প্রশ্ন শুনে হুমকি, এত জেনে কী হবে!

চৌরঙ্গি মোড় থেকে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার কংক্রিটের রাস্তা কিলোমিটারখানেক এগিয়ে বাঁধের গায়ে শেষ হয়।  সেখানে বাঁধ ভেঙে মাটি ঝুরঝুর করে গড়াচ্ছে। চারদিক ধুলো। বাঁধে উঠে দেখা গেল, তিস্তার খাত থেকে বালি বোঝাই করে এগিয়ে আসছে দু’টি বড় ট্রাক বা ডাম্পার।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:৪১
Share:

চাকার দাগ: নদীখাতে যাচ্ছে ট্রাক। নিজস্ব চিত্র

শুকনো খটখটে তিস্তার বুক জুড়ে অসংখ্য চাকার দাগ। বড় ট্রাকের চাকা, ট্রাক্টরের চওড়া চাকা, ভ্যান রিকশার সরু চাকা— দাগ হরেকরকমের। কোনও কোনওটি বসে গিয়েছে গভীর ভাবে। সকাল, বিকেল, গভীর রাত, ভোর— সব সময়েই এই সব গাড়ি বাঁধ দিয়ে নেমে নদী খাতে চলে যাচ্ছে। বালি বোঝাই করে ফিরে যাচ্ছে বিনা বাধায়। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া পাহাড়পুরে চৌরঙ্গির তিস্তা বাঁধে দাঁড়িয়ে জনা কয়েক যুবক। অপরিচিত কাউকে বাঁধে দেখলে তাঁরাই প্রথমে পরিচয় জানতে এগিয়ে আসছেন।

Advertisement

চৌরঙ্গি মোড় থেকে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার কংক্রিটের রাস্তা কিলোমিটারখানেক এগিয়ে বাঁধের গায়ে শেষ হয়। সেখানে বাঁধ ভেঙে মাটি ঝুরঝুর করে গড়াচ্ছে। চারদিক ধুলো। বাঁধে উঠে দেখা গেল, তিস্তার খাত থেকে বালি বোঝাই করে এগিয়ে আসছে দু’টি বড় ট্রাক বা ডাম্পার। কিছুক্ষণ পরেই একটি ট্রাক্টর বাঁধে উঠে এল। চালকের পাশে বসে এক জন। দুজনের মুখই গামছায় ঢাকা।

কোথায় যাচ্ছে বালি?

Advertisement

ট্রাক্টরচালক কিছুই বললেন না। বাঁধে দাঁড়ানো এক ব্যক্তি জবাব দিলেন, “এত জেনে আপনার কী হবে?” ততক্ষণে এগিয়ে এসেছেন আরও কয়েক জন। এক যুবকের লাল ফুলহাতা টি শার্টের উপরে বার হয়ে রয়েছে সোনার চেন। তিনি এগিয়ে এসে নামধাম জানতে চাইলেন। কোন দফতর, তা-ও জানতে চাইলেন। ততক্ষণে আরও জনা দশেক স্থানীয় যুবক জড়ো হয়ে গিয়েছেন। লাল টি-শার্ট পরা যুবক হুমকির সুরেই বললেন, “এ সব এখানকার সকলের রুটিরুজির প্রশ্ন। এখান থেকে যান।”

ঠিক এই জায়গা থেকেই সপ্তাহদুয়েক আগে ভূমি দফতরের দলকে হেনস্থা হয়ে ফিরতে হয়েছিল। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া পাহাড়পুরের চৌরঙ্গি থেকে বিবেকানন্দপল্লি, রংধামালি— সর্বত্রই অবৈধ বালি খাদান রমরমিয়ে চলছে বলে অভিযোগ। ভূমি দফতরের রিপোর্টেই সেই অভিযোগ উঠে এসেছে।

বালি চক্রের শিকড় এতটাই গভীরে যে, দিন কুড়ি আগে অভিযানে যাওয়া ভূমি দফতরের দলকে ঘিরে ধরে গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। প্রাণ বাঁচিয়ে ফিরে আসেন কর্মীরা। ভূমি দফতর সূত্রে জানা গেল, জলপাইগুড়ি সদর ব্লকে কোথাও কোনও নদীতে বালি খাদানের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

যদিও বাস্তবে অন্য চিত্র দেখা গেল পাহাড়পুরে। এক একটি ডাম্পারের বালি ন্যূনতম পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়। বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, প্রতিদিন অন্তত পঞ্চাশবার ডাম্পার বাঁধ দিয়ে নেমে চলে যাচ্ছে তিস্তার খাতে। অসংখ্যবার নামছে ট্রাক্টর। শুধু পাহাড়পুর থেকেই প্রতিদিন কয়েক লক্ষ টাকার বালি লুঠ হচ্ছে বলে অভিযোগ।

জেলাশাসক অবশ্য বলেন, ‘‘বালি তোলা আটকাতে নিয়মিত অভিযান হচ্ছে। এই অভিযান চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন