Young Boy

Student: দিনে টোটো, রাতে পড়াশোনা কিশোরের

কিশোর বয়সে টোটোচালকের আসনে না বসে উপায়ও ছিল না উত্তর দিনাজপুরের এই ছেলেটির।

Advertisement

মেহেদি হেদায়েতুল্লা

করণদিঘি শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২২ ০৬:৪৩
Share:

টোটোয় বসে একটু বিশ্রাম। নিজস্ব চিত্র

কিছু দিন আগে যারা তার সহপাঠী ছিল, এখন তারাই ছেলেটির টোটোর সওয়ারি। তাতে কিন্তু থেমে থাকেনি অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্র। পড়াও বন্ধ করেনি। বরং দিনভর টোটো চালিয়ে রাতে ওই সহপাঠীদের কাছ থেকেই জেনে নিচ্ছে, কী পড়ানো হয়েছে এ দিন। করোনা আবহে স্কুল চালু হওয়ায় এই ভাবেই পড়াশোনা চালাচ্ছিল সে। আচমকা গরমের ছুটি পড়ে যাওয়ায় ‘শাপে বর হয়েছে’, বলছে সে।

Advertisement

কিশোর বয়সে টোটোচালকের আসনে না বসে উপায়ও ছিল না উত্তর দিনাজপুরের এই ছেলেটির। করোনার শুরুতে তার পরিযায়ী শ্রমিক বাবার কাজ চলে যায়। ভিন্ রাজ্য থেকে বাড়ি ফিরে এসে তিনি দুশ্চিন্তার মধ্যেই থাকতেন। তার পরে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় তাঁর। পরিবারের দাবি, আর্থিক চিন্তায় অবসাদগ্রস্ত হয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি। তখন ছেলেটির মা-ও কোনও কাজ করতেন না। বাধ্য হয়েই অন্যের টোটো ভাড়ায় চালাতে শুরু করে ওই কিশোর। কেন? তার কথায়, ‘‘আমি বড় সন্তান। বাড়িতে মা আর ভাই রয়েছে। ভাই ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। সংসার চালাতে হবে। ভাইয়ের পড়াও বন্ধ করা যাবে না। তাই...।’’

ছেলেটির মা সম্প্রতি বিড়ি বাঁধার কাজ পেয়েছেন। কিছুটা চাপ কমেছে তার উপর থেকে। ছেলেটি নিজে সকাল ন’টায় টোটো নিয়ে বার হয় উত্তর দিনাজপুরের ছোট্ট শহরটিতে। দিনভর সে সওয়ারিদের পৌঁছে দেয় তাঁদের গন্তব্যে। মাঝে দুপুরে এক ফাঁকে বাড়ি ঢুকে খেয়ে নেয়। সন্ধ্যা ছ’টার মধ্যে সে মালিকের কাছে টোটো ফিরিয়ে দিয়ে বাড়ি চলে আসে। তার পরে শুরু হয় পড়াশোনার পর্ব।

Advertisement

ছেলেটি বলে, ‘‘ছ’মাস ধরে টোটো চালাচ্ছি। দিনের শেষে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা রোজগার হয়। এই টাকা কিছুটা হলেও সংসারের কাজে লাগে।’’ আর স্কুল? ছেলেটি বলে, ‘‘টোটোর জন্য রোজ মালিককে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে হয়। স্কুলে গেলে, টোটো না চালালে সেই টাকা পাব কোথা থেকে? সংসার খরচের বিষয়টি তো আছেই। তাই স্কুলে যেতে পারছি না। তবে পড়া চালিয়ে যাচ্ছি।’’

ছেলেটির স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, ওই ছাত্রের বিষয়ে তাঁর কিছুই জানা ছিল না। শীঘ্রই ছেলেটি ও তার অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলবেন তাঁরা, জানালেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন