সঙ্গীতা নিখোঁজ কাণ্ডে ধৃত পরিমল

মেয়ের সন্ধান কেন দিচ্ছে না পুলিশ, প্রশ্ন মায়ের

দু’মাসে ওজন কমেছে প্রায় ৫ কেজি। রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়েছে। থ্যালাসেমিয়ার রিপোর্ট আগের থেকে খারাপ এসেছে। শরীর দুর্বল, পড়ে গিয়ে কোমরের হাড়ে চিড় ধরেছে।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৬ ০২:১৯
Share:

মেয়ের অপেক্ষায় বাড়িতে সঙ্গীতার মা অঞ্জলিদেবী। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

দু’মাসে ওজন কমেছে প্রায় ৫ কেজি। রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়েছে। থ্যালাসেমিয়ার রিপোর্ট আগের থেকে খারাপ এসেছে। শরীর দুর্বল, পড়ে গিয়ে কোমরের হাড়ে চিড় ধরেছে। এখন দিনে অন্তত ৮টি ট্যাবলেট খেতে হয়। মেয়েকে অপহরণের অভিযোগে পুলিশ চার জনকে গ্রেফতার করেছে শুনে আশ্বস্ত নন বৃদ্ধা অঞ্জলি কুণ্ডু। তাঁর দাবি, দ্রুত সঙ্গীতাকে খুঁজে বের করুক পুলিশ। উদ্ধার করে বাড়িতে আনতে না পারলেও অন্তত কোথায় আছে, কেমন আছে সে খবর পৌঁছে দিক মায়ের কাছে। প্যাকেট থেকে হাতড়ে ওষুধ বের করতে করতে বললেন, ‘‘আমি তো কারও গ্রেফতার চাইনি। সঙ্গীতা কোথায় আছে সেটাই শুধু পুলিশের কাছে জানতে চাই। তাই তো জানতে পারছি না। আমার মেয়েকে আগে খুঁজে বের করুক, তবে তো বুঝব পুলিশ কাজ করছে।’’

Advertisement

জিম পার্লারের কর্মী তরুণী সঙ্গীতাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে পরিবারের সদস্যরাই থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিল। মূল অভিযোগ যাঁর নামে জিম-পার্লারের মালিক পরিমল সরকার পুলিশ মহলে নিজের প্রভাব খাটিয়ে মামলা ধামাচাপা দিতে চাইছে অভিযোগও উঠেছিল। পরিবারের তরফে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধিদের কাছেও ‘প্রভাবশালী’ মূল অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ হচ্ছে না অভিযোগ জানিয়ে হস্তক্ষেপ দাবি করা হয়। সেই মামলার ভিত্তিতে পুলিশ পরিমল সরকারকে গ্রেফতার করেছে শুনে এ দিন জলপাইগুড়ি আদালতে গিয়েছিলেন সঙ্গীতার দাদা শম্ভুবাবু সহ পরিজনেরা। শম্ভুবাবু বললেন, ‘‘কেউ গ্রেফতার হয়েছে শুনে আদালতে যাইনি। ভেবেছিলাম আদালতে পুলিশ বোনের কোনও খবর জানাবে। তাও জানাল না।’’ বোনের সঙ্গে এখন মায়ের স্বাস্থ্য নিয়েই চিন্তিত শম্ভুবাবু। তিনি বললেন, ‘‘দু’বেলা মা খেতে বসে ঠিকই, কিন্তু মুখে তো তেমন কিছু তোলেই না।’’

মেয়ের খোঁজ চেয়ে কখনও থানায় গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়েছেন, লক্ষ্মীপুজোর সন্ধ্যেয় মাল্লাগুড়ি পুলিশ লাইনে গিয়েছিলেন পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করতে, মিছিলেও হেঁটেছেন অনেকটা পথ। তবে এখন আর শরীর সায় দিচ্ছে না সঙ্গীতার মা অঞ্জলিদেবীর। বসে থাকলে একবারে উঠে দাঁড়াতে পারেন না, আবার নাগাড়ে কয়েক পা হাঁটতেও পারেন না।

Advertisement

মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে দেখা গেল ঘরের সামনে পাকা দাওয়ায় বসে রয়েছেন। টেবিলে ডাঁই করে রাখা ওষুধ। রক্তে শর্করা, হাইপ্রেসার, দুর্বলতা, থ্যালাসেমিয়া, অনিদ্রা, কোমরের ব্যাথার একাধিক ট্যাবলেট খেতে হয়। বাড়ি থেকেও বের হন না। বাইরে বের হলেই কেউ না কেউ মেয়ের খোঁজ জিজ্ঞেস করে। প্রতিবারই উত্তর দেওয়ার সময় গলা কেঁপে যায়, চোখে জল গড়াতে থাকে। এ দিনও কেঁদে ফেললেন। নিশ্বাস নিতে কষ্টও হল কিছুক্ষণ। থেমে থেমে বললেন, ‘‘সারা ক্ষণ মেয়েটার চিন্তা থাকে। কিছু লোকে কুকথাও তো বলছে। তা বলে একটা জলজ্যান্ত মেয়ে দুনিয়া থেকে উবে যাবে আর তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাবে না সেটা হয় নাকি?’’ চোখের জল গড়িয়েই চলেছে অঞ্জলিদেবীর, বাড়ছে ওষুধের সংখ্যাও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement