কলেজ পড়ুয়া মেয়ে ও প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে কীটনাশক খেয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করল মা।
সোমবার রাতে স্থানীয় গ্রামবাসীরাই গাজোলের কৃষ্ণপল্লির বাসিন্দা ওই তিন জনকে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে গাজোল গ্রামীণ হাসপাতাল ও পরে সেখান থেকে মালদহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনজনেরই শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। তবে বিপন্মুক্ত কি না তা এখনই বলা সম্ভব নয়। অভাবের তাড়নাতেই তিনি দুই সন্তানকে নিয়ে এই পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন বলে দাবি করেছেন ওই মহিলা। পাশাপাশি তার অভিযোগ, গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ তাঁদের পরিবারকে কার্যত একঘরে করে রেখেছেন। নানা আছিলায় তাদের গালিগালাজ করা হয়।
তিনজনের ওই পরিবারের আত্মহত্যার চেষ্টার এই খবর রটে যেতে প্রশাসনিক মহলে আলোড়ন পড়ে যায়। ত্রাণ দফতরের এক আধিকারিক মালদহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে মা ও মেয়ের সঙ্গে কথা বলেন।
গাজোল ব্লকের বিডিও বিষ্ণুপদ চক্রবর্তী বলেন,‘‘প্রাথমিকভাবে যা মনে হচ্ছে তাতে ওই পরিবারের তিন সদস্য দারিদ্রের কারণেই আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে এলাকা থেকে খবর পেয়েছি। এই ধরনের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। ওঁরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পরে ব্লক প্রশাসন ও গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে যতটা সম্ভব সাহায্য করা হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এ ছাড়া সামাজিক বয়কটের যে অভিযোগ তোলা হয়েছে সেটাও খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
গাজোল ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের কৃষ্ণপল্লির বাসিন্দা ওই মহিলার ২৩ বছরের ছেলেটি ছেলেটি মানসিক ভারসাম্যহীন। কথাও বলতে পারে না। ২১ বছরের মেয়েটি গাজোল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।
প্রায় ১৫ বছর ধরে ওই মহিলার স্বামী পরিবারের সঙ্গে থাকেন না। গাজোল শ্মশানের পাশে তাঁদের একটি চায়ের দোকান রয়েছে। এছাড়াও বাড়িতে গরু রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘চায়ের দোকানে বিক্রিবাট্টা নেই বললেই চলে। একটি মাত্র গোরুর দুধ বিক্রি করেই মেয়ের লেখাপড়া, অসুস্থ ছেলের চিকিৎসা ও সংসার চলছে। কিন্তু এখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে সংসার চলছেই না, দু’বেলা খাবারও জোটে না। তাই বাধ্য হয়েই এমন পথ বেছে নিতে হয়েছে।’’
তাঁর আরও অভিযোগ, এলাকারই কিছু মানুষ তাদের পরিবারের ওপর নানাভাবে অত্যাচার করছে। কিন্তু গ্রাম পঞ্চায়েত বা পুলিশকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। গ্রামবাসীরা অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পুলিশেরও দাবি এ ধরণের কোনও অভিযোগই থানায় জমা পড়েনি।
গাজোল ১ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ষষ্ঠী সরকার বলেন, ‘‘এই ধরণের কোনও অভিযোগ আমরা পাইনি। ওই তিন জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পরে আমাদের তরফে যতটা সম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা করা হবে।’’