পরপর দু’দিনে মৃত্যু দুই বোনের

বিজয়বাবুর বড় মেয়ে সুস্মিতা বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিল। শনিবার তাকে মেখলিগঞ্জ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ভর্তির পরামর্শ দেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, হার্টের সমস্যায় ভুগছিল সে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, পরিবারের লোকজন ভর্তি না করে তাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যান। ওইদিন বিকেলেই মৃত্যু হয় সুস্মিতার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেখলিগঞ্জ শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৮ ০৮:৪০
Share:

চিকিৎসাধীন: হাসপাতালে ভর্তি শিশুরা। নিজস্ব চিত্র

পর পর দু’দিনে মারা গেল দুই বোন। শনিবার বড় বোনের মৃত্যু হয়েছিল। রবিবার মৃত্যু হয় ছোট বোনের। ঘটনাটি মেখলিগঞ্জ পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সরকার পাড়ার। বড় বোনের নাম সুস্মিতা বর্মন (১৬), ছোট বোনের নাম রূপালি বর্মন (১২)। একই পরিবারের আরও তিন শিশু হাসপাতালে ভর্তি।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ৯ ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিজয় বর্মন দিনমজুর। ছ’মাস আগে তাঁর বাবা মারা যান। বর্তমানে মা, স্ত্রী, চার মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে তাঁর সংসার। প্রতিদিন কাজ না মেলায় তাঁদের কষ্টে দিন চলে বলেও জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা। বিজয়বাবুর বড় মেয়ে সুস্মিতা বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিল। শনিবার তাকে মেখলিগঞ্জ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ভর্তির পরামর্শ দেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, হার্টের সমস্যায় ভুগছিল সে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, পরিবারের লোকজন ভর্তি না করে তাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যান। ওইদিন বিকেলেই মৃত্যু হয় সুস্মিতার।

এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই রবিবার সকালে অসুস্থ হয়ে পড়ে বিজয় বর্মনের আর এক মেয়ে রূপালি। তাকেও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু একইভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ভর্তি না করিয়ে তাকে বাড়ি নিয়ে আসেন পরিবারের লোকজন। এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ বাড়িতেই মৃত্যু হয় রূপালির। তাদের বাকি দুই বোন ও এক ভাই রয়েছে। তারাও অসুস্থতা বোধ করছিল। এদিন তাদেরও মেখলিগঞ্জ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এখন হাসপাতালে ভর্তি কৃষ্ণা বর্মন (১৪) , সোনালি বর্মন (৮) ও শুভজিৎ বর্মন (৫)। হাসপাতাল সূত্রেই জানা গিয়েছে, এই তিনজনের অসুস্থতার কারণ জানতে নানা পরীক্ষা করানো হচ্ছে। মেখলিগঞ্জ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার অভিজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘‘তিনি বাইরে রয়েছেন। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জানাবেন।’’

Advertisement

এলাকার বাসিন্দা গুরুদাস দাস, শিবশঙ্কর রায়, শ্যামল বর্মন, রুপু বর্মনেরা জানান, পরিবারটি খুবই গরিব। কোনও কোনওদিন অর্ধাহারেও দিন কাটাতে হয় তাদের। সরকারি কোনও সুযোগ সুবিধেও তারা পায়নি বলে অভিযোগ। ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর দীপক রায়ের দাবি, চিকিৎসা পরিষেবা না নিয়ে ঝাড়ফুঁক-সহ অন্য বিষয়ের পরিবারটি নির্ভরশীল বলে তাঁর কাছে খবর আছে। তবে দুই বোনের মৃত্যুর ঘটনা দুঃখজনক। প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা পরেশ চন্দ্র অধিকারী বলেন, এই ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।

তৃণমূল পরিচালিত মেখলিগঞ্জ পুরসভার পুরপ্রধান মিঠু সিংহ সরকার বলেন, ‘‘প্রতিটি ওয়ার্ডে নিয়মিত স্বাস্থ্য ও অন্য বিষয় নিয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হয়। তবে এই বিষয়টি আলাদাভাবেও খোজ নিয়ে দেখব।’’ মেখলিগঞ্জের বিডিও বিরূপাক্ষ মিত্র বলেন, ‘‘ওই পরিবারের সম্পর্কে কেউ জানায়নি। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন