৭ দিন পরে তুষারের বাড়ি যাচ্ছে তৃণমূল

কর্মী খুনে অভিযুক্তদের দল থেকে বহিষ্কারের পরই তপসিখাতায় দলের ভাবমূর্তির স্বার্থে এ বার তুষার বর্মণের বাড়ি যাওয়ারও সিদ্ধান্ত নিলেন তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার জেলা শীর্ষ নেতৃত্ব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:৪৪
Share:

ক্ষোভ: তুষার বর্মণ খুনে অভিযুক্তদের সকলে এখনও ধরা পড়েনি। ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের আন্দোলন। নিজস্ব চিত্র

কর্মী খুনে অভিযুক্তদের দল থেকে বহিষ্কারের পরই তপসিখাতায় দলের ভাবমূর্তির স্বার্থে এ বার তুষার বর্মণের বাড়ি যাওয়ারও সিদ্ধান্ত নিলেন তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার জেলা শীর্ষ নেতৃত্ব। এর মধ্যে অবশ্য এক সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। আজ, মঙ্গলবার অথবা আগামীকাল, বুধবারই তাঁরা তপসিখাতায় যাবেন। যদিও নিহত কর্মীর বাড়ির লোকেদের অভিযোগ, গোটা ঘটনাকে ধামাচাপা দিতেই তৃণমূল নেতাদের এই উদ্যোগ।

Advertisement

গত সপ্তাহের মঙ্গলবার তপসিখাতার জয় বাংলা হাটে খুন হন তৃণমূল কর্মী তুষার বর্মণ। এলাকায় আদি তৃণমূল কর্মী হিসাবে পরিচিত তুষার এক সময় দলের সহকারী বুথ সভাপতির দায়িত্বও সামলেছেন। কিন্তু এলাকায় নব্য তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত পরোরপাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শম্ভু রায় সহ তাঁর দলবলের সঙ্গে অনেক দিন থেকেই তুষারের বিরোধ চলছিল বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। তুষারের পরিবারের লোকেদের অভিযোগ, এলাকায় শম্ভুদের তোলাবাজির বিরোধিতা করেছিলেন তুষার, সে জন্যই খুন হতে হয় তুষারকে।

ঘটনার পর থেকেই স্থানীয় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের একাংশ অভিযোগ তুলেছিলেন, এলাকায় তুষারের সঙ্গে শম্ভুদের বিরোধ মেটাতে উদ্যোগী হয়নি দলের নেতারা। এমনকি, গত কয়েক মাসে শম্ভুর বিরুদ্ধে থানায় একাধিক অভিযোগ দায়ের হলেও, মাথায় দলের নেতাদের হাত থাকাতেই পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

কিন্তু তুষার খুন হতেই যাবতীয় ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায় এলাকার বাসিন্দাদের। শুরু হয় আন্দোলন।

সোমবার সকাল থেকে ফের একবার রাস্তায় নেমে আন্দোলনে নামেন এলাকার ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। প্রতিবাদ মিছিলের জেরে বেশ কিছুক্ষণের জন্য আলিপুরদুয়ার-ফালাকাটা রাজ্য সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়। সেইসঙ্গে এলাকায় সমস্ত দোকান-পাট বন্ধ রেখে এদিন ফের ব্যবসা বন্‌ধ পালন করা হয়।

এই আন্দোলনে খোদ দলেরই কর্মী-সমর্থকরা নেতৃত্ব দিতে শুরু করায় চিন্তার ভাঁজ পড়ে যায় অনেক নেতার কপালে।

তৃণমূল সূত্রের খবর, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে পরোরপাড় গ্রাম পঞ্চায়েতটি তৃণমূলের কাছে যথেষ্টই শক্তিঘাটি হিসাবে উঠে এসেছিল। গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৬টির মধ্যে ৪টি আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পায় তারা। কিন্তু তপসিখাতার ঘটনার পর সেই শক্ত জমি এই মুহুর্তে অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে মত দলীয় নেতৃত্বের একাংশের।

দলের কর্মী সমর্থকদের অনেকের মত, জেলা শীর্ষ নেতাদের অনেকেই এখনও পর্যন্ত তুষারের বাড়ি যাননি বলেই ক্ষোভ বাড়ছে।

তাই লোকসভা নির্বাচনের আগে সময় আর নষ্ট না করে এখন থেকেই তপসিখাতার ড্যামেজ কন্ট্রোলে মরিয়া তৃণমূলের জেলা শীর্ষ নেতারা। সোমবার আলিপুরদুয়ারে তাঁরা একটি বৈঠক করেন।

বৈঠকের পর দলের জেলা সভাপতি মোহন শর্মা বলেন, “তুষার আমাদের দলের কর্মী ছিল। মঙ্গল অথবা বুধবার তপসিখাতায় যাব। তুষারের বাড়িতেও যাব।”

যদিও তুষারের জ্যাঠামশাই অরুণচন্দ্র রায়ের অভিযোগ, “যদি ঘটনার পরই মোহনবাবু কিংবা দলের ব্লক শীর্ষ নেতৃত্ব আমাদের বাড়িতে আসতেন, তাহলে বুঝতাম তৃণমূল আমাদের পাশে রয়েছে। কিন্তু এতদিন পর তাদের উদ্যোগ দেখে মনে হচ্ছে, এলাকায় তৈরি হওয়া তীব্র জনরোষের ফলে ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে চাইছেন তাঁরা।”

যদিও আলিপুরদুয়ার ১ ব্লক সভাপতি মনোরঞ্জন দে বলেন, “ঘটনার পর থেকেই আমরা তুষারের পরিবারের পাশে রয়েছি। বৈঠকেও সব নেতাকে তার পরিবারের পাশে থাকার কথা বলা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন