ক্লাসেই জন্মদিন, মিড ডে মিলে ভোজ

কেক কেটে সোমবার জন্মদিন পালন করল ঋত্বিকা। আট বছরের জীবনে এই প্রথমবার। বাবার ছোট্ট পানের দোকান। নুন আনতে পান্তা ফুরনোর সংসারে সেই কবে ছোট্টবেলায় নমো নমো করে হয়েছিল মুখেভাতের অনুষ্ঠান। এরপর গড়িয়ে গিয়েছে আট বছর।

Advertisement

জয়ন্ত সেন

মালদহ শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৭ ১০:১৫
Share:

জন্মদিন: ছোট্ট ঋত্বিকাকে ঘিরে অন্য পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র

কেক কেটে সোমবার জন্মদিন পালন করল ঋত্বিকা। আট বছরের জীবনে এই প্রথমবার।

Advertisement

বাবার ছোট্ট পানের দোকান। নুন আনতে পান্তা ফুরনোর সংসারে সেই কবে ছোট্টবেলায় নমো নমো করে হয়েছিল মুখেভাতের অনুষ্ঠান। এরপর গড়িয়ে গিয়েছে আট বছর। জন্মদিনগুলি বাড়ির কেউই আর সে ভাবে মনে রাখেনি। তাই তা যে মনে রাখার মতো একটা দিন, সেটা হয়তো জানতেও পারেনি তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া ছোট্ট মেয়েটা।

সেই ঋত্বিকারই এ দিন জন্মদিন হল রীতিমতো ধুমধাম করে। বাহারি বেলুনে সাজানো ক্লাসঘরে মোমবাতি জ্বালিয়ে কেক কাটল সে। হাততালি দিল সহপাঠী বন্ধুরা। তার শিক্ষক শিক্ষিকারাও। এরপর দেদার কেক আর চকোলেট বিলি।

Advertisement

খরবা ২ সার্কেলের কাণ্ডারণ জুনিয়র বেসিক প্রাইমারি স্কুলের মিড ডে মিলেও এ দিন বৈচিত্র। ডাল-ফ্রাই, নানান আনাজের তরকারি আর সঙ্গে পায়েস। পড়ুয়াদের সঙ্গেই এ দিন জন্মদিনের ভোজে সামিল হয়েছিলেন শিক্ষক শিক্ষিকারা। ছোট্ট ঋত্বিকার কথায়, ‘‘আমি খুব খুশি। বন্ধুদের সঙ্গে খুব মজা করেছি।’’

ঋত্বিকার জন্য কেক এনেছিলেন স্কুলের এক শিক্ষিকা। বাকি আয়োজনও স্কুলের সাত শিক্ষক শিক্ষিকার মিলিত উদ্যোগে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সমীর মণ্ডল ও শিক্ষিকা এণাক্ষী চন্দ বললেন, ‘‘স্কুল মানে শুধু পড়ার বোঝা নয়। এখানে আনন্দও রয়েছে। কচিকাঁচাদের তা বোঝাতেই তাদের জন্মদিন পালনের সিদ্ধান্ত। এখন থেকে সব পড়ুয়ার জন্মদিন পালনের চেষ্টা হবে। ঘটা করে না হলেও, অন্তত কেক কাটা ও পড়ুয়াদের মধ্যে চকলেট বিলি তো হবেই।’’ আর খরবা ২ সার্কেলের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সৈকত ঘোষ বললেন, ‘‘কাণ্ডারণ জুনিয়র বেসিক প্রাইমারি স্কুলের পড়ুয়াদের জন্মদিন পালনের এই সিদ্ধান্তে ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি তাদের মানসিক বিকাশও হবে।’’

একেবারে আদিবাসী অধ্যুষিত চাঁচল ২ ব্লকের কাণ্ডারণ গ্রামে ছোট্ট পানের দোকান যদু লোহারের। তাঁর বড় মেয়ে সোনিয়া এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। ছোট মেয়ে ঋত্বিকা। সামান্য আয়ে কোনও মতে টেনে নিয়ে চলেছেন সংসার। দু’বেলা পরিবারের চারজনের খাবার জোটাতে হিমশিম অবস্থা তাঁর। স্বপ্নেও কখনও ভাবতে পারেননি মেয়েদের জন্মদিন করার কথা। স্কুলে মেয়ের জন্মদিন পালন হয়েছে শুনে বললেন, ‘‘আমি না পারলেও স্কুল তো তা করল। মেয়েটা সত্যিই খুব খুশি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন