প্ল্যাটফর্মেই অস্থায়ী সংসার

খাবার, পানীয় জলের জন্য এক ত্রাণ শিবির থেকে অপর শিবিরে ছোটাছুটি করছেন তাঁরা। ত্রাণের দেওয়া শুকনো খাওয়ার, ভাত-ডাল নেওয়ার জন্য লম্বা লাইন পড়ে গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৭ ০৯:৩০
Share:

ত্রাণ: মালদহ স্টেশনে বন্যা দুর্গতদের লাইন। নিজস্ব চিত্র।

পকেটে টাকা নেই। তাই হোটেল ছেড়ে সপরিবার ফের স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে আশ্রয় নিয়েছেন অসমের বাসিন্দা আব্দুল লতিফ। তাঁর মতোই অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন গুয়াহাটির বাসিন্দা হান্নান আলিও।

Advertisement

শুধু আব্দুল লতিফ, হান্নান আলিই নয়, মালদহ টাউন স্টেশনের প্ল্যাটফর্মেই এখন সংসার পেতেছেন শ’য়ে শ’য়ে রেলযাত্রী। চারদিন ধরে স্টেশনেই আটকে থাকার ফলে চরম দুর্ভোগে তাঁরা। একই সঙ্গে আশায় রয়েছেন রেল ও সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হওয়ার। তাঁদের ক্ষোভ, মালদহ টাউন স্টেশনে আটকে থাকা যাত্রীদের ঘরে ফেরাতে ব্যর্থ প্রশাসন। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের এক কর্তা বলেন, মালদহ-রায়গঞ্জ বাস চালানো হচ্ছিল। তবে বুধবার সকালে রায়গঞ্জের কালুয়ামাটি এলাকায় রাস্তায় জল বইতে শুরু করেছে জল। ফলে সেই রুটেও বাস চালানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন নিগমের কর্তারা।

রবিবার রাত থেকেই মালদহ টাউন স্টেশনের প্ল্যাটফর্মগুলিই কার্যত ত্রাণ শিবির। প্ল্যাটফর্মেই চলছে সংসার। স্টেশন কর্তৃপক্ষের দাবি, পাঁচ শতাধিক মানুষ প্ল্যাটফর্মেই দিন কাটাচ্ছেন। কলকাতা থেকে একাধিক ট্রেন মালদহ পর্যন্ত আসছে। তবে মালদহ থেকে এনজেপি বা অসমের দিকে কোনও আপ ট্রেন না যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। জেলা প্রশাসনের তরফে সড়ক পথে বাসে করে ঘুরপথে রায়গঞ্জ দিয়ে ডালখোলা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এ দিন সেই পথও বন্যায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় হতাশ যাত্রীরা। খাবার, পানীয় জলের জন্য এক ত্রাণ শিবির থেকে অপর শিবিরে ছোটাছুটি করছেন তাঁরা। ত্রাণের দেওয়া শুকনো খাওয়ার, ভাত-ডাল নেওয়ার জন্য লম্বা লাইন পড়ে গিয়েছে।

Advertisement

এ দিন মহদিপুর এক্সপোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের তরফে যাত্রীদের বিস্কুট, কেক, পানীয় জল দেওয়া হয়। একই সঙ্গে রেলের শ্রমিক ইউনিয়নের তরফে ভাত-ডাল, তরকারি বিলি করা হয় রেলযাত্রীদের মধ্যে। আব্দুল লতিফ বললেন, ‘‘মুম্বই থেকে কাজ করে স্ত্রী এবং এক মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম বিবেক এক্সপ্রেসে। তবে রবিবার সকাল থেকেই মালদহ টাউন স্টেশনে আটকে যায়। হোটেলে ৬০০ টাকা ভাড়া দিয়েছিলাম। এখন পকেটে আর টাকা নেই। তাই বাধ্য হয়েই মেয়ে-স্ত্রীকে নিয়ে স্টেশনেই আশ্রয় নিয়েছি।’’ সমস্যার কথা বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন গুয়াহাটির হান্নান আলি। তাঁর কথায়, ‘‘তামিলনাড়ু থেকে স্ত্রীর চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। ত্রাণের খাওয়ারই এখন আমাদের ভরসা।’’

স্টেশন সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্ভোগে পড়া যাত্রীদের বিনামূল্যে রেলের শৌচাগার ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি দুর্ভোগে আটকে থেকে মারা যান এক রেলযাত্রী। তারপর থেকেই স্টেশনে দুটি মেডিক্যাল ক্যাম্পও খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মালদহের ডিভিশনের ম্যানেজার মোহিত কুমার সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের তরফে রেলযাত্রীদের সব রকম সহযোগিতা করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন