Death

চিকিৎসা গাফিলতিতে দুই প্রসূতির মৃত্যু দার্জিলিং হাসপাতালে? সাসপেন্ড দুই ডাক্তার, বদলি সুপার

দার্জিলিং জেলা হাসপাতালে চিকিৎসার গাফিলতিতে এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে মঙ্গলবার। ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রসূতির পরিবার পরিজন ওই হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

দার্জিলিং শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৩ ২২:৫৭
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

একই দিনে দু’টি মর্মান্তিক মৃত্যু। আর তাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভে উত্তাল দার্জিলিং। দিনভর দফায় দফায় হল প্রতিবাদ। অবশেষে চাপে পড়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে চিকিৎসার গাফিলতিতে জেলা হাসপাতালের দু’জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করা হল। বদলির নির্দেশ দেওয়া হল দার্জিলিং জেলা হাসপাতালের সুপারকে।

Advertisement

দার্জিলিং জেলা হাসপাতালে চিকিৎসার গাফিলতিতে এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে মঙ্গলবার। ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রসূতির পরিবার পরিজন ওই হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। জানা যায় দার্জিলিংয়ের রেলিং কাইজাল এলাকার ওই প্রসূতিকে ১৬ নভেম্বর প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। পরিবারের পক্ষ থেকে গীতা ছেত্রী বলেন, ‘‘ভর্তি করানোর পর থেকে অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে দিদির। চিকিৎসককে বার বার সিজার করার অনুরোধও করেছি। কিন্তু চিকিৎসক অনিয়মিত আসেন৷ রোগী দেখে তিনি বার বার বলেন, ‘সাধারণ ভাবেই প্রসব হবে। সিজারের প্রয়োজন নেই’। সোমবার রাতে প্রচণ্ড রক্তপাত হওয়ার কারণে বাধ্য হয়ে চিকিৎসক দিদিকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গিয়ে সিজার করান ৷ মঙ্গলবার সকালে আবার অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয় দিদিকে। কিছুক্ষণ পর এসেই দিদির মৃত্যু সংবাদ দেন তাঁরা৷’’

গীতার অভিযোগ— ‘‘শুধু মাত্র চিকিৎসার গাফিলতিতে দিদিকে হারাতে হল।’’ মঙ্গলবার রাতে ফের আরও একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে৷ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলার সঠিক সময়ে প্রসব না হওয়ায় তার গর্ভস্থ সন্তান নষ্ট হয়ে যায় বলে অভিযোগ। মঙ্গলবারই দার্জিলিং জেলা হাসপাতালে পৌঁছেছিলেন জিটিএ ভাইস চেয়ারম্যান রাজেশ চৌহান, দার্জিলিং পুরসভার চেয়ারম্যান দীপেন ঠাকুরি এবং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তুলসি প্রামাণিক। মৃতদেহ নিয়ে পরিবারের বিক্ষোভ চলতে থাকে মঙ্গলবার থেকেই। অভিযুক্ত চিকিৎসকদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা হাসপাতাল থেকে দেহ নিতে অস্বীকার করেন৷

Advertisement

ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবার দার্জিলিং জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের অফিসে বৈঠক বসে৷ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জিটিএর সভাসদরা, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ-সহ মৃতদের পরিবারের সদস্যেরা। প্রায় চার ঘন্টা বৈঠক শেষে দু’জন চিকিৎসক (যাঁরা এই ঘটনার জন্য দায়ী বলে চিহ্নিত) তাঁদের সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি, হাসপাতাল সুপারকে দ্রুত বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়। পুরো ঘটনার সরজমিনে তদন্তের জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনেরও সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে৷ প্রায় ৩১ ঘণ্টা পর পরিবার দেহ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

জিটিএ স্বাস্থ্য আধিকারিক সামদেন ডুকপা জানান, ‘‘চিকিৎসকের গাফলতিতেই আজ এই ঘটনা। দার্জিলিং জেলা হাসপাতালে আজকের তারিখে চিকিৎসা ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে। যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তাদের রিপোর্ট দেওয়ার পরেই বাকি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে দার্জিলিং জেলা হাসপাতালের পরিকাঠামো পুনরায় গড়ে তোলা হবে। পাশাপাশি, জিটিএর অধীন এলাকাগুলিতে প্রসূতি মায়েদের জন্য প্রতিটি জায়গায় বিশেষ ব্যাবস্থা গড়ে তোলা হবে৷’’

মৃতার পরিবারের পক্ষ থেকে পরবেশকুমার ছেত্রী জানান, ‘‘আমরা আজ দেহ নিয়ে যাচ্ছি। তবে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। এর শেষ দেখে ছাড়ব। এই ঘটনা আজকে আমার পরিবারের সঙ্গে হয়েছে আগামীতে যে অন্য কারও সঙ্গে হবে না, তার কোনও মানে নেই। কাজেই এই বিক্ষোভ। এই আন্দোলন সমগ্র পাহাড়বাসীর জন্য। জেলা হাসপাতালের ডাক্তাররা চেম্বার করেই সময় পান না। হাসপাতালে রোগী দেখবেন কখন।’’

অন্য দিকে, জিটিএর রেলিং কাইজালে সমষ্টির সভাসদ সতীশ পোখরেল অভিযোগ করেন, ‘‘হাসপাতাল সুপার দিনভর অপ্রীতিকর অবস্থায় থাকেন। হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা ভেঙে পড়েছে। কোনও চিকিৎসক হাসপাতালে আসেন না। তাঁরা প্রাইভেট চেম্বার করতে ব্যস্ত।’’ একই অভিযোগ দার্জিলিং পুরসভার চেয়ারম্যান দীপেনের। তিনি বলেন, ‘‘জেলা হাসপাতালের চিকিৎসার খামখেয়ালিপনা নিয়ে আমাদের কাছে মাঝে মধ্যেই অভিযোগ আসে। চিকিৎসকরা হাসপাতালে চিকিৎসার বদলে প্রাইভেট চেম্বারেই বেশি নজর দিচ্ছেন বলে অনেকেই জানিয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন