বিক্ষোভ: বালুরঘাটে আদিবাসীদের অবরোধ। নিজস্ব চিত্র
প্রায় এক বছর পরে ফের আদিবাসীদের আন্দোলনে যেন অবরুদ্ধ হল বালুরঘাট। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে এই শহরে আদিবাসীদের বিরাট সমাবেশ দেখা গিয়েছিল। তারপরে প্রতি মাসেই জমিরক্ষা ও শংসাপত্র নিয়ে অভিযোগ তুলে আদিবাসী সংগঠনগুলো বালুরঘাটে পথ অবরোধ করে। বিক্ষোভও দেখায়। বৃহস্পতিবার আদিবাসীদের সাতটি সংগঠন এক সঙ্গে সেই অান্দোলনেই নামে। প্রশাসনিক ভবনের সামনে তির ধনুক হােত পনেরো হাজার আদিবাসীর বিক্ষোভে প্রায় ৫ ঘণ্টা শহর অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ দিনাজপুরের ৮টি ব্লক থেকে গাড়ি ভাড়া করে আদিবাসীরা এ দিন জেলা সদরে আসেন। সকাল থেকেই দফায় দফায় তাঁরা মিছিল করে শহরে ঢোকেন। প্রতি মাসেই আদিবাসীদের বিক্ষোভ দেখতে অভ্যস্ত বালুরঘাট কিন্তু এ দিন আন্দোলনকারীদের সংখ্যা দেখে অবাক হয়ে যান।
বালুরঘাটের মানুষ আরও অবার হয়ে যান, যখন দেখা যায়, আন্দোলনে রয়েছেন তৃণমূল আদিবাসী সংগঠনের জেলা সভাপতি সন্তোষ হাঁসদা ও বিজেপির জনজাতি মোর্চার সভাপতি বুধু রায় টুডুও। শহরে চর্চা শুরু হয়ে যায়, লোকসভা ভোটের আগে আদিবাসীদের দলে টানতে মরিয়া দুই রাজনৈতিক দলই। পঞ্চায়েত ভোটে দেখা গিয়েছে, বিজেপি প্রার্থীরা অনেক সময় আদিবাসী সংগঠনের কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে গিয়েছেন। সেই দেখেই আদিবাসীদের নিজেদের দিকে টানতে চেষ্টা শুরু করে তৃণমূল।
এ দিন আদিবাসীদের আন্দোলনের ক্ষেত্রে প্রশাসনও কোনও ঝুঁকিই নেয়নি। পথ অবরোধ করা থাকলেও, তা তুলতে কাউকে বিশেষ করে উদ্যোদী হতে দেখা যায়নি। কিন্তু শহর জুড়ে পুলিশ ছিল যথেষ্টই।
এ দিন আদিবাসীদের ক্ষোভ ছিল, একই ব্যক্তির ওবিসি এবং তফসিলি জনজাতির শংসাপত্র রয়েছে। আবার ভুয়ো শংসাপত্র দেখিয়ে অনেকে সরকারি চাকরি করছেন বলেও অভিযোগ তুলে সরব হলেন আদিবাসীরা। তির ধনুক উঁচিয়ে বালুরঘাটে জেলা প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখালেন আদিবাসী সমন্বয় কমিটি।
এ দিন আন্দোলনকারীদের ভিড়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে থানা মোড় থেকে গোটা অফিসপাড়া এলাকার রাস্তাঘাট। আটকে পড়ে সমস্ত রকম যানবাহন থেকে স্কুলবাস। অশান্তি রোধে অবশ্য কয়েকশো পুলিশ এবং সিভিক ভলান্টিয়ারে ছয়লাপ হয়েছিল গোটা বালুরঘাট শহর। আদিবাসীদের বিক্ষোভ মিছিল শহর পরিক্রমা করে জেলা প্রশাসনিক ভবনের সামনে জমায়েত হতেই বিক্ষোভ মঞ্চ থেকে আদিবাসী নেতারা বক্তৃতা দিতে থাকেন।
আদিবাসী সমন্বয় কমিটির জেলা সম্পাদক মদন মুর্মু অভিযোগ করেন আদিবাসী অধ্যুষিত এ জেলার কয়েকটি ব্লকের মানুষ শংসাপত্রের ক্ষেত্রে বঞ্চিত হচ্ছেন। কোথাও ভুয়ো জনজাতি শংসাপত্র বানিয়ে সরকারি চাকরি করছেন।
তাঁরা অভিযোগ তোলেন, আদিবাসীদের জমি কারসাজি করে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। আর এই সব হচ্ছে একাংশ সরকারি আধিকারিকের অঙ্গুলি হেলনে। বালুরঘাটের এসডিও-কে অপসারণ সহ অবৈধ ভাবে নিয়োগ বাতিল করতে হবে বলে তিনি দাবি করেন। পরে অতিরিক্ত জেলাশাসকের কাছে তাঁরা স্মারকলিপি পেশ করে বিচার চান। প্রশাসন কর্তৃপক্ষ অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন।
এ দিন দুপুর থেকে শুরু হওয়া আদিবাসীদের ঘেরাও বিক্ষোভ সন্ধে অবধি চলে। দীর্ঘ সময় ধরে আটকে থাকে স্কুল পড়ুয়াদের গাড়ি। পুলিশে ছয়লাপ ছিল গোটা শহর। অথচ রাস্তা আটকে বন্ধ হয়ে পড়া পুরো যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শহরের অনেক বাসিন্দা।