প্রতীকী ছবি।
মেয়ে এখনও স্কুলের চৌকাঠ পেরোয়নি। এর মধ্যেই তার জন্য ‘পাত্র’ ঠিক করে ফেলেছিলেন বাবা। পঞ্চাশ বছর বয়সী সেই পাত্রের নিবাস উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদে। মেয়ের বাবাকে ৩০ হাজার টাকা দেবে বলে সে চুক্তিও করে নেয়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বিয়ের আসরে হাজির হয় পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে মালদহের মানিকচক থানার বহরমপুর গ্রামের ঘটনা। মেয়ের বাবা পলাতক। ‘পাত্র’ শ্রীঘরে। পুলিশের সন্দেহ, এই বিয়ের পিছনে ছিল মেয়ে পাচারের ছক।
এই সন্দেহ যে অমূলক নয়, সে কথা মানছেন পাচার দমন নিয়ে কাজ করেন এমন অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, মালদহ থেকে মোরাদাবাদ, নারী পাচারের খুব চেনা সড়ক। রাজ্য সরকার গঠিত টাস্ক ফোর্স শক্তিবাহিনীর সদস্য ঋষি কান্তের কথায়, ‘‘পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদে বিয়ের নাম করে মেয়ে পাচারের ঘটনা আকছারই ঘটছে। মালদহের মেয়েরাও বরাবরই এর লক্ষ্য হয়ে থাকে।’’ নারী পাচারের ঘটনায় দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের নাম প্রথম সারিতেই রয়েছে। তার মধ্যে মালদহ-মুর্শিদাবাদের মতো জেলা থেকে পাচারের হার খুবই বেশি।
মানিকচকের এই ঘটনা তারই অন্যতম উদাহরণ। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই নাবালিকা এলাকারই একটি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। তার বাবা ভিন রাজ্যে দিন মজুরি করেন। আংশিক মানসিক ভারসাম্যহীন মাকে নিয়ে ছাত্রী একাই থাকে বাড়িতে। অভিযোগ, মঙ্গলবার রাত ১০টা নাগাদ তার সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা অশোক আলির বিয়ে হচ্ছিল। পরিবারের লোকেরা গোপনে সেই কাজ সারছিলেন। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে অশোককে গ্রেফতার করে পুলিশ। ছাত্রীর বাবা পালিয়ে গেলেও তার মাকে আটক করে পুলিশ। যদিও জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
উত্তরপ্রদেশে কাজ করতে গিয়ে ছাত্রীর বাবার সঙ্গে পরিচয় হয় অশোকের। মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিলে তাঁকে নগদ ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হবে বলে জানায় অশোক। সেই প্রস্তাবে রাজিও হয়ে যান ছাত্রীর বাবা। সেই মতো সোমবার উত্তরপ্রদেশ থেকে মানিকচকে আসে অশোক। শুরু হয়ে যায় বিয়ের প্রস্তুতি। এই গোটা ঘটনায় একটি চক্র জড়িত রয়েছে বলে অনুমান পুলিশের। বুধবার ধৃতকে জেলা আদালতে হাজির করিয়ে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। তাকে জেরা করা চলছে। ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করে পাঠানো হয়েছে হোমে। সে জানিয়েছে, এই বিয়েতে তার আপত্তি ছিল। পরিবারের লোকেরাই জোর করে বিয়ে দিচ্ছিল। পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, ‘‘ঘটনার সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’