সাহেব হাত বাড়াতেই খিলখিল হাসি

আমেরিকার কনসাল জেনারেলকে ওরা চেনে না। কোট-টাই পরা এক জন সাহেব ওদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন দেখে প্রথমে কিছু ক্ষণ হাসি সামলাতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল নিউ জলপাইগুড়ি (এনজেপি) স্টেশন লাগোয়া একটি হোমের আবাসিক কচিকাঁচারা।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:২৫
Share:

এনজেপি স্টেশন চত্বরে কচিকাঁচাদের সঙ্গে আমেরিকার কনসাল জেনারেল ক্রেগ হল। — বিশ্বরূপ বসাক

আমেরিকার কনসাল জেনারেলকে ওরা চেনে না। কোট-টাই পরা এক জন সাহেব ওদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন দেখে প্রথমে কিছু ক্ষণ হাসি সামলাতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল নিউ জলপাইগুড়ি (এনজেপি) স্টেশন লাগোয়া একটি হোমের আবাসিক কচিকাঁচারা।

Advertisement

কলকাতায় আমেরিকার কনসাল জেনারেল ক্রেগ হল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এনজেপি স্টেশনে শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থা দেখতে গিয়েছিলেন। তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে হোমের আবাসিকদের নিয়ে ছোট্ট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে পৌঁছেই ওই কচিকাঁচাদের হাতে ‘ঘেরাও’ হয়ে গেলেন কনসাল জেনারেল। মুখে হাসি ছড়িয়ে পড়ল তাঁর। কখনও হাততালি দিলেন গান শুনে, কখনও হেসে ফেললেন নাচ দেখে। এনজেপি স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে তখন ছোট ছোট হাসি আর নাচ-গানের আলো জ্বলছে! হাজির অন্তত ১৫ জন শিশু, কিশোর-কিশোরী।

কনসাল জেনারেল যখন এসে পৌঁছন, সকলে হাতজোড় করে নমস্কার জানিয়েছে। তখনই ক্রেগ করমর্দনের জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়ে শিশুদের জড়তা কাটিয়ে দেন। গানের সঙ্গে তিনটি নাচ দেখায় আবাসিকরা। নাচ দেখে খুশি হয়ে ক্রেগ হাততালি দেওয়ার পরেই শিশু কিশোররা ঘিরে ঘরেন তাঁকে। হাত মেলানোর জন্য সকলেই জোরাজুরি করতে থাকে।

Advertisement

ততক্ষণে স্টেশন থেকে দার্জিলিং মেল ছাড়ার সময় হয়ে আসছে। ভিড় বাড়লে পরিদর্শন ভেস্তে যেতে পারে— এই আশঙ্কায় দার্জিলিং জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক শিশুদের বুঝিয়ে ক্রেগকে ছেড়ে দিতে বলেন। কে কার বারণ শোনে! সকলে নাছোড়, আর একবার হাত মেলাবেই তারা ক্রেগের সঙ্গে। অবশেষে প্রায় সকলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তবেই ছাড়া পেলেন মার্কিন কনসাল জেনারেল!

এই শিশু, কিশোর-কিশোরীদের সকলেই কোনও না কোনও ভাবে প্ল্যাটফর্মে এসে তার পরে হোমে ঠাঁই পেয়েছে। কাউকে পাচারকারীর হাত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, কেউ বা ভবঘুরে। কারও বাড়ির ঠিকানা মেলেনি। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে তাপস কর্মকার বলেন, ‘‘ওদের সকলকেই মূলস্রোতে ফেরানো হয়েছে। আর পাঁচ জন বাচ্চার মতো ওদেরও নাচগান-আবৃত্তি শেখানো হয়। আঁকা শেখানো হয়।’’ তাপসবাবুর কথায়, ‘‘ভালবাসা দিলে যে ওরা তিনগুণ ভালবাসা ফিরিয়ে দেবে, তা এ দিন মার্কিন কনসাল জেনারেল উপলব্ধি করেছেন।’’

পাচার রুখতে আজ শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে দু’দিনের ‘কনক্লেভ’। সেই সম্মেলনে যোগ দিতেই শিলিগুড়ি এসেছেন ক্রেগ হল। শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থা দেখতে এ দিন সন্ধ্যায় তিনি অন্য প্রতিনিধিদের নিয়ে এনজেপি স্টেশনে আসেন। তবে শুধু প্ল্যাটফর্ম থেকে উদ্ধার হওয়া হোমের আবাসিকদের নাচগান আর খাতায়কলমে কী কী সুরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে, তা দেখেই ফিরতে হয়েছে কনসাল জেনারেলকে। তিনি জানতে চেয়েছিলেন এনজেপি স্টেশনে সর্বক্ষণের কোনও নজরদারি কেন্দ্র রয়েছে কি না। এর পরেই তাঁকে শিশু সুরক্ষা কিয়স্কে নিয়ে যাওয়া হয়।

ঘটনা হল, এনজেপি স্টেশনে শিশুদের উদ্ধার করে রাখার বা নজরদারি চালানোর স্থায়ী কেন্দ্র নেই বলে অভিযোগ। শুধুমাত্র একটি কিয়স্ক থেকে নজরদারি চলে। তা-ও সন্ধ্যের পরে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এ নিয়ে রেলকেই দোষারোপ করেছে সংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি। শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থার দায়িত্বে থাকা সংগঠনের তরফে শেখর সাহা অভিযোগ করেন, ‘‘আমরা বেশ কয়েক মাস ধরে রেলের কাছে স্থায়ী ঘর চেয়ে আসছি। কিন্তু ঘর মেলেনি।’’ রেলের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, স্থায়ী ঘর বরাদ্দ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন