ধর্মের গণ্ডি ভুলে এক মণ্ডপে প্রার্থনা-দোয়া

‘‘এক মণ্ডপেই মা গঙ্গার পুজো হয়। তার পাশেই দোয়া চাওয়া হয় তোর্সা পীরের। আমারা বিষয়টিকে কখনও আলাদা করে দেখিনি।’’

Advertisement

নারায়ণ দে

আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:১৭
Share:

সম্প্রীতি: আলিপুরদুয়ার শীলবাড়ি হাট পূর্ব ঘাটপাড়ে তোর্সা পিরবাবা ও গঙ্গাপুজো। নিজস্ব চিত্র

আলিপুরদুয়ার জেলার শীলবাড়ি হাট পূর্ব ঘাটপাড়ে সম্প্রীতির উপাসনা চলে আসছে গত ২৬ বছর ধরে। একই মণ্ডপে পূজিত হয়ে আসছেন মা গঙ্গা ও তোর্সা পির বাবা। কালীপুজোর পরের দিন তোর্সা নদীর শীলতোর্সা ঘাটে হিন্দুরা গঙ্গা পুজো করেন। একই দিনে, কার্যত এক সময়ে, একই মণ্ডপ থেকে তোর্সা নদীকে, তোর্সা পিরবাবা রূপে তাঁর কাছে দোয়া চান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজন। পুজোপর্ব সাঙ্গ হলে এক সঙ্গে চলে খাওয়াদাওয়া।

Advertisement

স্থানীয় যুব ইউনিট ক্লাবের সম্পাদক মজিবুল রহমান জানান, এলাকায় প্রায় পাঁচশো মানুষ পেটের টানে তোর্সা নদী থেকে পাথর তোলেন। সে জন্য এখানকার হিন্দু বাসিন্দারা তোর্সা নদীকে মা গঙ্গা রূপে পুজো করেন। আর সংখ্যালঘু মানুষেরা নদীকে তোর্সা পীরবাবা মেনে তাঁর কাছে দোয়া চান। যাতে এলাকায় সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি বজায় থাকে।

নদীতে যাতে কোনও রকম বিপদ না হয়, সে জন্য। জীবন, জীবিকা আর সংসারের মঙ্গলের জন্য সাধারণের প্রার্থনায় ধর্মের এখানে কোনও গণ্ডি নেই।

Advertisement

গত আট বছর ধরে গঙ্গা পুজো করছেন সজল বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘এক মণ্ডপেই মা গঙ্গার পুজো হয়। তার পাশেই দোয়া চাওয়া হয় তোর্সা পীরের। আমারা বিষয়টিকে কখনও আলাদা করে দেখিনি।’’ সফিদুল রহমান বলেন, ‘‘দুধ, কলা দিয়ে সিন্নি তৈরি করে তোর্সা নদীতে উৎসর্গ করে দোয়া চাওয়া হয় সকলের জন্য।’’

পুজো কমিটির সভাপতি মহাদেব দে জানান, ওই এলাকায় বহু বছর ধরেই মানুষ একে অন্যের সুখদুঃখের সঙ্গী। বন্ধুত্বের শিকড় অনেক গভীরে। ধর্ম তাতে কখনও ভেদাভেদ আনতে পারেনি। তাই নিজেদের আচার, বিধি মেনেও নিজেদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান একই মণ্ডপে করতে পারেন। স্থানীয় বাসিন্দা মজিবুল রহমান বলেন, ‘‘গঙ্গা পুজো ও তোর্সা পির বাবার দোয়াকে ঘিরে এখানে সাধারণ মানুষের উচ্ছ্বাস থাকে দেখার মতো। গত কয়েক বছর ধরে এখানে পুজোর সঙ্গে মেলা, যাত্রাপালা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয়। এ বছর মেলা ও যাত্রা অনুষ্ঠান চলবে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন