Coronavirus

ফিরেও ভাবনা, কাজ কি মিলবে?

লকডাউনের ৬০ দিন কেটে গিয়েছে। জীবন প্রায় স্তব্ধ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে এখন একটু একটু করে খুলছে দোর, তেমনই নজর দেওয়া হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যায়। আজ পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্কট।বছরে দু’এক বার গ্রামে ফিরলেও, কয়েক দিন পরে ফের ফিরে যেতেন দিল্লি, মুম্বই, কেরল, তামিলনাডু বা অন্য রাজ্যে।

Advertisement

মেহেদি হেদায়েতুল্লা

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২০ ০৫:৫৯
Share:

-ছবি এএফপি।

ঘরে ফিরেও স্বস্তিতে নেই ভিন্ রাজ্য ফেরত শ্রমিকেরা। অন্য সঙ্কটের মুখে পড়েছেন তাঁরা। দিন যত যাচ্ছে, টান পড়ছে হাঁড়িতে।

Advertisement

সরকারি হিসেবে , উত্তরবঙ্গের কোচবিহার থেকে মালদহ— এই আট জেলা মিলিয়ে দু’লক্ষেরও বেশি শ্রমিক ভিন্ রাজ্যে কাজ করেন। বেসরকারি মতে, সংখ্যাটা দ্বিগুণ। লকডাউনে তাঁদের অনেকেই এখনও আটকে ভিন্ রাজ্যে।

বছরে দু’এক বার গ্রামে ফিরলেও, কয়েক দিন পরে ফের ফিরে যেতেন দিল্লি, মুম্বই, কেরল, তামিলনাডু বা অন্য রাজ্যে। রুজির খোঁজে। তাতে এ বার থাবা বসিয়েছে করোনাভাইরাস। হয়েছে লকডাউন। কাজ না থাকায় হাতে টাকা শেষ। অভুক্ত দিন কাটানোর পরে অনেক দুর্ভোগ করে কেউ কেউ ফিরেছেন ঘরে। কিন্তু চিন্তা কাটেনি কারও। সবার মনেই এক প্রশ্ন, ‘‘কবে ফের মিলবে কাজ?’’

Advertisement

উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরের মহম্মদ নাজিমুদ্দিন। বেঙ্গালুরুতে কাজ করেন। এক মাস আগে বাড়ি ফিরেছেন। কিছু দিন হোম কোয়রাণ্টিনে ছিলেন। এখন বাড়িতে বন্দি। তিনি বলেন, ‘‘ফেরা তো হল। কিন্ত কোনও কাজ নেই। টাকা সব ফুরিয়েছে। সংসার কী ভাবে চালাব!’’

করণদিঘির হাসিবুল ইসলামের কথায়, ‘‘গত বারও ইদে বাড়ি ফিরেছিলাম। সবার জন্য উপহার এনেছিলাম। ঘরে ফেরার আনন্দই ছিল আলাদা। এ বার টানাপড়েনের সংসার অর্ধাহারে দিন কাটছে।’’

কী ভাবে এত মানুষের কাজের সংস্থান হবে। তা নিয়ে প্রশাসন থেকে আমজনতা— সকলেই উদ্বেগে।

এলাকার অনেকেই বলছেন, উত্তরবঙ্গে এক সময় চা বাগানগুলিতে কাজের বড় সুযোগ ছিল। চা শিল্পে সঙ্কটের জেরে একে একে বাগান, কারখানা বন্ধ হয়েছে। কাজ হারিয়েছেন প্রচুর শ্রমিক। মালদহ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে এক সময় ঘরে ঘরে ছিল হস্তচালিত তাঁতঘর। সেই কাজেও থাবা বসায় যন্ত্রচালিত তাঁত। সরকারি তরফে কৃষিভিত্তিক ছোট ছোট শিল্প গড়ে কর্মসংস্থানের কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু অনেকের অভিযোগ, জেলায় জেলায় ধানের মরসুম ছাড়া সে ভাবে কাজ পাওয়া যায় না। এখন আবার অনেকে যন্ত্রে ধান তোলা থেকে ঝাড়াই করছেন। তাতেও শ্রমিকের চাহিদা কমছে। একশো দিনের কাজ নিয়েও রয়েছে নানা নালিশ। সব মিলিয়ে এই করোনা-সঙ্কটে কী ভাবে কাজ জুটবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তার উত্তরবঙ্গের লক্ষাধিক পরিযায়ী শ্রমিক।

অভিযোগ, তাঁদের কোথায়, কোন কাজে যুক্ত করা হবে সেই বিষয়ে কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার— কারও সুনির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনা নেই। জেলার প্রশাসনিক আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, পরিযায়ী শ্রমিকদের কী ভাবে, কোন কাজে যুক্ত করা হবে সেই বিষয়ে তাঁদের কাছে কোনও নির্দেশিকা নেই।

রাজ্যের শ্রম দফতরের প্রতিমন্ত্রী গোলাম রব্বানির কথায়, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য রেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সঙ্গে তাঁদের যুক্ত করার বিষয়ে দফতর উদ্যোগী। তাঁদের কাজে লাগানোর বিষয়টি রাজ্য ভাবছে। একশো দিনের কাজে লাগানোর বিষয়েও চিন্তাভাবনা চলছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement