ছিনতাইয়ে অভিযুক্তদের মার, জ্বলল বাইক

এক গয়না ব্যবসায়ীর ব্যাগ ছিনতাই করে পালানোর চেষ্টার অভিযোগে মোটরবাইক আরোহী দুই যুবককে আটক করে বেধড়ক মারধর করে পুলিশের তুলে দিল জনতা। অভিযুক্তদের মোটরবাইকটিও পুড়িয়ে দেন বাসিন্দাদের একাংশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৫ ০২:২৩
Share:

মোটরবাইক জ্বালিয়ে দিয়েছে জনতা। ছবি: গৌর আচার্য।

এক গয়না ব্যবসায়ীর ব্যাগ ছিনতাই করে পালানোর চেষ্টার অভিযোগে মোটরবাইক আরোহী দুই যুবককে আটক করে বেধড়ক মারধর করে পুলিশের তুলে দিল জনতা। অভিযুক্তদের মোটরবাইকটিও পুড়িয়ে দেন বাসিন্দাদের একাংশ। সোমবার দুপুরে ঘচনাটি ঘটেছে রায়গঞ্জ থানার ইনস্টিটিউট সংলগ্ন বকুলতলা এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, জখম দুই যুবকের নাম বিকাশ কুমার ও মিঠুন দাস। বিকাশের বাড়ি শিলিগুড়ি শহরে। মিঠুনের বিহারের পূর্ণিয়ার বাসিন্দা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁদের রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজা জানান, যুবকদের চিকিৎসা চলছে। তাদের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তরা সুস্থ হলে ওই চক্রের সঙ্গে আরও কারা জড়িত তা জানার চেষ্টা করা হবে।

পুলিশ সূত্রের খবর, স্থানীয় উকিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা ব্যোমকেশ বর্মনের বকুলতলায় সোনার দোকান রয়েছে। অভিযোগ, এ দিন ব্যোমকেশবাবু তাঁর ব্যাগটি দোকানের সামনে মাটিতে রেখে চাবি দিয়ে সাটারের তালা খুলছিলেন। সেই সময় অভিযুক্তরা মোটরবাইকে চেপে এসে তাঁর দোকানের সামনে দাঁড়ায়। বিকাশ মোটরবাইক চালাচ্ছিল। মিঠুন ব্যাগটি ছিনিয়ে নিতেই টের পেয়ে ব্যোমকেশবাবু পিছন থেকে চলন্ত মোটরবাইকটি টেনে ধরেন। কিন্তু অত্যন্ত দ্রুত গতিতে অভিযুক্তরা বিদ্রোহী মোড়ের দিকে পালিয়ে যায়। ব্যোমকেশবাবু রাস্তার ধারে পড়ে যান। বাসিন্দাদের একাংশ ও পথচারীরা একাধিক মোটরবাইক ও সাইকেল নিয়ে অভিযুক্তদের পিছু ধাওয়া করেন। বিদ্রোহীমোড়ে যানজট থাকায় প্রাণে বাঁচতে অভিযুক্তরা বাইকটি ঘুরিয়ে ফের বকুলতলা হয়ে শিলিগুড়ি মোড়ের দিকে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু বকুলতলা এলাকায় জনতা তাদের আটক করে বেধড়ক মারধর শুরু করে।

Advertisement

অভিযুক্তরা সেই সময় ব্যাগটি রাস্তার ধারে ফেলে দেয়। অভিযুক্তদের মোটরবাইকে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ দু’জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। দমকলের একটি ইঞ্জিন গিয়ে বাইকের আগুন নেভায়। ঘটনার জেরে বকুলতলায় ঘণ্টা খানেক তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ব্যোমকেশবাবু বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীরা দিনে দুপুরে জনবহুল এলাকা থেকে এ ভাবে আমার ব্যাগ ছিনতাইয়ের চেষ্টা করবে, এ কথা ভাবতেও পারছি না। ব্যাগে দোকানের চাবি, নথি, কিছু টাকাপয়সা ও সোনা-রুপো ছিল। ঘটনার পর আতঙ্কে দোকান বন্ধ করে বাড়ি চলে যাই। পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছি।’’

উল্লেখ্য, গত দেড় মাসে রায়গঞ্জের দেবীনগর, বীরনগর, বিডিও অফিস ও জেলা হাসপাতাল সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা থেকে মোট ১২টি মোটরবাইক চুরি হয়েছে। পুলিশ ৭টি বাইক-সহ ৮ জন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করতে পারলেও এখনও বাকি বাইকের হদিস পায়নি। এই পরিস্থিতিতে ২৩ জুলাই উত্তরবঙ্গের আইজি জ্ঞানবন্ত সিংহ রায়গঞ্জ থানায় সিসিটিভি উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে যান। তাঁর সামনে ব্যবসায়ী ও রায়গঞ্জ পুরসভার কংগ্রেস কাউন্সিলরদের একাংশের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁরা আইজির কাছে পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তোলেন।

রায়গঞ্জ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অতনুবন্ধু লাহিড়ী ও পশ্চিম দিনাজপুর চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক জয়ন্ত সোম জানান, পুলিশ এতটাই নিষ্ক্রিয় যে দুষ্কৃতীরা প্রকাশ্যে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করছে। শহরের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত। এ রকম চলতে থাকলে শহরবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যবসায়ীরা পথে নামতে বাধ্য হবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন