মর্মান্তিক: ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অভিনেত্রী পায়েলের দেহ। নিজস্ব চিত্র
সিনেমা অভিনেত্রী পায়েলের মৃত্যু অবসাদের কারণে বলেই মানছে তাঁর পরিবার। তাই কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগও জানাবেন না বলে জানিয়েছেন পায়েলের বাবা প্রবীর গুহ। মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ি হাসপাতালে দেহ নিতে এসেছিলেন তিনি। বুধবার শহরের একটি হোটেল থেকে পায়েলের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। কিন্তু পায়েলের রহস্য মৃত্যুতে জট পাকিয়েছে তাঁর মোবাইল ফোনের হদিশ না পাওয়া। পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়েছে, ফোন পাওয়া যায়নি। দেব অভিনীত ‘ককপিটে’ কাজ করেছেন। ‘কেলো’ সিনেমার শুটিং চলছিল। তা ছাড়াও ‘সাত ভাই চম্পা’ নামে একটি সিরিয়ালেও অভিনয় করছিল পায়েল। ময়নাতদন্ত থেকে আত্মহত্যারই ইঙ্গিত মিলেছে।
পরিবার সূত্রে দাবি করা হয়েছে, পায়েল তার ৯ বছরের ছেলেকে কাছে পাচ্ছিল না বলে মানসিক অবসাদে ভুগছিল। তাঁর স্বামীর সঙ্গে তাঁর ডিভোর্সের মামলা চলছে। তাঁদের একমাত্র ছেলে স্পন্দনকে নিজের কাছে পেতে চেয়ে আদালতের দ্বারস্থও হয়েছিলেন ওই অভিনেত্রী। কিন্তু নানা জটিলতায় তা সম্ভব হচ্ছিল না। প্রবীরবাবুর কথায়, ‘‘৩ অগস্ট ছেলের জন্মদিন ছিল। বালিগঞ্জের একটি স্কুলে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলে ছেলে মায়ের সঙ্গে কথা বলতে চায়নি। তাতে চূড়ান্ত আঘাত পেয়েছিল পায়েল।’’
জানা গিয়েছে, ২০০৬ সালে পায়েলের বিয়ে হয়েছিল প্রাক্তন ব্যাঙ্ককর্মী তথা ব্যবসায়ী সুমিত চক্রবর্তীর সঙ্গে। ২০১৩ সালের মাঝামাঝি থেকে অভিনয়ের পেশায় আসতে শুরু করেন পায়েল। তিন বছর ধরে ডিভোর্সের মামলাও চলছিল তাঁর স্বামীর সঙ্গে।
পায়েলের বাপের বাড়ি নৈহাটি। পরিবার সূত্রে দাবি করা হয়েছে, নিউ গড়িয়াতে একটি ফ্ল্যাট নিয়ে সেখান থেকে অভিনয়ের কাজ করতেন। রবিবার পায়েলের সঙ্গে তাঁর পরিবারের যোগাযোগ হয়েছিল। সোমবার তাঁর শিমুরালিতে শুটিং ছিল। প্রবীরবাবু বলেন, ‘‘মানসিক অবসাদে ভুগছিল বলে রোজই তাঁর খোঁজ নিতাম। সোমবার বিকেলে কথা হয়েছিল, তখন সে জানিয়েছিল, ছেলের জন্য মন খারাপ।’’ মঙ্গলবার থেকে রাজ্যের বাইরে তাঁর শুটিংয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল থেকেই তাঁর ফোন সুইচড অফ পায় তাঁর পরিবার। মঙ্গলবার রাতে কলকাতার পঞ্চসায়র থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করে পায়েলের মা কুন্তলাদেবী। বুধবার সন্ধেবেলা পায়েলের মৃত্যুর খবর পায় তাঁর পরিবার। এ দিন উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজের ময়না তদন্ত হয়। সূত্রে দাবি করা হয়েছে, শরীরে কোনও মাদক বা আঘাতের চিহ্ন ছিল না। ফাঁসিই তাঁর মৃত্যুর কারণ। যদিও অভিনেত্রীর মোবাইল ফোন না পাওয়া নিয়ে আরও একটি রহস্য তৈরি হয়েছে। হোটেলে ঢোকার সময়ও তাঁর সঙ্গে মোবাইল ফোন দেখেননি বলেই দাবি করছে হোটেলের কর্মী ও ম্যানেজাররা। পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়েছে, হোটেলের ঘর ছাড়াও চারপাশে মোবাইল খোঁজা হয়েছে। তা মেলেনি। শিলিগুড়িতে আসার সময় তাঁর সঙ্গে তাঁর মোবাইল ছিল কিনা তা নিয়েই ধন্দে পুলিশ।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, ট্রেনে করেই মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে এসেছিল পায়েল। কিছু কেনাকেটাও করেছেন। সন্ধেবেলা নবীন সেন রোডে একটি হোটেলে ঢোকার পর আর কোথাও বেরোননি।