বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা, নালিশ তৃণমূলের নামে

মেয়াদ ফুরনোর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির বৈঠক কেন ডাকা হয়েছে অভিযোগ তুলে কর্মকর্তাদের মারধর এবং অফিসে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতির সদস্য তথা বাম বিরোধীদের একাংশের বিরুদ্ধে।

Advertisement

সৌমিত্র কুণ্ডু

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৬ ০২:৪৭
Share:

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির কার্যালয়ে ভাঙচুর। — নিজস্ব চিত্র

মেয়াদ ফুরনোর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির বৈঠক কেন ডাকা হয়েছে অভিযোগ তুলে কর্মকর্তাদের মারধর এবং অফিসে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতির সদস্য তথা বাম বিরোধীদের একাংশের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার দুপুরে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা।

Advertisement

বাম মনোভাবাপন্নদের দখলে রয়েছে এই কমিটি। তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতি সদস্য সমর্থক এবং কর্মচারী সমিতির বাম বিরোধী সদস্যদের একাংশ মিলে এ দিন তাদের উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ। কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুমন চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, তাঁকে মারধর, কলার ধরে টানা, ধাক্কা দেওয়া হয়েছে। কর্মচারী সমিতির চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের এক প্রতিনিধি বির্জু মল্লিককে গালিগালাজ করা, ধাক্কা দিয়ে বার করে দেওয়া হয়েছে। অফিসের চেয়ার টেবল ছুড়ে মারা হয়। ভাঙচুর করা হয়। পরে তারা অফিসে তালা মেরে চলে যান বলে অভিযোগ। কাজে কলকাতায় রয়েছেন উপাচার্য সোমনাথ ঘোষ। ক্যাম্পাসের দায়িত্বে থাকা দ্যুতিষ চক্রবর্তী ঘটনার কথা তাঁকেও জানিয়েছেন। উপাচার্য বলেন, ‘‘দুঃখজনক ঘটনা। দুই পক্ষের মধ্যে গোলমাল হয়েছে বলে শুনেছি। ফিরে গিয়ে বিস্তারিত খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।’’ উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতির আহ্বায়ক গুরুচরণ রায় বলেন, ‘‘আমাদের কেউ ওই গোলমালে যক্ত নয়। কর্মচারী সমিতি বাম মনোভাবাপন্নদের দখলে। তাদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্য ওই ঘটনা।’’

এ দিন বেলা ২টো নাগাদ ওয়াচ অ্যান্ড ওয়ার্ডের কাছে কর্মচারী সমিতির অফিসে বৈঠক ডাকা হয়েছিল। কর্মচারী সমিতির নির্বাচন প্রসঙ্গে এ দিন বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠক শুরুর মুখেই গোলমাল বাধে। অভিযোগ, তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতির সদস্য সুব্রত কর-সহ তাদের কয়েকজন এবং কর্মচারী সমিতির বিরোধী গোষ্ঠীর সদস্য দেবীপ্রসাদ বুট, শঙ্কর ঘোষরা এ দিন মৃত্যুর পোষ্যের চাকরি মেলেনি কেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নানা জবাবদিহি চান। অথচ শিক্ষাবন্ধু সমিতির ওই সদস্য সমর্থকদের থাকারই কথা নয়। তারা বৈঠক করতে বাধা দেন। মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি বৈঠক করতে পারবে না জানিয়ে সকলকে বের করে দেন। সুমনবাবুর দাবি, সমিতির নিয়মের মধ্যেই রয়েছে মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও নতুন কমিটি গঠন না হওয়া পর্যন্ত পুরনো কমিটি কার্যকর হবে। তা ছাড়া গত ১৩ মে সমিতির দুই বছর মেয়াদ উত্তীর্ণ হচ্ছে দেখে ১৬ মে নির্বাচনের কথা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু নির্বাচন পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ তা করতে দেননি। এখন নির্বাচন পরিস্থিতি নেই। তাই ওই নির্বাচন নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছিল। সুমনবাবুর অভিযোগ, ‘‘সমিতির বিরোধী গোষ্ঠীকে নিয়ে তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতির লোকজন এই সংগঠন দখল করতে চাইছে। আমাদের মারধর করে তাড়িয়ে এ দিন তারা সমিতির অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয়। কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’’

Advertisement

ক্যাম্পাসের দায়িত্বে থাকা দ্যুতিষবাবু জানান, ঘটনার কথা শুনেই তিনি সেখানে যান। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসারকে নিয়ে এসে তালা ভাঙা হয়েছে। উপাচার্যকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি ফিরে তদন্ত কমিটি গড়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। তিনি জানান ,সমিতির নির্বাচন সমিতির ব্যাপার। কিন্তু তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় কর্তৃপক্ষের তরফে বিষয়টি দেখা হচ্ছে।

অভিযুক্ত সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘আমি ঘটনার সময় সেখানে একটি চায়ের দোকানে গিয়েছিলাম। গোলমাল হচ্ছে দেখে দূরে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। আমাদের নাম আসছে কেন বুঝতে পারছি না। আমরা তো ওই সংগঠন করি-ই না।’’ দেবীপ্রসাদ বুট, শঙ্করবাবুরা জানান, তাঁরা তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতির কাউকে দেখেননি। শঙ্করবাবুর দাবি, সামনে সমিতির নির্বাচন তাই সহানূভূতি টানতে এ ধরনের নাটক করে অভিযোগ তুলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন