ফেসবুকে লিখে গলায় দড়ি তৃণমূল নেতার

রবিবার রাতের এই ঘটনায় রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে বাহাদুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কায়েত পাড়ায়৷ ওই এলাকাতেই রতনের বাড়ি৷ রাতেই পুলিশ তার দেহটি উদ্ধার করে৷ মৃতদেহের পকেট থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে পুলিশ৷

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৭ ০৪:২১
Share:

আত্মঘাতী: রতন সরকার৷

ঘড়িতে তখন রবিবার রাত ১০টা ৫৮ মিনিট৷ ফেসবুকে আচমকা একটি পোস্ট দেখে আঁতকে উঠেছিলেন অনেকে৷ যে পোস্টে লেখা—“আমি অপমান সহ্য করতে না পেরে, ভূষাপাড়া ক্যানেল পাড়ে সুইসাইড করলাম৷”

Advertisement

আচমকা ফেসবুকে এমন পোস্ট দেখে অনেকেই পাল্টা কমেন্ট করে তাকে বিরত করার চেষ্টা করেন। সময় নষ্ট না করে অনেকে আবার ছুটে যান ক্যানেলের ধারে৷ কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে৷ ক্যানেলের পাশেই একটি পাকুড় গাছে তখন ঝুলছে জলপাইগুড়ি জেলা যুব তৃণমূল সম্পাদক রতন সরকারের (২৭) দেহ৷

রবিবার রাতের এই ঘটনায় রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে বাহাদুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কায়েত পাড়ায়৷ ওই এলাকাতেই রতনের বাড়ি৷ রাতেই পুলিশ তার দেহটি উদ্ধার করে৷ মৃতদেহের পকেট থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে পুলিশ৷ যাতে নিজের মৃত্যুর জন্য কয়েকজনকে দায়ী করে গিয়েছেন এই যুব নেতা৷ তাদের মধ্যে একজনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ৷

Advertisement

কিন্তু কেন আত্মহত্যা করতে গেলেন এই যুবনেতা? পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, নবমীর রাতে কায়েত পাড়া এলাকারই বাসিন্দা বিষ্ণুপদ সরকারের নাবালিকা মেয়েকে নিয়ে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিলেন রতন৷ রতনের দাদা বিশ্বজিৎ সরকারের অভিযোগ, ‘‘এরপর এলাকার কিছু লোক আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে ওই নাবালিকাকে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ তোলে৷ ভাইয়ের কাছে পাঁচ লক্ষ টাকা দাবি করা হয়৷ না দিলে ভাই এবং আমাদের পরিবারের বাকি সদস্যদের মুখে চুনকালি মেখে দেওয়া হবে বলেও ভাইকে হুমকি দেওয়া হয়৷’’ সালিশি সভাও বসানো হয়৷ বিশ্বজিৎবাবুর দাবি, ‘‘এই মিথ্যা অপবাদ ও হুমকি সহ্য করতে না পেরেই আমার ভাই আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে৷’’

আরও পড়ুন: অবাধে নেপালি আসা ঠেকাতে নজর চুক্তিতে

ওই নাবালিকার মা লক্ষ্মী সরকার বলেন, নবমীর দিন দুই বান্ধবীর সঙ্গে তাঁর মেয়ে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিল৷ তিনি বলেন, ‘‘রাস্তায় রতন আমার মেয়েকে ঠাকুর দেখতে নিয়ে যেতে চায়৷ আমার মেয়ে প্রথমে রাজি ছিল না৷ পরে রাজি হয়৷ কিন্তু ঠাকুর দেখে ফেরার পথে একটি নির্জন জায়গায় রতন আমার মেয়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে৷ আমার মেয়ে ভয়ে একটি বাড়িতে ছুটে আশ্রয় নেয়৷ রাতে সেখান থেকে পালিয়ে যায়৷ পরে রতনকে ধরা হলে সে বলে আমার মেয়ে ভূত দেখে ভয় পেয়েছে৷’’ বিষয়টি নিয়ে গ্রামে সালিশি সভা হয় বলে তিনিও জানিয়েছেন৷ তবে তাঁর দাবি, রতনকে কেউ হুমকি দেয়নি৷

জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায় প্রশ্ন, ‘‘রতন যদি কোন দোষ করেও থাকে, থানায় অভিযোগ করা হল না কেন? কেন সালিশি সভা করা হল?’’

দেবেন সরকার নামের একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷ তৃণমূলের স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য সুশীল সরকার বলেন, ‘‘দেবেনই প্রথম রতনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ রটায়।’’ জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি বলেন, তদন্ত শুরু হয়েছে৷

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement