মালবাজারে নিরঙ্কুশ ক্ষমতায় তৃণমূল

নিরঙ্কুশ ভাবে মালবাজারের পুরবোর্ড দখল করল তৃণমূল। পুরসভার ১৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল ৯টি ওয়ার্ডে জয় লাভ করেছে। অন্য দিকে বামফ্রন্ট জিতেছে ৪টিতে এবং কংগ্রেস দু’টিতে। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মালবাজারের মহকুমাশাসকের দফতরে সকাল ৮টায় গণনা শুরু হয় এবং ৫০ মিনিটের মধ্যেই চিত্র পরিষ্কার হয়ে যায় মালবাজারের।

Advertisement

সব্যসাচী ঘোষ

মালবাজার শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৪১
Share:

মালবাজার পুরসভা জয়ের পরে তৃণমূলের উচ্ছ্বাস। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।

নিরঙ্কুশ ভাবে মালবাজারের পুরবোর্ড দখল করল তৃণমূল। পুরসভার ১৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল ৯টি ওয়ার্ডে জয় লাভ করেছে। অন্য দিকে বামফ্রন্ট জিতেছে ৪টিতে এবং কংগ্রেস দু’টিতে। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মালবাজারের মহকুমাশাসকের দফতরে সকাল ৮টায় গণনা শুরু হয় এবং ৫০ মিনিটের মধ্যেই চিত্র পরিষ্কার হয়ে যায় মালবাজারের।

Advertisement

তৃণমূলের বিগত পুরবোর্ডের চেয়ারম্যান স্বপন সাহা নিজে জেতেন ৩৪৪ ভোটে। এই প্রথম তৃণমূলের মালবাজার পুরবোর্ড একক ভাবে দখল করতে পারার খবরে জয়ের নায়ক স্বপনবাবুকে নিয়ে উল্লাস শুরু হয়ে যায় সমর্থকদের মধ্যে। তবে এই সাফল্যের মধ্যেই ঘটেছে কিছু ছন্দপতনও। মালবাজার তৃণমূল টাউন সভাপতি মানসকান্তি সরকার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৪ ভোটে পরাজিত হন কংগ্রেসের টাউন সভাপতি মিঠু মুখোপাধ্যায়ের কাছে।

আবার কংগ্রেসের পুরবোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারপার্সন পরবর্তী কালে দল বদলে তৃণমূলে যোগ দেওয়া সুলেখা ঘোষ ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ১৭২ ভোটে পরাজিত হয়েছেন কংগ্রেসের প্রার্থী সুকদেব দাসের কাছে। মালবাজার চ্যাংরাবান্ধা রেলপথের অন্য পারে থাকা শহরের ৩টি ওয়ার্ড যথাক্রমে ৭, ১৪ এবং ১৫ নম্বর ওয়ার্ড। তিনটিতেই ধরাশায়ী তৃণমূল। প্রত্যেকটিতেই জয়ী হয়েছেন বামপ্রার্থীরা। গত ২০১৩ সালে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস জিতলেও এ বারে সেটিও তৃণমূল কংগ্রেস ধরে রাখতে পারেনি। পুরনির্বাচনে বিজেপি অনেক আশা জাগিয়ে প্রচার করলেও তারা একটি ওয়ার্ডেও জয়ী হতে পারেনি। ১৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে বিজেপি দ্বিতীয় হয়েছে ৪টি ওয়ার্ডে।

Advertisement

এ দিকে লোকসভা নির্বাচনের থেকে ওয়ার্ডভিত্তিক হিসেবে সংখ্যায় তৃণমূল ২টি ওয়ার্ড হারালেও শতাংশের বিচারে লোকসভার থেকে সামান্য হলেও ভোট বেড়েছে তৃণমূলের। লোকসভায় যেখানে তৃণমূল ৩৯.৯১ শতাংশ ভোট পেয়েছিল সেখানে এ বার তারা পেয়েছে ৪০.৫২ শতাংশ ভোট।

অন্য দিকে এ বার রক্তক্ষরণ বন্ধ করে অনেকটাই সামলে উঠেছে বামেরা। গত লোকসভা নির্বাচনে বামেরা কেবলমাত্র একটি ওয়ার্ডে এগিয়েছিল। শতাংশের বিচারে তাদের ভোট ছিল ২৪.৪৭। এ বার বামেরা ওয়ার্ড জিতে নিয়েছে ৪টি এবং ভোট শতাংশ তাদের পৌঁছে গিয়েছে ৩১.১৯শতাংশে।

বিজেপি যেখানে লোকসভা নির্বাচনে ৩টি ওয়ার্ডে এগিয়ে গিয়ে ২৫.৯২ শতাংশ ভোট পেয়ে মালবাজারে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল। সেই বিজেপি এ বার একটি ওয়ার্ডেও জিততে পারেনি এবং তাদের প্রাপ্ত ভোট কমে দাঁড়িয়েছে ১৬.২৪ শতাংশে। লোকসভার তুলনায় এগিয়েছে কংগ্রেসও। লোকসভার ফলে একটি ওয়ার্ডেও যেখানে কংগ্রেস এগিয়ে থাকতে পারেনি। ভোটের হার যেখানে তাদের ছিল মাত্র ৬.৫২ শতাংশ, সেখানে এ বার কংগ্রেস ২টি ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছে এবং ১১.৫৪ শতাংশ ভোট তারা পেয়েছে।

ভোটের জয়ের খবরে মালবাজারে চলে আসেন জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের জয় আসলে মালবাজারের সাধারণ উন্নয়নকামী মানুষেরই জয়। কয়েকটি ওয়ার্ডে যেখানে দলের ফল ভাল হয়নি। সেখানে পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধান করা হবে।’’ টাউন তৃণমূল সভাপতি মানসকান্তি সরকারের মাত্র ৪ ভোটে পরাজয়ের বিষয়টিও পুনর্গণনার দাবি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এ দিকে বামেদের পক্ষ থেকে সিপিএমের মালবাজার জোনাল কমিটির নেতা চানু দে বলেন, ‘‘শতাংশের বিচারে আমাদের ভোট বাড়লেও চার ওয়ার্ডের জয়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধী শক্তি হিসেবে যে বামেদেরই চেয়েছেন সেটা পুরনির্বাচন পরিষ্কার করে দেখিয়ে দিলেও আমরা ফের আত্মবিশ্লেষণে বসব।’’ তবে কঠিন পরিস্থিতিতে কংগ্রেস ২টি ওয়ার্ড ধরে রাখায় অনেকটাই প্রত্যয়ী কংগ্রেস শিবির। মালবাজারের টাউন কংগ্রেস সভাপতি মিঠু মুখোপাধ্যায় নিজেও ৫ নম্বর ওয়ার্ডে লড়াই করে তৃণমূল টাউন কংগ্রেস সভাপতি মানসকান্তি সরকারকে হারিয়ে দিয়েছেন।

মিঠুবাবুর কথায়, ‘‘ডান পন্থায় বিশ্বাসী মানুষেরা আজও কংগ্রেসকে চায়। কঠিন লড়াই সেটাই বোঝালো। অতীতে আমার কাজ আমাকে যেমন জিতিয়ে এনেছে। তেমনই আমার জয় কংগ্রেস কর্মীদেরও উজ্জীবিত করবে।’’ তবে হতাশায় ঢেকে গেছে মালবাজারের বিজেপি শিবির। মালবাজারের বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা তথা জলপাইগুড়ি জেলা মজদুর মোর্চার সভাপতি দেবব্রত মিত্রের কথায়, ‘‘ফলাফল অপ্রত্যাশিত মনে হলেও আমরা থেমে থাকব না। বুথ ধরে ধরে আমাদের জনসংযোগের কাজ কর্মীদের চালিয়ে যেতে বলেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন