জখম ডিম্পল রায়। রবিবার রাতের ছবি।
গত শুক্রবার প্রকাশ্য কর্মিসভায় দলীয় নেতাদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। পরে তিনি আলাদা আলাদা ভাবে একাধিক নেতার সঙ্গে কথাও বলেন। তাতে কাজের কাজ কিছু হল না। সুব্রতবাবু ফিরে যাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফের তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠল কোচবিহার। কোথাও তৃণমূল নেতাকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে তো কোথাও হামলা থেকে শুরু করে পার্টি অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ। বাম আমলের প্রতাপশালী, অগাধ সম্পত্তির মালিক কয়েক জন নেতার কী হাল হয়েছিল, সেই প্রসঙ্গ তুলে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন সুব্রতবাবু। দলেরই একটি অংশের দাবি, ওই বার্তায় যে বিশেষ কেউ কান দেয়নি, তা পরপর গোলমালের ঘটনা থেকেই পরিষ্কার। তাঁদের আশঙ্কা, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আসার আগে নিজেদের বেশি করে জাহির করতে গিয়ে না এই গোলমাল আরও বাড়িয়ে তোলেন যুযুধান দুই গোষ্ঠী!
তৃণমূলের একটি অংশের দাবি, মূলত টাকা ও ক্ষমতা দেখানোর লড়াইয়ের নেমেছে যুযুধান দুই পক্ষ। যদিও এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি বলেন, “আসলে যুব সংগঠনের মধ্যে বিজেপির কিছু দুষ্কৃতী ঢুকে পড়েছে। তারাই নানা জায়গায় গণ্ডগোল করার চেষ্টা করছে। দল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।” যুব তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় অবশ্য সরাসরি যারা অপরাধমূলক কাজ করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন। তিনি বলেন, “যুব তৃণমূল দলেরই একটি শাখা সংগঠন। যারা দুষ্কর্ম করছে, তারা যে দল বা সংগঠনেরই হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।” বিজেপির কোচবিহার জেলা সভানেত্রী মালতী রাভা বলেন, “তৃণমূলের নেতারা সাত বছরের মধ্যে ফুলেফেঁপে উঠেছেন। নেতারা মাঝে মাঝে কিছু ভাল কথার বলার চেষ্টা করেন। সেটাও যে লোক দেখানো, তা বুঝতে আর বাকি নেই কারও।”
গত ১৪ ডিসেম্বর কোচবিহার ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কর্মিসভায় উপস্থিত ছিলেন সুব্রতবাবু। ওই দিন রাতে তিনি কোচবিহার সার্কিট হাউসে ছিলেন। শনিবার কলকাতায় ফিরে যান। তার আগেই তিনি দ্বন্দ্ব কমাতে বার্তা দেন।
রবিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ দিনহাটার পেটলার কাছে যুব নেতা অজয় রায়ের গাড়ির উপর হামলা হয়। ওই রাতেই তুফানগঞ্জে যুব তৃণমূলের পার্টি অফিসে ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে যুব তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ওই রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ দিনহাটার শালমারায় অঞ্চল তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সদস্য ডিম্পল রায়ের উপরে হামলার ঘটনা ঘটে। তাঁর গাড়ি লক্ষ করে বোমা ও গুলি ছোড়ার পর তাঁর গাড়ি থেকে নামিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয় বলে অভিযোগ। তৃণমূল সূত্রের খবর, ডিম্পল ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে তৃণমূলে যোগ দেন। এখন তিনি পঞ্চায়েত সদস্য।
বিরোধীদের অভিযোগ, ডিম্পল-সহ ওই এলাকার একাধিক শাসক দলের নেতার এক সময় কিছুই ছিল না। অল্প সময়ের মধ্যে তাঁরা গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়ে উঠেছেন। গ্রাম পঞ্চায়েত ক্ষমতা দখল করে সরকারি টাকা তছরূপ এবং এলাকায় নানা অবৈধ কারবারের ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়েই তাঁদের বিরোধ চরমে ওঠে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য এমন অভিযোগ ঠিক নয় বলে দাবি করেন। দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ বলেন, “বিরোধীদের অভিযোগ ঠিক নয়। পুলিশের তদন্তেই সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।”