মরণফাঁদ মেডিক্যাল কলেজ

চাকা ভাঙা বিপদ

বুধবারই ভাঙা ট্রলি থেকে এক রোগী পড়ে যান ও মারা যান বলে পরিবারের লোকজন অভিযোগ তুলেছিল। বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়ে দেখা গেল, চাকার অভাবে ভুগছে আরও অনেক কিছুই। ফলে বিপদের আশঙ্কা ঝুলে রয়েছে রোগীদের শিয়রে।

Advertisement

সৌমিত্র কুণ্ডু 

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৩৬
Share:

রোগীকে চাকা ভাঙা হুইলচেয়ারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। (উপরে) চাকা ভাঙা ট্রলি। দু’টি ছবিই তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।

জরুরি বিভাগে ট্রলি রাখা নেই। একটি ভাঙা ট্রলি পড়ে আছে একধারে।

Advertisement

একটু এগিয়ে দেখা পাওয়া গেল হুইলচেয়ারের। সেগুলিরও কয়েকটি সামনের চাকা ভাঙা।

বুধবারই ভাঙা ট্রলি থেকে এক রোগী পড়ে যান ও মারা যান বলে পরিবারের লোকজন অভিযোগ তুলেছিল। বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়ে দেখা গেল, চাকার অভাবে ভুগছে আরও অনেক কিছুই। ফলে বিপদের আশঙ্কা ঝুলে রয়েছে রোগীদের শিয়রে।

Advertisement

রোগীর আত্মীয়েরা বলছিলেন, বুধবার সন্ধ্যার ঘটনার অভিঘাতে একটা কাণ্ডই ঘটেছে। তা হল, ট্রলিগুলি উধাও হয়ে গিয়েছে। সরেন শীল, মিলন দাসদের মতো রোগীর আত্মীয়দের অভিযোগ, ট্রলি চাইলে হয় দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে, নয়তো কোনও জবাব মিলছে না।

এর ফল হচ্ছে মারাত্মক। রোগীর আত্মীয়েরাই জানাচ্ছেন, উপায়ন্তর না দেখে তাঁরা অনেক সময়ে টেনে নিচ্ছেন ভাঙা ট্রলিই। তাঁদের আরও অভিযোগ, ট্রলি যা-ও বা পাওয়া গেল, সেটা চালাবে কে? চাকা ভাঙা ট্রলির জন্য কিনা কে জানে, হাসপাতালের এমন কাউকে পাওয়া গেল না, যে রোগীকে এগিয়ে নিয়ে যাবে জরুরি বিভাগে বা সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে। উপায়ন্তর না পেয়ে শেষে হাত লাগাতে হচ্ছে আত্মীয়দেরই। ‘‘না হলে কতক্ষণ রোগীকে ফেলে রাখব?’’ প্রশ্ন করলেন এক রোগীর আত্মীয়।

বুধবার ট্রলি থেকে পড়ে যাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ, তিনি শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের অফিস সচিব অলোক কুণ্ডু। এ দিন রোগীর আত্মীয়েরা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘তার পরেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কি হুঁশ ফিরল?’’ হাসপাতাল সুপার কৌশিক সমাজদার বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা দেখা হবে। কোন স্বাস্থ্যকর্মীর ডিউটি ছিল, সে সব দেখা হচ্ছে।’’

শুধু কি চাকা ভাঙা, ঝুঁকি কিন্তু হরেকরকম। যেমন, করিডর ধরে নির্মাণ কাজ চলায় ট্রলিতে রোগী তুলে নিয়ে যাওয়ার সময়ে একটু অসতর্ক হলেই বিপদ। বেকায়দায় পড়ে চাকা ভাঙতে পারে, কাতও হয়ে যেতে পারে ট্রলি, বলছিলেন বিট্টু হাঁসদা, আরতি মণ্ডলদের মতো রোগীর আত্মীয়েরা।

অথচ ‘ট্রলি হাব’ চালু হয়েছিল। পরিচয়পত্র বা কোনও নথি রেখে হাব থেকে ট্রলি, হুইল চেয়ার নেওয়া যায় এখনও। ঘুরে দেখা গেল, সেখানেও পর্যাপ্ত ট্রলি নেই। হাসপাতালের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, অর্ধেকের বেশি ট্রলি ভাঙা বা অকেজো। কোনওটার চাকা নেই, কোনওটার পায়ের অর্ধেক হাওয়া। হুইল চেয়ারগুলোরও একই অবস্থা। বুধবারের দুর্ঘটনার পরে হাব থেকে ভাঙা ট্রলি সরানো শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ। জরুরি বিভাগ, ইউএসজি বিভাগে সিঁড়ির ঘরের কাছে, মেডিসিন বিভাগ, প্রসূতি বিভাগে ভাঙা ট্রলি পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে।

সুপারের দফতর সূত্রে দাবি, জরুরি বিভাগে বরাদ্দ ৬টি হলুদ ট্রলি। লাল এবং বাদামি রঙের ট্রলি মিলিয়ে ‘হাব’-এ ২৯টি ট্রলি থাকে। ৯ টি ট্রলি মেরামত করতে দেওয়া হয়েছে। অন্তত ৬টি ভাঙা। হুইল চেয়ার ১৫টি। তার ৮টি ভাঙা। অভিযোগ, স্টোরের মালপত্র নিতেও ট্রলি ব্যবহার হয়। হাসপাতাল সুপার বলেন, ‘‘ট্রলি নিয়ে যেতে স্বাস্থ্যকর্মীর অভাবও রয়েছে। তবে জরুরি বিভাগে এক জনকে রাখা হয়। ট্রলির সমস্যা মেটাতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন