জঞ্জাল সাফাইয়ের কম্প্যাক্টর মেশিন দেখছেন মেয়র। — নিজস্ব চিত্র
এক রাতের বৃষ্টিতেই শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি দুই শহরের বিস্তীর্ণ এলাকার নিকাশির বেহাল ছবিটা সামনে চলে এল।
সোমবার রাতের বৃষ্টির পরে শিলিগুড়ির পূর্ব বিবেকানন্দ পল্লি, মঙ্গল পাণ্ডে সরণি বা ঘোঘোমালি রোড এলাকায় জলের সঙ্গে জমে থাকা জঞ্জাল মিলে পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে পড়েছে। কোথাও ১৫ দিন ধরে আবর্জনা ওঠানো হচ্ছে না। কোথাও এক মাসেরও বেশি জঞ্জাল জমে পচছে। তাই মঙ্গলবার সাফাই পরিষেরা জন্য নতুন তিনটি কম্প্যাক্টর উদ্বোধনের পরেও বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়েছেন মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। বিরোধীদের অভিযোগ, কম্প্যাক্টর গাড়ি রাজ্যের তরফে দেওয়া হচ্ছে, নানা সহযোগিতাও করা হচ্ছে কিন্তু পুর কর্তৃপক্ষ পরিষেবা দিতে পারছে না। বিভিন্ন ওয়ার্ডে আবর্জনা দিনের পর দিন জমে থাকছে। অথচ সেগুলি তুলে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে নেওয়ার মতো জেসিপি এবং গাড়ি মিলছে না। তাতে ওয়ার্ডের আবর্জনা এলাকাতেই পড়ে থেকে দূষণ ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ।
মেয়র অশোকবাবু বলেন, ‘‘আবর্জনার পরিমাণ দিনকে দিন বাড়ছে। আমরা তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সাফাই পরিষেবার পরিকাঠামো বাড়াতে চেষ্টা করছি। মেয়র পারিষদ বিষয়টি দেখছেন।’’ সাফাই বিভাগের মেয়র পারিষদ মুকুল সেনগুপ্ত বোঝাতে চেষ্টা করেছেন, রাজনীতি করতেই সাফাই পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ তোলা হচ্ছে বিরোধীদের পক্ষ থেকে। তিনি বলেন, ‘‘কোথাও আবর্জনা তোলার জেসিপি যন্ত্র বা ট্রাক খারাপ হয়ে যেতে পারে। তা ঠিক করতে হয়তো সময় লাগছে। গাড়ির সমস্যা হলে নিশ্চয়ই তা মেটাতে হবে। বরোগুলিতে তিনটি করে জেসিপি দেওয়া হযেছে। কোথায়ও সমস্যা হয়ে দেখা হচ্ছে।’’ বিরোধী দলনেতা নান্টু পাল মেয়রের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। নান্টুবাবু বলেন, ‘‘বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে সাফাই পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’’ তাঁর অভিযোগ, মেয়রের উদাসীনতার জন্যই পরিষেবা বেহাল হয়ে পড়ছে।
পাশের শহর জলপাইগুড়ি পুরসভা তৃণমূলের দখলে। সেখানেও প্রায় একই অভিযোগ। দিন কয়েক আগেই পুরসভায় নিজের ঘরে বসে চেয়ারম্যান মোহন বসু আশা প্রকাশ করেছিলেন, এ বারের বর্ষায় জলপাইগুড়ি শহরের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ হয়তো কিছুটা কমবে৷ কিন্তু এক রাতের বৃষ্টিই পুরসভার চেয়ারম্যানের সেই আশায় জল ঢেলে দিল৷ গতকাল রাতের বৃষ্টিতে জলমগ্ন হল জলপাইগুড়ি শহরের বিভিন্ন এলাকা৷ আর তার জেরে চরম দুর্ভোগে পড়লেন সাধারণ মানুষ৷
গতকাল মাঝ রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হয় জলপাইগুড়িতে৷ চলে আজ বেলা পর্যন্ত৷ সেচ দফতরের হিসাব অনুযায়ী মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত জলপাইগুড়িতে বৃষ্টি হয়েছে ১২৪.৮ মিলিমিটার৷ এক রাতের এই বৃষ্টিতে জল জমে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে৷ জলমগ্ন হয়ে পড়ে পান্ডাপাড়া, কংগ্রেস পাড়া, নতুন পাড়া, অরবিন্দ নগর, স্টেশন রোডের বিভিন্ন এলাকা৷ এই সব এলাকায় বিভিন্ন রাস্তায় জল জমার পাশাপাশি কিছু কিছু জায়গায় বাড়ির ভেতরেও জল ঢুকে পড়েছে৷ যার জেরে হয়রান হতে হয়েছে বাসিন্দাদের৷ অনেক জায়গাতেই হাঁটুজল ভেঙে মানুষকে যাতায়াত করতে হয়েছে৷
বেলার দিকে বৃষ্টি থামার পর শহরের বিভিন্ন এলাকায় জল নামতে শুরু করলেও, কংগ্রেস পাড়া, চূনীলাল রোড সহ বেশ কিছু জায়গার দিনভর জল জমে ছিল৷ বর্ষা শুরুর মুখেই এক রাতের বৃষ্টিতে শহরের এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগ বাড়ছে শহরবাসীর মধ্যে৷ এই পরিস্থিতি নিয়ে পুরসভার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছে বিরোধীরা৷ যদিও পুরসভার কর্তাদের দাবি, জোর বৃষ্টি হওয়াতেই জল জমার ঘটনা ঘটেছে৷ বৃষ্টি থামতেই শহরের প্রায় সব জায়গা থেকেই জল নেমেও গেছে৷