কান্নায় ভেঙে পড়ে ফাঁসি চাইল পরিবার

যাদের জন্য মেয়েকে আত্মঘাতী হতে হয়েছে, তাদের ফাঁসির দাবিতে মন্ত্রীর কাছে কান্নায় ভেঙে পড়লেন শিক্ষিকা রীতা সরকারের দিদি, মাসিরা ও পরিবারের লোকেরা। বুধবার দুপুরে পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব শক্তিগড়ে রীতাদেবীর বাড়িতে যান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:১৮
Share:

যাদের জন্য মেয়েকে আত্মঘাতী হতে হয়েছে, তাদের ফাঁসির দাবিতে মন্ত্রীর কাছে কান্নায় ভেঙে পড়লেন শিক্ষিকা রীতা সরকারের দিদি, মাসিরা ও পরিবারের লোকেরা। বুধবার দুপুরে পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব শক্তিগড়ে রীতাদেবীর বাড়িতে যান। মন্ত্রীর চোখের সামনেই এলাকার পরিবেশ বিষিয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ তোলেন পোড়াঝাড় এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ। পর্যটনমন্ত্রী বলেন, ‘‘মর্মান্তিক ঘটনা। ওঁর পরিবারকে সমবেদনা জানাই। পুলিশকে বলেছি নিরপেক্ষ তদন্ত করে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে।’’

Advertisement

একমাত্র মেয়ের শোকে কেঁদে কেঁদে অসুস্থ মা রেখাদেবী বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেননি। শিক্ষিকার মাসি শিখাদেবী, দিদি রিনাদেবীরা কান্নায় ভেঙে পড়ে এ দিন বলেন, ‘‘শয়তানদের যেন শাস্তি হয়। ওদের যেন ফাঁসি হয়। যেন বুঝতে পারে আত্মহত্যা করতে গিয়ে কতটা কষ্ট রীতাকে পেতে হয়েছে।’’ মৃতার মামা সুনীল রায় পরে মন্ত্রীকে বলেন, ‘‘অত্যাচারের শিকার হয়ে কারও যেন এমন সর্বনাশ না হয় সেটা আপনারা দেখুন।’’ ঘরে দাঁড়িয়ে তাঁদের সমস্ত অভিযোগ শোনেন মন্ত্রী। পরে আবার তিনি আসবেন বলে আশ্বাস দেন।

ঘটনায় ধৃত দু’জনকে বুধবার জলপাইগুড়ি আদালত পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। তার মধ্যে এক জন তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী বলেও পরিচিত। এলাকার একটি সূত্রেই জানা গিয়েছে, বছর খানেক ধরে ওই যুবকের আচরণ নিয়ে বাসিন্দাদের অনেকে স্থানীয় নেতৃত্বর কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কিন্তু অভিযোগ, তাঁদের কথায় কর্ণপাত করেননি দলের লোকেরা। এক বাসিন্দা নবরঞ্জন সরকারের মেয়ে শক্তিগড় স্কুলেরই ছাত্রী। উদ্বিগ্ন ওই অভিভাবক অভিযোগ করেন, এই অবস্থায় মেয়েদের স্কুলে পাঠানো নিয়ে তাঁরা খুবই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। পর্যটনমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘দলের লোক বলে ছাড়় দেওয়া হবে না। যে-ই এ ধরনের ঘটনায় জড়িত হোক না কেন পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।’’

Advertisement

গত শনিবার সন্ধেয় শোওয়ার ঘর থেকে ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় রীতাদেবীর। ওই সন্ধেতেই এলাকার বাসিন্দা, তৃণমূল কর্মী মিঠুন দাস এবং সুবীর সাহাকে মৃতার সুইসাইড নোটের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়। পরের দিন, আদালতে ধৃতদের হাজির করানো হলে, বিচারক তাদের ১৪ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দেন। তার পর থেকে তাঁরা জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারেই ছিলেন। এ দিন সন্ধ্যার পর তাদের এনজেপি থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। শিলিগুড়ির ডিসি (পূর্ব) গৌরব লাল বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে। ঘটনায় আরও কেউ জড়িত থাকলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

মৃতার দাদা, বিক্রম সরকারের অভিযোগ, ঘটনার পর তাঁদের মা জানান, মহালয়ার রাতে শক্তিগড় মাঠের পাশে কিছু যুবক পিকনিক করছিল। অনেক রাত অবধি তারা চিৎকার চেঁচামেচি করে। তাঁদের বাড়ির সামনে এসে গালিগালাজ, হুমকিও দিয়েছিল। ধৃতরাও ওই দলে ছিল বলে রীতাদেবীই মাকে জানান। তিনি বলেন, ‘‘মৃত্যুর জন্য দায়ী না হলেও কিছু সহকর্মী বোনকে ঈর্ষা করত বলেও সে লিখে গিয়েছে। তাঁরা অনেক সময় বাজে কথাও নাকি বোনকে বলেছে। ধৃতদের সঙ্গে তাঁদেরও যোগাযোগ রয়েছে কি না, পুলিশের দেখা দরকার। জড়িতদের সবার কড়া শাস্তি চাই, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন কাজ করার আগে
দু’বার ভাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন