গৃহবধূর মৃত্যুতে ডাক্তারকে মার, গাড়ি ভাঙচুর

মাত্র এক মাস আগে চালু হয়েছিল নার্সিংহোমটি। লাইসেন্সও ছিল না তার। সোমবার সেখানে এক গৃহবধূর মৃত্যুর পরে বিক্ষোভ, ভাঙচুরের শেষে সিল হয়ে গেল তার দরজা। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ বেপাত্তা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ইসলামপুর শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:১৯
Share:

ভাঙচুর হওয়া গাড়ি। নিজস্ব চিত্র

মাত্র এক মাস আগে চালু হয়েছিল নার্সিংহোমটি। লাইসেন্সও ছিল না তার। সোমবার সেখানে এক গৃহবধূর মৃত্যুর পরে বিক্ষোভ, ভাঙচুরের শেষে সিল হয়ে গেল তার দরজা। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ বেপাত্তা। যে চিকিৎসক ওই তরুণীর অস্ত্রোপচার করেছিলেন, জনতার হাতে মার খেয়ে তিনি নিজেই আর এক হাসপাতালে ভর্তি।

Advertisement

আঠাশ বছরের জয়ন্তী সাহার বাড়ি উত্তর দিনাজপুরের রামগঞ্জ বাজার এলাকায়। রবিবার রাতে তাঁর হঠাৎ পেট ব্যথা শুরু হয়। বাড়ির লোক প্রথমে তাঁকে ইসলামপুরের কাছে রামগঞ্জ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় পরিবারের লোকেরা তাঁকে নিয়ে যান ইসলামপুরের তিস্তামোড়ের রাই নার্সিংহোমে। সোমবার বিকেলে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রক্ত দিয়েও বাঁচানো যায়নি তাঁকে।

অভিযোগ, এই খবর পেয়ে চিকিৎসায় গাফিলতির কথা বলে পরিবারের লোকেরা চড়াও হয় নার্সিংহোম আর সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের উপরে। চিকিৎসক হিমাংশু বিশ্বাসকে মারধর করা হয়, তাঁর গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। পরে পরিবারের লোকজন জানান, চিকিৎসকই অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি নাকি বলেছিলেন, জয়ন্তী দেবী সন্তানসম্ভবা। কিন্তু ভ্রূণটি মায়ের গর্ভে যাওয়ার বদলে ফেলোপিয়ান টিউবে ঢুকে গিয়েছে। এখুনি অস্ত্রোপচার না করলে প্রাণ সংশয়। তার পরেও কেন জয়ন্তী দেবীকে বাঁচানো যায়নি, সেটাই পরিবারের লোকজনের ক্ষোভের কারণ।

Advertisement

গোলমালের খবর পেয়ে ইসলামপুরের এসডিপিও কুন্দলভূষণ সিংহের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী দ্রুত নার্সিংহোমে যায়। কিন্তু উত্তেজিত জনতাকে বাগে আনতে তাঁদেরও বেশ বেগ পেতে হয়। শেষে লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করলে ভিড় কমে। পুলিশ যখন হিমাংশুবাবুকে উদ্ধার করেন, তখন তিনি ভালই জখম। তাঁকে পাঠানো হয় বিহারের একটি নার্সিংহোমে। সেখান থেকেই তিনি ফোনে জানান, ‘‘ভ্রূণটি ফেলোপিয়ান টিউবে চলে যাওয়ায় তা অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। কিন্তু রোগিণী রক্তাল্পতায় ভুগছিলেন। এর মধ্যেই তাঁর রক্তক্ষরণ হয়েছে। সম্ভবত সে জন্যই হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর।’’ হিমাংশুবাবুর দাবি তরুণীর মৃত্যু এই অবস্থায় চিকিত্সকের বিশেষ কিছু করার থাকে না।

এই ঘটনার পর থেকে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের কোনও খোঁজ নেই। এর মধ্যে নার্সিংহোমটি সম্পর্কে আরও অভিযোগ কানে আসে প্রশাসনের। স্থানীয়দের দাবি, অনেক বেনিয়ম তো হয়েইছে। তা ছাড়া নার্সিংহোমের কোনও নির্দিষ্ট বা নিজস্ব চিকিৎসকও নেই। ইসলামপুর হাসপাতাল ও বিভিন্ন নার্সিংহোম থেকে ডাক্তারেরা এখানে এসে চিকিৎসা করেন। নার্সিংহোমটির লাইসেন্স নেই বলেও জানিয়েছেন উত্তর দিনাজপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধা। তিনি বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখেছি, ওরা লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে। কিন্তু সেটা পায়নি। তার পরে অবৈধ ভাবে কাজ শুরু করে থাকলে তা ঘোরতর অন্যায়।’’

রাতে ইসলামপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট থেন্ডুপ শেরপা গিয়ে ওই নার্সিংহোমটি সিল করে দেন। তিনি জানান, গোলমাল হওয়ার পরে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবেই তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন