জমিতে জল, বাজারে আগুন

জলমগ্ন বনে পাচারের ভয়

অসমের কাজিরাঙার মতো তরাই-ডুয়ার্সের বনাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকাও জলমগ্ন। সুকনার বনাঞ্চল থেকে জলদাপাড়া কিংবা লাগোয়া বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পেও নানা জায়গায় জল জমে রয়েছে। কোথাও নজরমিনার ভেঙে গিয়েছে। বনের রাস্তা জলের তলায় চলে যাওয়ায় নজরদারি প্রায় বন্ধ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৬ ০৩:৫০
Share:

অসমের কাজিরাঙার মতো তরাই-ডুয়ার্সের বনাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকাও জলমগ্ন।

Advertisement

সুকনার বনাঞ্চল থেকে জলদাপাড়া কিংবা লাগোয়া বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পেও নানা জায়গায় জল জমে রয়েছে। কোথাও নজরমিনার ভেঙে গিয়েছে। বনের রাস্তা জলের তলায় চলে যাওয়ায় নজরদারি প্রায় বন্ধ। ঘন জঙ্গলের মধ্যে কী অবস্থা, তার সবটা বাইরে থেকে বোঝাও খুব কঠিন। কাজিরাঙায় হরিণেরা অরণ্যর জলমগ্ন এলাকা থেকে অন্য দিকে পালানোর চেষ্টা করছে। উত্তরবঙ্গেও বন্যপ্রাণীরা জায়গা বদল করছে কি না, সে দিকে কড়া নজর রাখা দরকার বলে পরিবেশবিদেরা জানিয়েছেন।

বন দফতরের মাথার উপরে অবশ্য অন্য চিন্তা। এই জায়গা বদল এবং জল জমার সুযোগ চোরাশিকারিদের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রভূত সম্ভাবনা। মঙ্গলবার সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখতে জলদাপাড়ায় যান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ও বনমন্ত্রী বিনয় বর্মনও। শীলতোর্সা এলাকায় জলে ক্ষতিগ্রস্ত নজরমিনারগুলি ঘুরে দেখে বনমন্ত্রী বলেন, ‘‘সিসামারা নদীর জল জঙ্গল ও শালকুমার এলাকায় ঢুকেছে। এলাকায় কয়েকটি নজরমিনার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্রুত তা সারানোর ব্যবস্থা করা হবে।’’

Advertisement

বন দফতরের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে হাতির পাল। নদীর জল বাড়ায় এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় যাতায়াত বন্ধ হাতিেদর। তারা জঙ্গলের একটি উঁচু এলাকায় থাকে। জলের কারণে বনকর্মীদের পক্ষেও জঙ্গলের সমস্ত জায়গায় নজরদারি চালানো কষ্টকর। এই সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে চোরাশিকারির দল।

আলিপুরদুয়ার নেচার ক্লাবের চেয়ারম্যান অমল দত্ত বলেন, ‘‘বর্ষার সময় চোরাশিকারিরা জঙ্গলে ঢুকে এর আগেও হাতি ও গণ্ডার মেরেছে বলে প্রমাণ রয়েছে। তার মূল কারণ, জঙ্গলের বেশ কিছু অংশ এই সময় ডুবে যায়। বনকর্মীদের নজরদারিতে সমস্যা হয়। আশেপাশের বনবস্তি ও গ্রামগুলিতে বহিরাগতদের উপর নজর রাখা প্রয়োজন।’’ তিনি দাবি করেন, যে নদীগুলি জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে, সেগুলির সাহায্যে বর্ষাভর চলে কাঠ পাচার। তিনি দাবি করেন, ‘‘বর্ষায় নৌকা বা স্পিডবোট নজরদারি ব্যবস্থা করতে হবে।’’

জলদাপাড়া ডিভিশনের ডিএফও জে ভি ভাস্কর জানান, শীলতোর্সায় গত কয়েক দিন ধরে জল বাড়ায় মালঙ্গি, জলদাপাড়া, সিসামারা, শীলতোর্সা বিটের বেশ খানিকটা অংশে জল ঢুকে গিয়েছে। জঙ্গলের শীলতোর্সা নজরমিনার জলের তোড়ে রবিবার ভেঙে গিয়েছে। তা ছাড়া কোদালবস্তি ও মালঙ্গি নজরমিনার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

নদী সংলগ্ন জঙ্গল ও নিচু জায়গায় জল জমায় বনকর্মীরা নজরদারি চালাতে যথেষ্ঠ সমস্যায় পড়ছেন। জলকাদায় কুনকি হাতি করেও সব জায়গায় টহলদারি সম্ভব হচ্ছে না। তবে রবারের বোট করে যতটা সম্ভব নজর রাখার চেষ্টা হচ্ছে।

বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ক্ষেত্র অধিকর্তা উজ্জ্বল ঘোষ স্বীকার করছেন ও মানছেন, নজরদারিতে সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, “সঙ্কোশ নদীর জল বাড়ায় বারবিশা এলাকায় ৪০টি হাতির পাল গত ১০ দিন ধরে আটকে রয়েছে। তারা অন্য জঙ্গলে যেতে পারছে না। এলাকার গ্রামগুলিতে প্রায় প্রতি রাতে হানা দিচ্ছে। ফলে বনকর্মীদের রাতে হাতি তাড়ানোর কাজ করে সকালে জঙ্গল পাহারার কাজ করতে হচ্ছে। নদীর জল না কমা পর্যন্ত সমস্যা থাকবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন