চাকরি ছেড়ে বিকল্প চাষে সম্মানিত দুই কৃষক

মঙ্গলবার বর্ধমানে আয়োজিত মাটি উৎসবে মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে তাঁরা ‘কৃষক সম্মান’ পুরস্কার নেন। বুধবার তাঁরা জেলায় ফেরেন। জেলা উদ্যানপালন দফতরে তাঁদের ফুলের তোড়া দিয়ে, মিষ্টিমুখ করিয়ে অভিনন্দন জানান হয়।

Advertisement

অরিন্দম সাহা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৪
Share:

অভিনন্দন: উদ্যানপালন দফতরে মৃদুল ও আকরামুল। নিজস্ব চিত্র

এক জন স্নাতক হওয়ার পর চাকরির অপেক্ষায় বসে না থেকে কৃষিকাজে ঝুঁকেছেন। অন্য জনের পেশা ছিল গাড়ি মেরামত। সেই কাজ হেলায় ছেড়ে দিয়ে স্বচ্ছলতার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে চাষাবাদ শুরু করেন। কয়েক বছরের মধ্যে শুধু স্বচ্ছলতার মুখ দেখাই নয়, বিকল্প চাষেও এলাকায় নজির তৈরি করেছেন তাঁরা। ফল, ফুল, জলজ আনাজ চাষে এমনই নজরকাড়া সাফল্যের স্বীকৃতি পেলেন কোচবিহারের বাসিন্দা ওই দুই কৃষক মৃদুল ঘোষ ও আকরামুল হক।

Advertisement

মঙ্গলবার বর্ধমানে আয়োজিত মাটি উৎসবে মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে তাঁরা ‘কৃষক সম্মান’ পুরস্কার নেন। বুধবার তাঁরা জেলায় ফেরেন। জেলা উদ্যানপালন দফতরে তাঁদের ফুলের তোড়া দিয়ে, মিষ্টিমুখ করিয়ে অভিনন্দন জানান হয়।

উদ্যানপালন দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, মৃদুলবাবুর বাড়ি তুফানগঞ্জ মহকুমার নাকারখানায়। ২০০৯ সালে বক্সিরহাট কলেজ থেকে স্নাতক হন তিনি। তার পরে চাকরির চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কাজ না মেলায় অপেক্ষায় বসে না থেকে অন্য রকম চিন্তাভাবনা শুরু করেন। কৃষিমেলায় বাউ কুলের চাষ সম্পর্কে জানতে পারেন। বছর সাতেক আগে পরিবারের গতানুগতিক চাষের ধারণা বদলে গড়েন দেড় বিঘার কুল বাগান। পর্যায়ক্রমে সাড়ে তিন বিঘার পেয়ারা উদ্যান থেকে পলি হাউসে জলজ আনাজ থেকে জারবেরা, ক্যাপসিকামের চাষেও নজর কেড়েছেন তিনি। ফি মাসে গড়ে ২০-২৫ হাজার টাকা আয় হয়। মৃদুলবাবু বলেন, “এখন আর চাকরি না পেলেও চলে যাবে।”

Advertisement

দিনহাটার নাগরেরবাড়ির বাসিন্দা আকরামুল অবশ্য আগে গাড়ি মেরামতের কাজ করতেন। তাতে সংসারের আর্থিক খরচ জোগাড়েই সমস্যা হচ্ছিল। পৈতৃক জমিতে যৌথ ভাবে ধান, আনাজ চাষ হতো। তাতে বাজারে দাম ঠিকঠাক মিলত না। বিকল্পের সন্ধানেই আপেল, বাউ কুল, পেয়ারা, আম, লিচু মিলে ছয় বিঘার মিশ্র বাগান তৈরি করেছেন। পলি হাউসে করছেন অসময়ের আনাজ। ধনেপাতা, পালং শাক, বটবটি, লাউ, জলজ ফুলকপি ওই তালিকায় রয়েছে। আকরামুল বলেন, “সংসার এখন ভাল ভাবেই চলছে।” তাঁরা জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কারপ্রাপ্তি, তার সঙ্গে এক মঞ্চে বসার সুযোগ বড় প্রাপ্তি। উদ্যান পালন দফতরের কোচবিহার জেলা আধিকারিক খুরশিদ আলম বলেন, “নিজেদের এলাকায় বিকল্প চাষে দিশা দেখিয়েছেন তাঁরা। অন্যরাও ফুল, ফল চাষে উৎসাহ পেয়েছেন।” পুরস্কারপ্রাপ্রকদের অভিনন্দন জানিয়েছেন মন্ত্রী থেকে প্রশাসনের কর্তারাও। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “জেলায় কৃষির অগ্রগতি, কৃষকদের সাফল্যের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।” জেলাশাসক কৌশিক সাহা বলেন, “সাফল্য সত্যিই প্রশংসনীয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন