চেকপোস্টে ঘুষ দিয়ে চলছে কয়লা পাচার, নালিশ

কয়লার চোরাপাচার রুখতে পুলিশি তৎপরতা বাড়ানোর দাবি তুললেন কুমারগ্রামের আরএসপি বিধায়ক মনোজকুমার ওঁরাও। তাঁর অভিযোগ, গাড়ি প্রতি সাড়ে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে কয়লা বোঝাই ট্রাকের ছাড়পত্র মিলছে বাংলা সীমানায়। একটি চক্র গাড়ির ছাড়পত্র দেওয়ার কাজ করছে। যে গাড়ি টাকা দিচ্ছে না, তার ছাড়পত্র মিলছে না।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

বক্সিরহাট শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৫ ০২:২৩
Share:

কয়লার চোরাপাচার রুখতে পুলিশি তৎপরতা বাড়ানোর দাবি তুললেন কুমারগ্রামের আরএসপি বিধায়ক মনোজকুমার ওঁরাও। তাঁর অভিযোগ, গাড়ি প্রতি সাড়ে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে কয়লা বোঝাই ট্রাকের ছাড়পত্র মিলছে বাংলা সীমানায়। একটি চক্র গাড়ির ছাড়পত্র দেওয়ার কাজ করছে। যে গাড়ি টাকা দিচ্ছে না, তার ছাড়পত্র মিলছে না। সেই সব ট্রাকগুলিকেই পুলিশ আটক করছে। তাঁর দাবি, অনেক প্রভাবশালী ব্যাক্তি কয়লা চোরাকারবারীদের সঙ্গে যুক্ত। বিশেষ করে অসম-বাংলার বারোভিসা সীমানায় ওই চক্র ব্যাপক ভাবে সক্রিয়। কয়েক মাস আগে কোচবিহারের বক্সিরহাট সীমান্তেও ওই চক্র সক্রিয় ছিল। বর্তমানে বক্সিরহাট সীমান্তে নজরদাড়ি অনেকটা কড়া হয়েছে। কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, ‘‘চেকপোস্টে ঘুষ দিয়ে কয়লা চোরাপাচারের যে অভিযোগ উঠেছে, তা প্রশাসন খতিয়ে দেখবে। সংশ্লিষ্ট সব দফতরের সঙ্গেই এই নিয়ে কথা বলব।’’

Advertisement

পূর্ব ভারতের নাগাল্যান্ড, মেঘালয়, অসম এলাকা থেকে এই কয়লা চোরা পথে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ঝাড়খণ্ড পর্যন্ত বিরাট জায়গা জুড়ে পাচার করা হয়। বেশ কয়েকটি রাজ্যের ইটভাটা ও চা বাগানে এই কয়লা যায়। প্রশাসনিক সূত্রেই জানা গিয়েছে, নিয়ম মতো কয়লা পাচার করতে গেলে অনেক বেশি টাকা লাগে এবং কোল ইন্ডিয়ার অনুমতিপত্র লাগে। তার বদলে চোরা পথে পাচার করে কয়েকজন অসাধু ব্যবসায়ী মোটা টাকা লাভ করছেন। সেই সঙ্গেই প্রশাসনিক সূত্র জানিয়েছে, বৈধ ভাবে যে কয়লা নিয়ে যাওয়া হয়, তার থেকে চোরাপথে পাচার করা কয়লার মান খারাপ। তাই এর দামও কম। আর দাম কম বলেই বিভিন্ন রাজ্যে ছড়ানো অসংখ্য ইটভাটা থেকে শুরু করে নানা ছোট কারবারে এই কয়লার চাহিদা রয়েছে। তাই চোরাপাচারও বাড়ছে।

বিধায়ক বলেন, “বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার হইচই করেছি। পুলিশ-প্রশাসনের নজরে বিষয়টি এনেছি। তাতে কয়লার অবৈধ ব্যবসায় অনেকটা লাগাম এসেছে। কিন্তু এখনও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।” পুলিশের তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, কয়লার অবৈধ ব্যবসা রুখতে সব রকম ব্যবস্থা নিয়েছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে শুধু আলিপুরদুয়ার পুলিশ ১০০টি কয়লা বোঝাই ট্রাক আটক করে মামলা দিয়েছে। ওই কারবারের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে ১০ জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

Advertisement

আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার আকাশ মেঘারিয়া বলেন, “কয়লার অবৈধ ব্যবসা রুখতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা যখনই অভিযোগ পেয়েছি, ব্যবস্থা নিয়েছি। বিধায়কের কাছে যদি কোনও প্রমাণ থাকে, আমাদের জানান। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

কোচবিহার পুলিশও কয়লার অবৈধ ব্যবসা রুখতে ৫০টির বেশি মামলা রুজু করেছে বলে জানিয়েছে। শাসকদলের আলিপুরদুয়ারের সাংসদ তথা কুমারগ্রামের বাসিন্দা দশরথ তিরকি বলেন, “কয়লার অবৈধ কারবারের কথা আমিও শুনেছি। কয়েক মাস আগে কুমারগ্রামে কয়লার গাড়িতে ভর্তি হয়ে গিয়েছিল। মানুষ চলাচল করতে পারছিল না। সেই সময় রাজ্য পুলিশের আইজি-র কাছে বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানাই।”

অভিযোগ উঠেছে, গত প্রায় দেড় বছর ধরে কয়লা চোরাকারবারীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে অসম সীমান্তে। কোচবিহার থেকে উত্তর দিনাজপুর পর্যন্ত সড়ক কয়লা পাচারের করিডর হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পুলিশ-সেলস ট্যাক্স এবং পরিবহণ দফতরের চেকপোস্টের সামনে দিয়েই ওই গাড়িগুলি চলাচল করে।

বারভিসা এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, রাতের দিকেই ওই গাড়িগুলি বেশি চলাচল করে। মাঝে প্রতিদিন কয়লা বোঝাই পাঁচ হাজারের বেশি গাড়ি যাতায়াত করত। অবৈধ গাড়িগুলির দৌরাত্ম্যে স্থানীয় বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। বিষয়টি নিয়ে সরবও হন তাঁরা। এর মধ্যে আলিপুরদুয়ারের নতুন পুলিশ সুপারের দায়িত্ব নেন আকাশ মেঘারিয়া। তিনি ব্যবস্থা নিতে শুরু করেন। অবৈধ গাড়িগুলিকে ধরে মামলা রুজু করা হয়। এখনও প্রতিদিন প্রায় ৫০০ কয়লা বোঝাই ট্রাক চলাচল করে বলে অভিযোগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন