পায়ের ভরসাতেই দাঁড়াতে চায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী

বিষ্ণু তখন বছর আটেকের শিশু। বাবা-মা তাকে সঙ্গে করে ভিনরাজ্যে ইটভাটায় কাজ করতে গিয়েছিলেন। সেখানে বাবা-মায়ের কাজে হাত লাগাতে গিয়ে আচমকা দুর্ঘটনার শিকার হয় সে। মেশিনে বিষ্ণুর দুই হাতই কাটা পড়ে। এরপর ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন বাবা-মা। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাসদাতা

মাথাভাঙা শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:৪১
Share:

বিষ্ণু তখন বছর আটেকের শিশু। বাবা-মা তাকে সঙ্গে করে ভিনরাজ্যে ইটভাটায় কাজ করতে গিয়েছিলেন। সেখানে বাবা-মায়ের কাজে হাত লাগাতে গিয়ে আচমকা দুর্ঘটনার শিকার হয় সে। মেশিনে বিষ্ণুর দুই হাতই কাটা পড়ে। এরপর ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন বাবা-মা।

Advertisement

পাড়ার খেলার সঙ্গীদের দেখে বিষ্ণুও স্কুলে যাওয়ার বায়না করেছিল বাড়িতে। কিন্তু সে তো লিখতেই পারে না! তাই তেমন আগ্রহ দেখায়নি পরিবার। বিষ্ণুর জেদের জেরে স্কুলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় পরিবার। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ বেঁকে বসেন। অভিযোগ, স্কুল থেকে প্রতিবন্ধী স্কুলে বিষ্ণুকে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু আশেপাশে কোনও প্রতিবন্ধী স্কুলই নেই। আর পরিবারেরও সামর্থ্য ছিল না দূরে ওই ধরনের কোনও স্কুলে পাঠানোর। শেষে পরিবারের অনুরোধে বিষ্ণু ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিয়ে তাকে ভর্তি নেয় স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এরপরই শুরু বিষ্ণুর লড়াই।

শীতলখুচির ছোট শালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের বড়গদাই খরাগ্রামের বাসিন্দা বিষ্ণু স্কুলে ধীরে ধীরে সকলের নজর কাড়ে। হাত নেই তো কী! পা দিয়েই লেখার কাজ শিখে নেয় সে। এভাবেই সে প্রাথমিক স্কুল থেকে পেরিয়ে বড়গদাই খরা ভিএম হাইস্কুলে ভর্তি হয়। এবার সে মাধ্যমিক দেবে। পরীক্ষার প্রস্তুতিতে নিজেকে রাতদিন ব্যস্ত রেখেছে সে। বিষ্ণু বলে, ‘‘দারিদ্রের কারণেই বাবা-মায়ের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে হাত খুইয়েছি। এখন লেখাপড়া করে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে চাই।’’ বাবা-মায়ের দিনমজুরি আয়েই চলে বিষ্ণুর পড়ার খরচ।

Advertisement

পা দিয়ে লিখতে অসুবিধে হয় কি না প্রশ্ন করতেই বিষ্ণু বলে, ‘‘প্রথম প্রথম পায়ের আঙুল দিয়ে পেন্সিল ধরতেই পারতাম না। তারপর যখন লিখতে শিখলাম, তখন পা দিয়ে লিখলে দীর্ঘক্ষণ মাথা নিচু করে থাকতে খুব কষ্ট হত।’’ তাঁর কথায়, ‘‘তবে সব পরীক্ষায় পায়ে লিখলেও মাধ্যমিকের জন্য রাইটার নেব।’’ বিষ্ণুর বাবা সন্তোষ বর্মণ বলেন, ‘‘ছেলে দুই হাত হারালেও লেখাপড়ার প্রতি বিন্দুমাত্র আগ্রহ হারায়নি। আমরা স্বামী-স্ত্রী চেষ্টা করে যাচ্ছি, যাতে ছেলেটার পড়ার খরচ জোগাড় করতে পারি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘লেখাপড়া করে বিষ্ণুর স্বপ্ন সরকারি চাকরি করার। আমরাও চাই ছেলে সমাজে মাথা উচু করে বাঁচুক।’’ বিষ্ণুর লেখাপড়ায় আগ্রহ যথেষ্ট বলে জানালেন তার স্কুলের শিক্ষকেরাও। বিষ্ণুর কথা জেনে খুশি শীতলখুচির বিডিও ডব্লিউ এল ভুটিয়া। তিনি বলেন, ‘‘অদম্য মানসিকতার জন্যই বিষ্ণু এ বছর মাধ্যমিক দেেব। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার সব ধরনের সাহায্য করব, যাতে তার পরীক্ষা দিতে কোনও অসুবিধে না হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন