ভেঙে পড়ছে হাজার বছরের প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার

মালদহ শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হবিবপুর ব্লকের কেন্দপুকুর স্ট্যান্ড। সেই স্ট্যান্ড থেকে গ্রামের লালমাটি রাস্তা ধরে প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ পেড়িয়ে যেতে হয় জগজ্জীবনপুর গ্রামে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৩১
Share:

ভগ্নাবশেষ: আগাছায় ঘিরেছে ঐতিহ্য। নিজস্ব চিত্র

আগাছায় ঢেকেছে সংগ্রহশালা। ঝাপসা হয়ে গিয়েছে সংগ্রহশালার কাচও। বাইরে থেকে কিছুই স্পষ্ট দেখা যায় না। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভেঙে পড়ছে পালযুগের প্রাচীন বৌদ্ধবিহারের ধ্বংসাবশেষ।

Advertisement

ফলে উৎসবের মরসুমেও খাঁ খাঁ করছে মালদহের হবিবপুরের জগজ্জীবনপুরের বৌদ্ধবিহার। অথচ এই বৌদ্ধবিহারটিকে ঢেলে সাজিয়ে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে কোটি কোটি টাকা। এমনকী, দফতরে সেই টাকা পড়ে থাকলেও ‘শ্রী’ ফেরেনি জগজ্জীবনপুরের সেই বৌদ্ধবিহারের। প্রশাসনের উদাসীনতার জেরে ক্ষোভে ফুঁসছেন জেলার পর্যটন মহল।

মালদহ শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হবিবপুর ব্লকের কেন্দপুকুর স্ট্যান্ড। সেই স্ট্যান্ড থেকে গ্রামের লালমাটি রাস্তা ধরে প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ পেড়িয়ে যেতে হয় জগজ্জীবনপুর গ্রামে। ওই গ্রামেই রয়েছে প্রাচীন নিদর্শন। জানা গিয়েছে, ওই গ্রামের বাসিন্দা পেশায় দিনমজুর জগদীশ গাইন। ১৯৯০ সালে তিনি নিজের বাড়ি তৈরি করার জন্য মাটি খননের কাজ করছিলেন। মাটি খননের সময় তিনি একটি তাম্রপত্র পান। সেই তাম্রপত্রটি তুলে দেন ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তাম্রপত্রটিতে পালি ভাষায় ৭০ লাইন লেখা ছিল। সেখান থেকেই জানা যায় পাল যুগে মহেন্দ্র দেব পাল নামে এক রাজা ছিলেন। যার নাম ইতিহাসেও উল্লেখ ছিল না। সেই মহেন্দ্র দেব পাল বৌদ্ধদের উপাসনার জন্য ওই জমিটি দান করেছিলেন দিয়েছিলেন। যা ওই তাম্রপত্রে উল্লেখ রয়েছে। তারপর থেকেই প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের উদ্যোগে শুরু হয় খনন কাজ। ২০০৫ সাল পর্যন্ত মাটি খননের পর একটি বাড়ির ভগ্নাবশেষ পাওয়া যায়। প্রত্নতত্ত্ববিদদের কথায়, বৌদ্ধরা এখানে ধর্মচর্চা করতেন। তাঁদের ধর্ম চর্চার জন্য দ্বিতল ভবন তৈরি করে দিয়েছিলেন মহেন্দ্র দেব পাল। সেই সময় বৌদ্ধদের তুলসী ভিটে, চারটি নজরদারি মিনার, শৌচাগার সবই ছিল। সেই ভগ্নাবশেষের অংশ মাটি খননের পর মিলেছে বলে দাবি প্রত্নতত্ত্ববিদদের। তারপর থেকেই পর্যটকদের কাছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র হয়ে ওঠে জগজ্জীবনপুর। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে প্রশাসনের তরফে গড়ে তোলা হয়েছিল সংগ্রহশালা। মাটি খননের সময় যে সব প্রাচীন মুর্তি, নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে তা সাজিয়ে রাখা হয় সেই সংগ্রহশালায়।

তারকাঁটার বেড়া দিয়ে ভবনটির চারপাশ ঘেরা হয়। সেখানে একটি টিকিট কাউন্টার করা হয়। এখন সব পরিত্ত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। গরু, ছাগল চড়ে বেড়াচ্ছে ওই স্থানে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সংগ্রহশালাটিও নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফলে পর্যটকেরা ঘুরতে গিয়ে হতাশ হয়ে পড়ছেন।

ওই কেন্দ্রের কর্মী জগদীশবাবু বলেন, “ঐতিহাসিক স্থানটিকে ঘিরে আমার আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। যেহেতু আমি মাটি খনন করতে গিয়ে তাম্রপত্রটি পেয়েছিলাম। আমার একার পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব আমি রক্ষণাবেক্ষণ করার চেষ্টা করছি”। তিনি এও বলেন, “শুরুর দিকে পর্যটকদের ঢল নামত। এখন উৎসবের মরসুমেও ফাঁকা পড়ে রয়েছে ঐতিহাসিক স্থানটি।” প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৫ সালে রাজ্যের পর্যটন দফতর ওই কেন্দ্রের উন্নয়নের জন্য ২ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছিল। সেখানে বিশ্রামাগার, বিশাল বুদ্ধমূর্তি, ছোট সংগ্রহশালা গড়ে তোলা হবে। তবে এখনও পর্যন্ত কোন কাজই হয়নি। মালদহের জেলা শাসক কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, “জগজ্জীবনপুরের উন্নয়নের বরাদ্দ কী অবস্থায় রয়েছে, তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন