বিধ্বস্ত: চিকিৎসাধীন চিকিৎসক বিপুল ঘোষ। নিজস্ব চিত্র
চিকিৎসার গাফিলতিতে এক রোগিণীর মৃত্যুর অভিযোগ ঘিরে চিকিৎসককে বেধড়ক মারধর, হাসপাতালে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে। রবিবার রাত ১১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।
হাসপাতাল এবং পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত রোগিণীর নাম সাবেদা খাতুন (৫৫)। বাড়ি হেমতাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের ছোটকান্তরে। ওই রাতে গুরুতর অসুস্থ ওই রোগিণীকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যান। অভিযোগ, সেখানে দশ মিনিটেরও বেশি বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখা হয়। পরে বিপুল ঘোষ নামে চিকিৎসকের নির্দেশে এক নার্স একটি ইঞ্জেকশন ও স্যালাইন দেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বিপুলবাবু রোগীকে রেফার করেন। অ্যাম্বুল্যান্সে তোলা হলে চিকিৎসকের নির্দেশে আরেকটি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। তখনই মৃত্যু হয়েছে সন্দেহ হলে চিকিৎসককে দেখতে বারবার অনুরোধ করা হলেও যাননি বলে অভিযোগ।
এর পরেই রোগীর লোকজন অন্তত দশ জন চিকিৎসকের ঘরে ঢুকে ঘুষি কিল, মাটিতে ফেলে পেটাতে থাকেন। চেয়ার ছুড়ে মারা হয়। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মীও জখম হন। টেবল, আসবাব উল্টে ফেলা হয়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়।
রাতেই জখম অবস্থায় বিপুলবাবুকে রায়গঞ্জ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তাঁর মাথায় ও ঘাড়ে চোট লেগেছে। সোমবার সকালে মৃতের পরিবারের তরফে বিপুলবাবুর বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
আক্রোশ: হেমতাবাদ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভাঙচুর। নিজস্ব চিত্র
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধার নির্দেশে হেমতাবাদের ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের তরফেও পুলিশের কাছে চিকিৎসককে মারধর ও সরকারি সম্পত্তি নষ্টের অভিযোগ হয়েছে। এদিন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হেমতাবাদের ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যান। রায়গঞ্জ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে গিয়ে বিপুলবাবুকেও দেখে আসেন। তিনি বলেন, ‘‘চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ থাকলে রোগিণীর লোকেরা আমাকে অভিযোগ জানাতে পারতেন। তা না করে আইন হাতে নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসককে মারধর ও সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করেছেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সিসিটিভির ফুটেজে সমস্ত বিষয় ধরা পড়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পুলিশকে অনুরোধ করা হয়েছে।’’ পাশাপাশি, ওই চিকিৎসকের গাফিলতি ছিল কি না তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়ালের দাবি, দুইপক্ষের অভিযোগ ও সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
বিপুলবাবুর দাবি, ‘‘ওই রোগিণীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আনা হয়েছিল। তাই প্রাথমিক চিকিৎসা করে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার করা হয়। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমি কোনও দিনই তা করিনি।’’ স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বিপুলবাবু ২৫ বছর আগে কমিউনিটি হেল্থ সার্ভিস অফিসার হিসাবে কাজে যোগ দেন। বছর ১৫ আগে ট্রেনিং নিয়ে ইন্টিগ্রেটেড এমবিবিএস হন। তিনি অ্যাসিস্ট্যান্ট মেডিক্যাল অফিসার হিসাবে কাজ করছেন।
মৃতের ভাইপো হামিদুল রহমানের দাবি, ‘‘বিপুলবাবু দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসায় গাফিলতি করছেন! তাই ওই দিন তাঁর উপরে বাসিন্দাদের জনরোষ আছড়ে পড়েছে। তবে তাঁকে কারা মারধর ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভাঙচুর করেছে তাঁরা জানেন না।’’ বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগ, চেয়ার, টেবিল, সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়।