ধসে বিধ্বস্ত দার্জিলিং। —নিজস্ব চিত্র।
কারও বুকিং ছিল লক্ষ্মীপুজোর পরের দিন থেকে। কারও পরিবার নিয়ে রবিবার রাতেই রওনা দেওয়ার কথা ছিল। কেউ কেউ আবার কালীপুজোর ছুটিতে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও আগে থেকেই গাড়ি-হোটেল, সব বুক করে ফেলেছিলেন। কিন্তু এক রাতের প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ থেকে একের পর এক মৃত্যুসংবাদ আসতেই অধিকাংশ পর্যটক বেড়ানোর পরিকল্পনা বাতিল করার পথে হাঁটছেন। কেউ বিকল্প জায়গার খোঁজ করছেন, কেউ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন ঘুরতে যাওয়ার দিনক্ষণ পিছিয়ে দেওয়ার।
উল্লেখ্য, এক রাতের অতি ভারী বৃষ্টিতে উত্তরবঙ্গের একাধিক নদীর জলস্তর বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। জলের তোড়ে একের পর এক রাস্তা, সেতু ভেসে যাওয়ার খবর মিলছে। মৃতের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ২০ পেরিয়ে গিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। উত্তরবঙ্গ জুড়ে আগামী কয়েক দিন ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি চলবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। এই পরিপ্রেক্ষিতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে আপাতত সেখানকার একাধিক পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। যে পর্যটকেরা উত্তরবঙ্গে আছেন, তাঁদের হোটেল থেকে না বেরোনোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
উত্তরবঙ্গে বিপর্যয়ের এই প্রভাব স্বাভাবিক ভাবেই পড়তে শুরু করেছে পর্যটন ব্যবসায়। সাধারণত, উত্তরবঙ্গে সারা বছর পর্যটকের আনাগোনা লেগে থাকলেও পুজো এবং পুজো-পরবর্তী ছুটিতে বিপুল সংখ্যক পর্যটক দার্জিলিং, কার্শিয়াং-সহ পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গা বেড়ানোর জন্য বেছে নেন। এ বছরও অনেকেই তেমন পরিকল্পনা করেছিলেন। এখন অধিকাংশই সেই পরিকল্পনা বাতিলের পথে হাঁটছেন।
আগামী মঙ্গলবার দার্জিলিং যাওয়ার কথা ছিল বেহালার বাসিন্দা, ব্যাঙ্ককর্মী স্বপন পোদ্দারের। সঙ্গে ছোট ছেলে ছাড়াও বয়স্ক কয়েক জনের যাওয়ার কথা। আপাতত পরিকল্পনা বাতিল করেছেন স্বপন। রবিবার তিনি বললেন, ‘‘যা দেখছি, এর পরে কোন সাহসে আর বেড়াতে যাব? প্রাণের আগে তো বেড়ানো নয়।’’ একই পথে হেঁটেছেন নিউ ব্যারাকপুরের বাসিন্দা অচিন্ত্য সাহা। রবিবার রাতে তাঁর যাওয়ার কথা থাকলেও আপাতত তিনি যাবেন না বলে সকালেই ভ্রমণ সংস্থাকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছেন। কেউ কেউ আবার এখনই উত্তরবঙ্গ সফর বাতিল না করলেও পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানাচ্ছেন।
আগামী শুক্রবার সপরিবার উত্তরবঙ্গ যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সিঁথির এক ব্যক্তির। এখনই পরিকল্পনা বাতিল না করলেও পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন তিনি। ওই ব্যক্তির কথায়, ‘‘ভ্রমণ সংস্থার সঙ্গে সকালে এক প্রস্ত কথা হয়েছে। উত্তরবঙ্গের যে দিকে আমাদের যাওয়ার কথা, সে দিকটি এখনও ঠিক আছে বলে আশ্বস্ত করেছেন সংস্থার কর্ণধার। তবে আগামীদু’-তিন দিনে পরিস্থিতি কেমন থাকে, সে দিকে নজর রাখছি। তার পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’’
পর্যটনের ভরা মরসুমে উত্তরবঙ্গের এই বিপর্যয়ে আশঙ্কার কালো মেঘ দেখছেন ব্যবসায়ীরা। আগামী দু’-এক দিনের মধ্যে যাঁদের উত্তরবঙ্গে পৌঁছনোর কথা ছিল, তাঁদের অধিকাংশ বুকিং বাতিল করছেন বলে মেনে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরাও। শহরের এক পর্যটন ব্যবসায়ী দীপঙ্কর দাসের কথায়, ‘‘বিহারের ৯০ জনের একটি দলের ৮ অক্টোবর নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছনোর কথা ছিল। তাঁরা ফোন করে বুকিং বাতিল করে দিয়েছেন। আরও কয়েক জন একই সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।’’ শিয়ালদহ সংলগ্ন এলাকার পর্যটন ব্যবসায়ী সমর ঘোষ বললেন, ‘‘সকাল থেকে শুধু বুকিং বাতিলের ফোন আসছে। অনেকে আবার সোজা অফিসে চলে আসছেন। অচেনা নম্বর থেকে আসা ফোন ধরতেই ভয় লাগছে।’’
ট্র্যাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল-এর প্রেসিডেন্ট প্রশান্ত মাঝি বললেন, ‘‘লক্ষ্মীপুজোর পরে যাঁদের যাওয়ার কথা ছিল, তাঁদের অধিকাংশই যেতে চাইছেন না। ইতিমধ্যেই বড় অংশ পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। পর্যটকদের যাতে আর্থিক ক্ষতি না হয়, সে দিকটি দেখার চেষ্টা করছি। আশা করছি, সরকারও পদক্ষেপ করবে।’’
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে