হোয়াট্‌সঅ্যাপে বার্তা, দেহ মিলল তরুণের

প্রেমিকার ১৮ তম জন্মদিনে জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার ‘জীবন’টাই দিয়ে দেওয়া। প্রেমিকার বাবা-মা’র প্রতি তাঁর বার্তা, ‘‘এরপরে সন্তান হলে তার সঙ্গে এমন কোরো না।’’ 

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:১৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

এক যুবকের দেহ উদ্ধার হল জলপাইগুড়ির একটি হোটেল থেকে। সেই সঙ্গে পাওয়া গেল একটি ‘সুইসাইড নোট’। তার প্রথমেই তিনি লিখেছেন, ‘‘আমায় কেউ বুঝল না।’’ জানিয়েছেন, প্রেমিকার ১৮ তম জন্মদিনে জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার ‘জীবন’টাই দিয়ে দেওয়া। প্রেমিকার বাবা-মা’র প্রতি তাঁর বার্তা, ‘‘এরপরে সন্তান হলে তার সঙ্গে এমন কোরো না।’’
বুধবার জলপাইগুড়ি শহরের কদমতলায় একটি হোটেলে ঘর থেকে উদ্ধার হয় বছর কুড়ির ওই যুবকের ঝুলন্ত দেহ। শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাচেলর অফ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি। বাড়ি ধূপগুড়ির শালবাড়িতে। বাবা শিক্ষক, মা অঙ্গনওয়ারি কর্মী।
মৃত তরুণের বন্ধুদের কথায়, দিনপাঁচেক ধরে হোয়াট্সঅ্যাপে নানারকম ‘স্ট্যাটাস’ দিচ্ছিলেন তিনি। জীবন নিয়ে হতাশা আর তার জন্য আত্মহত্যার সম্ভাবনার কথা লেখা ছিল সেই স্ট্যাটাসগুলিতে। শুক্রবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। রাতটা ধূপগুড়িতেই এক বন্ধুর বাড়িতে কাটিয়ে চলে আসেন জলপাইগুড়ি। সোমবার ওই হোটেলে ওঠেন। বন্ধুরা জানত জলপাইগুড়ির কোনও একটি হোটেলে রয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার রাত ১১টা ৪৪-এ ওই তরুণ হাতে ব্লেড ধরা ছবির স্ট্যাটাস দেন হোয়াট্সঅ্যাপে। তার মিনিট কয়েক পর ১২টা ১-এ দেওয়া স্ট্যাটাসে লেখা ছিল ‘কাউন্টডাউন শুরু।’ সেটা চোখে পড়েছিল বাড়ির লোকেদের। চোখে পড়েছিল বন্ধুদেরও। কিন্তু লাগাতার ফোন করা হলেও ফোন তোলেননি।
বুধবার সকালেই তরুণের বাবার অনুরোধে জলপাইগুড়ি চলে আসেন ওই তরুণের দুই বন্ধু। হোটেলের নাম জানা না থাকায় সমস্যায় পড়েন। অবশেষে বেলা এগারোটা নাগাদ খোঁজাখুঁজি করে এই হোটেলের রেজিস্টারে বন্ধুর নাম পান। কিন্তু অনেক ধাক্কাধাক্কির পরও দরজা না খোলায় হোটেলের কর্মীরা আসেন। তাঁরাই একটি ভেজানো জানালা খুলে তরুণের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। বিছানা থেকে মোবাইল এবং দু’পাতার সুইসাইড নোট পান তাঁরা। পুলিশ তা বাজেয়াপ্ত করেছে। এক বন্ধু বলেছেন, ‘‘অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু শুনল না।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কিশোর বয়েস থেকেই এক কিশোরীর সঙ্গে প্রণয় ছিল যুবকের। কিন্তু সম্প্রতি এই সম্পর্ক নিয়ে আপত্তি তোলেন মেয়ের বাবা। চাপে পড়ে মেয়েটিও যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। সমস্যার সূত্রপাত সেখান থেকেই। ওই ঘটনার পরেই একবার কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। বেশ কিছু দিন নার্সিহোমে থাকতে হয়েছিল সেই সময়। বাবা-মায়ের উপরও অভিমান তৈরি হয়।
এদিন মৃতের জামাইবাবু বলেন, ‘‘একমাত্র ছেলে, নিজের দিকটাই ভাবল শুধু। বাবা মায়ের কথা চিন্তাও করল না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন