খুলে দেওয়া হচ্ছে শিকল। ছবি: রাজকুমার মোদক
অবশেষে বন্দিদশা ঘুচল। শেকলমুক্ত হলেন ধূপগুড়ির চামটিমুখি গ্রামের সেই দুই ভাই।
২৬ বছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন দুই ভাইকে শেকলবন্দি রাখার খবর রবিবার আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হতেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। রবিবার তাঁদের বাড়িতে যান ধূপগুড়ির বিডিও ও দার্জিলিং জেলা লিগাল ফোরামের সদস্যরা। দুই ভাইয়ের কোমর থেকে শিকল খুলে নেওয়ার নির্দেশ দেন তাঁদের বাবাকে। তবে তাঁদের উদ্ধার করে জলপাইগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য ধূপগুড়ির বিডিও বানারহাট থানা ও জলপাইগুড়ির পুলিশের উপর মহলে ফোন করেও সহযোগিতা পায়নি বলে অভিযোগ। পরে আত্মীয়দের সাহায্যে বিডিও ও লিগাল ফোরামের সদস্যরা দুই ভাইকে জলপাইগুড়ি নিয়ে যান।
দার্জিলিং জেলা লিগাল ফোরামের সম্পাদক অমিত সরকার বলেন, “রবিবার পত্রিকায় দুই ভাইকে শিকল বন্দি করে রাখার খবর দেখে চমকে উঠি। আইনে কোনভাবেই কাউকে এক ঘণ্টার জন্যেও বেঁধে রাখা যায় না। তাই সোমবার ধূপগুড়ির বিডিওকে নিয়ে ওই বাড়িতে এসে দুই মানসিক ভারসাম্যহীন ভাইকে শিকল মুক্ত করলাম।”
বানারহাট থানার আই সি সুদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “ মুখ্যমন্ত্রীর সফরের জন্য পুলিশ ব্যস্ত থাকাতে যেতে পারেনি। তাছাড়া থানায় উন্মাদ রাখার কোনও জায়গা নেই । পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে কোথায় রাখবে ? তবে যাঁরা উদ্ধার করেছে তাদের ধন্যবাদ।’’ ধূপগুড়ির বিডিও শুভঙ্কর রায় জানান, “শিকল বন্দি মানসিক ভারসাম্যহীন ভাইয়ের উদ্ধার করা হয়েছে। তারপর আইনি ব্যবস্থা করে তাঁদের কোথাও রেখে চিকিৎসা করা হবে।”
শিকল বন্দি অবস্থা থেকে মেঝভাই সাহানুর আলম ও বড় ভাই আব্দুল হাকিমকে মুক্ত করে প্রশাসন ব্যবস্থা নেওয়ায় খুশি তাঁদের বাবা আয়ুব আলি ও মা নুরজাহান বেগম। তাঁরা বলেন, “দীর্ঘ ২৬ বছরের যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেয়ে মনে হচ্ছে বুকের উপর থেকে একটা জগদ্দল পাথর নেমে গেল। আমরা খুশি। এখন ছেলে দু’টি সুস্থ হলে আরও বেশি খুশি হব।”
খুশি শুধু বাবা মা-ই নয়। খুশি গ্রামের সবাই। পাশের বাড়ির যুবক ওয়াজেদ আলি বলেন, “ শেষ পর্যন্ত প্রশাসন ব্যবস্থা নেওয়ায় আমরা গ্রামবাসীরা খুশি। এখন ওদের সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় থাকব।”