টাকা আসছে না, দুশ্চিন্তাই সঙ্গী সংসারে

ঘরে মজুত রাখা চাল ফুরিয়ে আসছে ক্রমশ। এদিকে, স্বামী এবং ছেলে দুজনেই ভিনরাজ্যে নোটের গেরোয় কর্মহীন। ফলে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বাড়িতে টাকা পাঠানো।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৫১
Share:

ঘরে মজুত রাখা চাল ফুরিয়ে আসছে ক্রমশ। এদিকে, স্বামী এবং ছেলে দুজনেই ভিনরাজ্যে নোটের গেরোয় কর্মহীন। ফলে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বাড়িতে টাকা পাঠানো।

Advertisement

টাকার অভাবে কোনদিন গাছের পেঁপের ঝোল, আবার কোনদিন আলু সেদ্ধ ভাত খেয়ে অন্য ছেলেমেয়েদের নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন পুরাতন মালদহের সাহাপুর গ্রামপঞ্চায়েতের চরকাদিরপুর গ্রামের রাধারানি মণ্ডল। বলেন, ‘‘তিন সপ্তাহ ধরে কাজ না থাকায় দিল্লিতে বসে রয়েছে বাপ-ছেলে। কারণ কাজ করিয়ে ঠিকাদাররা হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন পুরোনো পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট। কাজ না থাকায় বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারছেন না তাঁরা। মাত্র ১৫ কিলো চাল রয়েছে। ফুরিয়ে গেলে কী হবে জানি না।’’

রাধারানি দেবীর মতো অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চঞ্চলা মণ্ডলও। সংসার চালাতে তাঁর ১৬ বছরের ছেলে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে কেরলে গিয়েছে। কিন্তু নোটের গেরোয় কাজ পাচ্ছে না সেখানে। যার প্রভাব পড়েছে চঞ্চলা দেবীর সংসারেও। চঞ্চলাদেবী বলেন, ‘‘আমার স্বামী অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন ধরে বাড়িতে পড়ে রয়েছেন। তাঁর চিকিৎসার খরচ জোগানোর জন্য বাধ্য হয়ে ছোট ছেলেকে কাজ করতে বাইরে পাঠিয়েছি। কাজ না থাকায় ছেলে টাকা পাঠাতে পারছে না। কী হবে কিছুই বুঝতে পারছি না।’’

Advertisement

মালদহ জেলার ৪০ শতাংশ মানুষ কাজের খোঁজে ভিন রাজ্যে পাড়ি দেন। কালিয়াচকের তিনটি ব্লক, পুরাতন মালদহের সাহাপুর, জলঙ্গা, যাত্রাডাঙা এবং হবিবপুর, বামনগোলা ও ইংরেজবাজারের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালান। অনেকে আবার সপরিবারে পাড়ি দেন দিল্লি, মুম্বই, কেরল, উত্তরপ্রদেশে। পুরাতন মালদহের রায়পুরের এক শ্রমিক সরবরাহকারী এজাজুল শেখ বলেন, ‘‘পাঁচ শতাধিক শ্রমিককে আমি বিভিন্ন সময় দিল্লির গুরগাঁওতে পাঠিয়েছি। প্রায় প্রত্যেকেই বাড়ি ফিরে আসছেন। কারণ ওখানে এখন ঠিক মতো কাজ হচ্ছে না। ঠিকাদাররা তাঁদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন পুরোনো পাঁচশো ও হাজারের নোট।’’

কাজ চলে যাওয়ায় অনেকেই তাই ঘরে ফিরে এসেছেন। ঘরে ফেরা ফুলচাঁদ মণ্ডল, বিপিন মণ্ডলরা বলেন, ‘‘দিন চারেক আগে আমরা বাড়ি ফিরেছি। কারণ ওখানে কাজ মিলছে না। সংসারেও টাকা পাঠাতে পারছি না। তাই বাড়ি ফিরে দিন মজুরির কাজ করে টেনেটুনে সংসার চালানোর চেষ্টা করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন