এলাকার রাস্তা মেরামতির কাজ করছে। মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য রাতের দিকে কাজ চলছিল। তবে পরীক্ষা শেষ হতেই রাস্তার একাংশ আটকে রেখে কাজ চলছে। ফলে রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া বৈষ্ণবনগরের ১৬ মাইল থেকে কালিয়াচকের জালালপুর পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার রাস্তা জাতীয় সড়কের হিসেবে তুলনামূলক ভাবে সরু।
কড়া নিরাপত্তা পরীক্ষা কেন্দ্র ঘিরেও
উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য উত্তরবঙ্গে বেশ কিছু পরীক্ষা কেন্দ্রে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। তা ছাড়া স্পর্শকাতর বা সংবেদনশীল যে সমস্ত কেন্দ্রগুলি রয়েছে সেখানে ভিডিও ফুটেজ তোলা, পুলিশি কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকছে।
উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলাগুলিতে এক হাজার সাতাশিটি স্কুল থেকে ১ লক্ষ ৭৮ হাজার ৭০০ জন প্রার্থী পরীক্ষা দিচ্ছেন। ৫-৬ টি পরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। তার মধ্যে বিভিন্ন জেলায় কোথায় ১৫ টি, কোথাও তারও বেশি স্পর্শকাতর কেন্দ্র রয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের উত্তরবঙ্গ আঞ্চলিক শাখার উপসচিব উৎপল বিশ্বাস বলেন, ‘‘স্পর্শকাতর পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিতে ভিডিওগ্রাফি করা হচ্ছে। কিছু জায়গায় ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরাও থাকছে। জেলাভিত্তিক যে উপদেষ্টা কমিটি রয়েছে, প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।’’
কোচবিহার জেলায় ২৯টি সংবেদনশীল কেন্দ্র রয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রতিটি ঘরে দু’জন করে শিক্ষক দায়িত্বে থাকবেন। প্রতিটি স্কুলে একজন করে ভ্রাম্যমান পরিদর্শক থাকবেন। রায়গঞ্জে সংবেদনশীল কেন্দ্রের সংখ্যা ১৫টি। সেখানে সব কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা থাকছে। শিলিগুড়ির বাগডোগরার কয়েকটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা রাখা হচ্ছে। জলপাইগুড়ি জেলাতেও ১৫টি কেন্দ্র স্পর্শকাতর বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে সেগুলিতে ভিডিওগ্রাফি এবং কড়া পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখার কথা জানানো হয়েছে। আলিপুরদুয়ার জেলায় স্পর্শকাতর কেন্দ্র ৮টি।