কোচবিহারের হোমে কিশোরীর দেহ

সরকারি হোমের স্নানাগার থেকে সেখানকার আবাসিক এক কিশোরীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। রবিবার সকালে কোচবিহার শহর লাগোয়া বাবুরহাটের শহিদ বন্দনা স্মৃতি মহিলা আবাসে ওই ঘটনাটি ঘটেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৬ ০২:২৫
Share:

সরকারি হোমের স্নানাগার থেকে সেখানকার আবাসিক এক কিশোরীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। রবিবার সকালে কোচবিহার শহর লাগোয়া বাবুরহাটের শহিদ বন্দনা স্মৃতি মহিলা আবাসে ওই ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তার নাম সোনিয়া নায়েক (১৩)।

Advertisement

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সে ওই হোমে থাকত। এদিন সকাল নয়টা নাগাদ স্নানাগারে যেতেও দেখা যায় তাকে। কিছুক্ষণ বাদে ওই হোমেরই অন্য এক আবাসিক দরজা খোলা ওই স্নানাগারে সোনিয়াকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেন। তারপরেই ঘটনা জানাজানি হয়। খবর যায় পুলিশ, প্রশাসনের কর্তাদের কাছে। জেলাশাসকের নির্দেশে তদন্তে নামেন জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের অনুমান, ওই কিশোরী আত্মহত্যা করেছে। ওই ঘটনায় কর্তব্যে গাফিলতি ও হোমে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগে কোচবিহার কোতয়ালি থানায় হোমের সুপারের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়। কোচবিহারের জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক ওই এজাহার দায়ের করেন। পাশাপাশি এদিন সুপারকে ওই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। যদিও প্রশাসনের বক্তব্য, মানসিক অবসাদের জেরে সোনিয়া আত্মহত্যা করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, “ওই কিশোরী মানসিক অবসাদগ্রস্ত ছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে। কর্তব্যে গাফিলতি ও হোমে অনুপস্থিত থাকায় সুপারের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে এজাহার করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।” কোচবিহারের পুলিশ সুপার সুনীল যাদব বলেন, “অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়েছে। দেহের ময়না তদন্ত হবে। তদন্ত হচ্ছে।”

Advertisement

হোম সূত্রের খবর, ওই কিশোরীকে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দার্জিলিং চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি এনজেপি থেকে উদ্ধার করে। তারপর থেকে সে কোচবিহারের ওই হোমেই ছিল। শান্ত স্বভাবের কিশোরীর বাড়ি ডুয়ার্সের নাগরাকাটায় বলেও তথ্য রয়েছে। যদিও ওই কিশোরীর পরিবারের কারও সন্ধান মেলেনি। মাঝেমধ্যেই পরিবারের লোকদের, বিশেষ করে বাবা-মা’র জন্য অন্য আবাসিকদের কাছে আক্ষেপ করত। শনিবার রাতেও এসব নিয়েই সে কান্নাকাটি করে। রাতের খাবারও খায়নি। হোমের সুপার সুপর্ণা বর্মন অবশ্য মন্তব্য করতে চাননি। কোচবিহার চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন স্নেহাশিস চৌধুরী বলেন, “ওই হোমে মানসিক অবস্থা সংক্রান্ত আলোচনার কাউন্সিলর পদ দীর্ঘদিন ধরে ফাঁকা রয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্যরক্ষার বিষয় গুরুত্ব দিয়ে ভাবা দরকার।”

যদিও প্রশাসনের ওই বক্তব্য মানতে রাজি নন এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ। কিশোরীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছেন মানব অধিকার রক্ষা সংগঠনের কর্তারাও। হোমের পরিবেশ নিয়েও বিস্তর প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ, হোমের মাঝেমধ্যেই আবাসিকদের মানসিক নির্যাতন থেকে কার্যত বন্দিদশায় কাটাতে হয়। এমনকি এবছর জানুয়ারি মাসে ওই হোমের আবাসিক এক কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে , অন্য একজনকে যৌন হেনস্থার অভিযোগও উঠেছিল। ঘটনার জেরে হোমের সাফাই কর্মী কাছুয়া মিঁয়াকে পুলিশ গ্রেফতার করে। সুপার ও জেলা সমাজ কল্যাণ আধিকারিকও শোকজের মুখে পড়েন। তারপরেও হোমের অবস্থা খুব একটা বদলায়নি। অভিযোগ, মাঝে মধ্যে সুপার অন্যদের দায়িত্ব দিয়ে বাড়ি চলে যেতেন। শনিবার রাতেও তিনি হোমে ছিলেন না। এর আগেও ওই হোম থেকে এক কিশোরী পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এবার নতুন সংযোজন আবাসিক ওই কিশোরীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনা। মানব অধিকার রক্ষা বিষয়ক একটি সংগঠনের কর্তা জয়ন্ত চৌধুরী বলেন, “ওই হোমে আবাসিকদের দরজায় তালা বন্ধ করে রাখা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। আমাদের মনে হচ্ছে বাচ্চাটির ওপরে মানসিক অত্যাচারের জেরে ঘটনাটি হয়েছে। কিছুদিন আগে হোমের এক কিশোরীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন