মোট মৃত ৪, আশঙ্কাজনক ২ কিশোর ও ৪ মহিলা ভর্তি মেডিক্যালে

পারিবারিক বিবাদ, যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে জীবন্ত দগ্ধ ২ শিশু

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতেরা হলেন বিকাশ মণ্ডল (৩৫) ও গোবিন্দ মণ্ডল (৩০), গোবিন্দের শিশুকন্যা শুভশ্রী (৩) ও প্রিয়া (২)। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গোবিন্দবাবুর স্ত্রী রাখী, বিকাশের স্ত্রী ববিতা এবং দুই ছেলে বিশাল ও অলোক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মানিকচক শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৫:১২
Share:

পরিণাম: পুড়ে খাক বাড়ি। সোমবার মানিকচকে। নিজস্ব চিত্র

আগুনে পুড়ে মৃত্যু হল একই পরিবারের দুই শিশু-সহ চার জনের। আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুই কিশোর এবং চার জন মহিলা ভর্তি রয়েছেন মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। রবিবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে মালদহের মানিকচক থানার ডোমহাট গ্রামে।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতেরা হলেন বিকাশ মণ্ডল (৩৫) ও গোবিন্দ মণ্ডল (৩০), গোবিন্দের শিশুকন্যা শুভশ্রী (৩) ও প্রিয়া (২)। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গোবিন্দবাবুর স্ত্রী রাখী, বিকাশের স্ত্রী ববিতা এবং দুই ছেলে বিশাল ও অলোক। তারা মানিকচক হাইস্কুলের নবম ও ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। চিকিৎসকেরা জখমদের কলকাতা নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। মালদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) দীপক সরকার বলেন, ‘‘ঘটনাস্থল থেকে খালি পেট্রলের জার উদ্ধার হয়েছে। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নাম জড়িয়েছে বিকাশের ভাই মাখন মণ্ডলের। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পর থেকে মাখন ফেরার। তাঁর স্ত্রীকে আটক করা হয়েছে। অভিযোগ, পেশায় এনভিএফ কর্মী গেদু মণ্ডল বছর দশেক আগে চাকরিরত অবস্থায় মারা যান। তাঁর চার ছেলের মধ্যে বাবার চাকরি পান ছোটছেলে গোবিন্দ। তিনি মালদহ জিআরপিতে কর্তব্যরত ছিলেন। ওই চাকরি কে পাবেন তা নিয়ে দাদা মাখনের সঙ্গে তাঁর বিরোধ ছিল। পরবর্তীকালে মাখন সিভিক ভলান্টিয়ারের চাকরি পান। তিনি মানিকচক থানায় কর্তব্যরত। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বছরখানেক আগে মাখনের স্ত্রী পারিবারিক অশান্তির কারণে বাপের বাড়িতে চলে যান। সেই সময় গোবিন্দ বৌদিকে বুঝিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসেন। এটা নিয়েও গোবিন্দ এবং বিকাশের সঙ্গে মাখনের বিরোধ বাড়ে। গোবিন্দকে সমর্থন করেন বিকাশ। গোবিন্দের শাশুড়ি শেফালি মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘জামাইয়ের চাকরি নিয়ে হিংসা তাকে হিংসা করত মাখন। মাখন জামাইয়ের সঙ্গে নিজের স্ত্রীর সম্পর্ক রয়েছে বলে সন্দেহও করত। মাখনই বাড়িতে আগুন লাগিয়ে সকলকে খুন করল।’’

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওইদিন রাত আড়াইটে নাগাদ গোবিন্দ এবং বিকাশের ঘরে আগুন লাগে। চিৎকার শুনে গ্রামবাসীরা ছুটে গিয়ে দেখেন, বাইরে থেকে ঘরগুলোর তালাবন্ধ। বাসিন্দারা দরজা ভেঙে দুই পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করে নিয়ে যান মানিকচক হাসপাতালে। সেখানেই মৃত্যু হয় গোবিন্দের ছোটমেয়ে প্রিয়ার। মালদহ মেডিক্যাল কলেজে মৃত্যু হয় অপর মেয়ে শুভশ্রীর। সোমবার দুপুরে মৃত্যু হয় গোবিন্দ ও বিকাশের। পরপর মৃত্যুতে হাসপাতালেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁদের আত্মীয়-পরিজনেরা। তাঁদের দাবি, পরিকল্পিত ভাবে গোবিন্দ ও বিকাশের শোওয়ার ঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এ দিন হাসপাতালে যান মালদহ জেলা সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল ও মহকুমা শাসক (সদর) পার্থ চক্রবর্তী। ঘটনাস্থলে যান ডিএসপি বিপুল মজুমদার-সহ বিশাল পুলিশবাহিনী। পুলিশের ধারণা, ঘরগুলোয় ইটের গাঁথনি থাকলেও মাথার উপর ছাদের টালি খুলে ঘরের ভিতরে পেট্রল ছিটিয়ে আগুন ধরানো হয়। দু’টি ঘরের সমস্ত কিছু পড়ে ছাই হয়ে যায়। দমকল কর্মীরা গিয়ে আগুন নেভায়। সভাধিপতি বলেন, “খুবই দুঃখজনক ঘটনা। ওই পরিবারের পাশে রয়েছি। চিকিৎসার যাবতীয় তদারকি করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন