North Bengal

মজুরি নেই, তবু চলে ঝাড়ু

কাজ সেরে গ্রাম পঞ্চায়েত দফতরে ফিরে গেলেন মার্টিনা টুডু। 

Advertisement

অনুপরতন মোহান্ত

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২০ ০৫:২৭
Share:

প্রতীকী ছবি

সকাল থেকে আকাশ কালো হয়ে আসছে। চিন্তা বাড়ছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দুই কর্মীর। চত্বর জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নোংরা ও চিকিৎসা বর্জ্য বুঝি আজ আর সাফাই হয় না। ছিটেফোঁটা বৃষ্টিও পড়তে শুরু করেছে। কর্মীদের অবাক তখনই দেখা যায় তাঁকে। মাথায় ঘোমটা, মুখে মাস্ক। ছোটখাটো চেহারার আদিবাসী বধূটি ঠিক হাজির স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। দ্রুত ঝাড়ু হাতে সাফ করতে শুরু করলেন বারান্দা। তার পরে গোটা চত্বর।

Advertisement

দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকের মালঞ্চা পঞ্চায়েতে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চিকিৎসকবিহীন। এক ফার্মাসিস্ট ও এক কম্পাউন্ডার মিলে কেন্দ্রটি চালান। আসেন এনএনএম ও আশাকর্মী। কিন্তু রোজ সকাল ৮টায় নিয়ম করে ঝাঁট দিয়ে সাফসুতরো করে চলেছেন বছর চুয়াল্লিশের ওই আদিবাসী বধূ। এক-আধ বছর নয়, গত সাত বছর ধরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিবেশকে ভাল রাখার দায়িত্ব নিঃস্বার্থ ও নিরলস ভাবে পালন করে চলেছেন তিনি।

Advertisement

ওই কেন্দ্রের কর্মীরাই জানালেন, মার্টিনা এই কাজের জন্য এক পয়সাও পান না। খাতায়কলমে তাঁর কাজ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে এক কিলোমিটার দূরের দোতলা পঞ্চায়েত ভবনটি সাফসুতরো রাখা। তার জন্য তিনি মাসে দু’হাজার টাকা পান। তবু সকালে সেখানে যাওয়ার আগে তিনি চলে আসেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে।

বাড়িতে নুন আনতে পান্তা ফুরনোর অবস্থা তাঁর। স্বামী মাইকেল হেমব্রম স্থানীয় একটি হাইস্কুলে গেট খোলা-বন্ধ করার কাজ করেন। মাসে পান এক হাজার টাকা। আদিবাসী দম্পতির সারা মাসের মিলিত আয়ে (৩ হাজার টাকা) অভাব মেটে না। একমাত্র ছেলে ২০১৮ সালে বিএ পাশ করে কাজের খোঁজে ভিন্ রাজ্যে।

সেই থেকে পুজো-পার্বণের আগে বুকটা হু হু করে ওঠে মার্টিনার। মুখে লেগে থাকা হাসি, সবসময় ঘোমটা টেনে থাকা ওই আদিবাসী বধূ কাউকে জানতে দেন না সেই কষ্টের কথা।

করোনা সংক্রমণের ভয়ও তাঁকে কর্তব্য থেকে সরাতে পারেনি। কেন করেন এই কাজ, তা-ও নিখরচায়? মার্টিনা বলেন, ‘‘এলাকার কত মানুষ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেন। শিশু কোলে মায়েদের অপেক্ষা করতে হয়। চারদিকে নোংরা জমে থাকলে ওদের তো অসুখ বেড়ে যাবে। তাই...।’’

বিষণ্ণ হেসে মার্টিনা এগিয়ে যান জঞ্জাল সাফ করতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন