পাহাড়-জঙ্গলে বাড়ছে পাখি দেখার ভিড়

এ বার ভোরের আলো বা গজলডোবাতেও সরকারি ভাবে বার্ড ওয়াচিং-এর ব্যবস্থা শুরু করতে চলছে রাজ্য পর্যটন দফতর।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৮ ০২:৩১
Share:

গজলডোবায় পরিযায়ী।

জঙ্গল বা পাহাড়ের নির্জন এলাকায় বসে এসএলআর ক্যামেরায় পাখির ছবি তোলার নেশা অনেকেরই। সেই ‘বার্ড ওয়াচিং’ ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উত্তরবঙ্গ এবং সিকিমে পর্যটন প্যাকেজের আকার নিচ্ছে। কয়েক বছর আগেও পাখি দেখতে মুষ্টিমেয় বিদেশি এবং ফটোগ্রাফারদের দেখা মিলত। কিন্তু গজলডোবা থেকে ঝালং, লাভা বা টাইগারহিল, লাচেন, লাচুং থেকে বক্সা বা গোসানিমারি, ফুলবাড়ির পাখিরা বদলে দিয়েছে পরিস্থিতি। বিভিন্ন রাজ্য থেকে দল বেঁধে পর্যটকরা এখন আসছেন শুধু পাখি দেখতেই। গত শীতে এমন অন্তত ১৫টি দল এসেছিল পাখি দেখতে ।

Advertisement

এতি উৎসাহী পর্যটন ব্যবসায়ীরাও। তাঁরা জানাচ্ছেন, জলাশয়, ক্যানেল, ও বিভিন্ন জঙ্গলে পাখি সংরক্ষণের কাজও আগের থেকে ভাল হচ্ছে। পাখিরাও অনেকটা নিরাপদ। শিকার ছেড়ে গ্রামের ছেলেরা গাইডের কাজে নেমেছেন। এখন ৩২ জন পাখির গাইড আছেন উত্তরবঙ্গে। পুজোর পর থেকে বর্যার আগে পর্যন্ত পরিযায়ী পাখিরা থাকলেও বিভিন্ন জঙ্গল, পাহাড়ে সারা বছরই বিভিন্ন ধরনের পাখি থাকে। তাতে গোটা বছর পাখিও দেখতে পারছেন পর্যটকেরা।

এ বার ভোরের আলো বা গজলডোবাতেও সরকারি ভাবে বার্ড ওয়াচিং-এর ব্যবস্থা শুরু করতে চলছে রাজ্য পর্যটন দফতর। এই ব্যবস্থা কী ভাবে করা যায়, তা ঠিক করতে নানা সংগঠন, পরিবেশপ্রেমীদের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর (নর্থ) সম্রাট চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পাখি দেখা এখন শুধু নেশার পর্যায়ে নেই। পর্যটনের আকার নিচ্ছে। তাই আমরাও গজলডোবায় এই ব্যবস্থা করছি।’’ তিনি জানান, গজলডোবায় ইকো ফ্রেন্ডলি অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস চালু হবে। ক্যানাল বোটিং, চা বাগানে সাইক্লিং ছাড়াও বার্ড ওয়াচিংকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

১৯৯৮ সালে প্রথমবার এই অঞ্চলে পাখি দেখার কাজ শুরু হয়। গরুমারা, টাইগার হিল এবং পেলিং জুড়ে সমীক্ষায় নামে একটি সংগঠন। তাতে দিল্লি, কলকাতার বার্ড ক্লাবের সদস্যরা ছাড়াও বিদেশিরা ছিলেন। অরুণাচল, অসম, উত্তরবঙ্গ, সিকিম জুডে একটি সার্কিট তৈরি হয়। হাতেগোনা বিদেশিরা, পাখিপ্রেমীরা এলাকাগুলিতে এসেছেন। স্থানীয় ধনেশ থেকে পেঁচা বা নীলপরির সঙ্গে ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, মানস সরোবরের উপরের অংশ থেকে আসা রুডি শিলড ডাকস, বার হেডেস গুস, এশিয়ান ওপেন বিলড স্ট্রোক, ব্রাউন হেডেড গুল, করমোর‌্যান্ট, মার্শ হ্যারিয়রকে দেখার আকর্ষণ দিনের পর দিন বেড়েছে।

পরিবেশপ্রেমী সংগঠন অ্যাক্টের আহ্বায়ক রাজ বসু বলেন, ‘‘দু’ দশক আগে আমরা যখন শুরু করি তখন গ্রাম, বনবস্তির লোকেরা এতটা সচেতন ছিলেন না। পাখিও কম দেখা যেত। আর এই ট্যুরে সবসময় জঙ্গলের কোর এলাকায় ঢোকার প্রয়োজন পড়ে না। গ্রাম, বনবস্তি বা পাহাড়ি হোমস্টেতে থাকলেই হয়।’’ আরেক পর্যটন সংস্থার কর্তা সম্রাট সান্যাল জানান, আগে হাতেগোনা ২/৩ জন আসতেন। বছর খানেক ধরে দলবেঁধে পর্যটকরা আসছেন। পাহাড়, সমতল, জঙ্গল মিলিয়ে পাখি দেখার প্যাকেজ তৈরি করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন