পাহাড়ে গোলমালের সময়ে নিযুক্ত পুলিশ অফিসারদের সমতলে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তা দেখে আইনজীবীদের অনেকেরই বক্তব্য, পাহাড় যদি এখন ঠান্ডা হয়ে গিয়ে থাকে, তা হলে সেখানকার ফৌজদারি মামলাগুলিও পাহাড়েই ফেরত পাঠানো হোক। এর জন্য প্রয়োজনে রাজ্য সরকার এবং কলকাতা হাইকোর্টের হস্তক্ষেপও চাইছেন আইনজীবীদের একাংশ।
রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক অবশ্য বলেছেন, ‘‘বিষয়টি পুরোপুরি উচ্চ ন্যায়ালয়ের আওতাধীন। রাজ্যের এখানে কোনও ভূমিকা নেই।’’ আদালতের একটি সূত্রের দাবি, সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে জেলা বিচারবিভাগ থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পরেই হাইকোর্ট বিষয়টি নিয়ে ভাববে।
গত জুন মাসে পাহাড়ে গোলমাল শুরুর পরে সেখানকার আদালতে ধৃতদের হাজির করানো নিয়ে সমস্যায় পড়ে পুলিশ। তখন রাজ্যের তরফে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। তা হাইকোর্টের গোচরে আসে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে তখন থেকেই পাহাড়ের সব থানার ফৌজদারি মামলায় ধৃতদের শিলিগুড়ি আদালতে হাজির করানো শুরু হয়। এতে শিলিগুড়ি আদালতের উপরে চাপ কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
সম্প্রতি পাহাড়ে গোলমালের সময়ে মোতায়েন দুই আইপিএস অফিসার এডিজি সিদ্ধিনাথ গুপ্ত ও ডিআইজি হুমায়ন কবীরকে সম্প্রতি কলকাতায় ফিরিয়ে নেয় সরকার। পুলিশ সূত্রের দাবি, পাহাড় শান্ত হওয়ায় আরও অফিসারকে ফেরানো হবে। তখনই আইনজীবীদের পক্ষ থেকে কয়েক জন দার্জিলিং, কার্শিয়াং ও শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের অন্দরে আলোচনা শুরু করেন। তাঁদের মতে, পাহাড়ের মামলা সমতলে চলায় মূলত দুটো সমস্যা হচ্ছে। প্রথমত, শিলিগুড়ি আদালতে ৯ জন বিচারক রয়েছেন। সেখানে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের থানাগুলি থেকে রোজ গড়ে ২৫-৩০ জন ধৃতকে হাজির করানো হয়। পাহাড় থেকেও সমসংখ্যককে পাঠানো হয়। ফলে, শিলিগুড়ি আদালতের উপরে চাপ তৈরি হয়েছে। দ্বিতীয়ত, পাহাড়ে ধৃতদের সমতলের জেলেই রাখা হচ্ছে। ফলে, শিলিগুড়ি জেলের অনেক বন্দিকে জলপাইগুড়ি সেন্ট্রাল জেলেও পাঠানো হয়েছে। বিচার পর্বে সেই ধৃতদের সময় মতো হাজির করাতে সমস্যা হচ্ছে।
শিলিগুড়ি আদালতে বিচারাধীন একটি মাদক মামলাই যেমন। ওই মামলায় ধৃতের আইনজীবী কাকলি বিশ্বাস বলেন, ‘‘বিচারক বারবার ধৃতকে হাজির করাতে বললেও জলপাইগুড়ি সেন্ট্রাল জেল জানিয়েছে, নিরাপত্তা দেওয়ার মতো পুলিশ নেই। শিলিগুড়িতে থাকলে এটা হতো না। সব শুনে বিচারক ওঁকে শিলিগুড়ি জেলে রাখার নির্দেশ দেন।’’ ওই মামলায় কেন্দ্রীয় রাজস্ব গোয়েন্দা মন্ত্রকের আইনজীবী রতন বণিক জানান, পাহাড় যখন শান্ত, তখন বিচার প্রক্রিয়াও স্বাভাবিক ছন্দে ফেরানো হবে। শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তথা সরকারি আইনজীবী পীযূষ কান্তি ঘোষ বলেন, ‘‘আইনজীবীরা সমস্যার কথা এখনও অ্যাসোসিয়েশনের কাছে জানাননি। কেউ সমস্যার কথা জানালে নিশ্চয়ই কথা হবে। তবে বিষয়টি উচ্চ আদালতের বিচার্য।’’