কেন এত হিংসা, মন খারাপ আলতাপের

দিন দুয়েক আগেই আলতাপ মিয়াঁ সংবাদপত্রে জানতে পারেন বসিরহাট, বাদুরিয়ার হানাহানি। তার পর নানা জায়গা থেকে নানা খবর কানে আসছে। এ সব শুনে আর মন ঠিক রাখতে পারছেন না তিনি। কখনও কখনও তোর্সা নদীর পাড়ে গিয়ে বসে থাকছেন একা।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৭ ০২:১৮
Share:

ক্ষুব্ধ: রাসচক্র তৈরি করেন আলতাপ মিঞা। নিজস্ব চিত্র

তাঁর মন খারাপ। গত কয়েকদিন ধরেই চুপচাপ হয়ে গিয়েছেন। মন দিতে পারছেন না কাজে। মাঝে মাঝে স্বগতোক্তি করছেন, “কেন এত হানাহানি। কিসের এত লড়াই। যুগ যুগ ধরে তো আমরা একসঙ্গে আছি। কই, কাউকে তো পর মনে হয়নি।”

Advertisement

দিন দুয়েক আগেই আলতাপ মিয়াঁ সংবাদপত্রে জানতে পারেন বসিরহাট, বাদুরিয়ার হানাহানি। তার পর নানা জায়গা থেকে নানা খবর কানে আসছে। এ সব শুনে আর মন ঠিক রাখতে পারছেন না তিনি। কখনও কখনও তোর্সা নদীর পাড়ে গিয়ে বসে থাকছেন একা। তাঁর কথায়, “আসলে বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে কোনও দ্বন্দ্ব নেই। যুগ যুগ ধরে মিলেমিশে থাকলেও কারও কোনও অসুবিধে হয় না। যেমন আমাদের হয় না। দুই-একজন খারাপ মানুষ সব নষ্ট করে দিচ্ছেন।”

তিন পুরুষ ধরে কোচবিহারে রাসচক্র তৈরি করেন হরিণচওড়ার আলতাপ মিয়াঁ। কুড়িটি বাঁশ দিয়ে তৈরি হয় ২২ ফুট লম্বা ওই চক্র। চক্রের মধ্যে রাধা-কৃষ্ণ, লক্ষ্মী-সরস্বতী, শিব-পার্বতী সহ ৩২ দেবদেবীর ছবি। রাসপূর্ণিমায় ওই চক্র বসানো হয় মদনমোহন মন্দিরে। মন্দিরে গিয়ে কেউ রাসচক্র না ঘুরিয়ে ফেরেন না। শুধু কোচবিহার নয়, গোটা বাংলায় সম্প্রীতির নজির আলতাপের পরিবার। কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের কর্মী জয়ন্তী চক্রবর্তী বলেন, “রাজ আমল থেকে ওই চক্র তৈরি করছেন আলতাপ মিয়াঁর পরিবার। সেই ধারা বজায় রেখেছেন আলতাপও। তাই এই হানাহানি তো তাঁকে কষ্ট দেবেই।’’

Advertisement

হরিণচওড়ার বাঁধের পাশে ছোট্ট ঘর আলতাপদের। স্ত্রী, পুত্র ও পুত্রবধূ ও নাতিকে নিয়ে তাঁর সংসার। বয়স পঞ্চাশ পেরিয়েছে। কাজে কিন্তু বয়সের প্রভাব পড়েনি। বর্তমানে দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের একজন কর্মী হিসেবে কাজ করেন তিনি। মদনমোহন মন্দির সংলগ্ন ধর্মশালার সামনে দাঁড়িয়ে আলতাপ জানান, তাঁর ঠাকুরদা পান মাহমুদ বাঁশের কাজে পারদর্শী ছিলেন। মহারাজা তাঁকে রাসচক্র তৈরির কাজে নিয়োগ করেন। তার পর তাঁর বাবা আজিজ মিয়াঁ ওই দায়িত্ব নেন। এখন সেই দায়িত্ব আলতাপের কাঁধে।

রাসচক্র তৈরির কাজ শিখে ফেলেছেন আলতাপের ছেলে আমিনুরও। আলতাপ বলেন, “কোচবিহারের মহারাজারা যেমন মন্দির তৈরি করেছেন। তৈরি করেছেন মসজিদও। আমরা যে তাঁদেরই স্নেহে বড় হয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন