বাজারে কর্তৃত্ব কায়েম করা নিয়ে গণ্ডগোলের জেরে এক যুবককে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মারাত্মক জখম হয়েছেন তাঁর এক সঙ্গী। সোমবার বেলা ১২টা নাগাদ শিলিগুড়ির থানার উড়়ালপুলের নীচের মহাবীরস্থান রেলগেট এলাকার ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম গোপাল ঘোষ (৩৬) ওরফে বাউ। জখম মহম্মদ মুখতার ওরফে লাটুয়াকে সেবক রোডের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, সন্ধ্যায় অজয় সরকার নামের এক অভিযুক্ত গ্রেফতার হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে ধারালো অস্ত্র। তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজ শুরু হয়েছে বলে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচা জানান।
পুলিশ জানিয়েছে, টিকিয়াপাড়ার বাসিন্দা বাউয়ের উড়়ালপুলের নীচে বাজারে স্টেশনারি দোকান এবং এনজেপি ভালবাসা মোড়ের বাসিন্দা মুখতারের কাপড়ের ছোট দোকান রয়েছে। নিহত, জখম এবং অভিযুক্তরা সকলেই শাসকদলের ঘনিষ্ঠ বলে অভিযোগ। দোকান হাতবদল, শনি মন্দির কমিটির দখল, ক্লাবের জমি বিক্রি, নতুন দোকান বসানো ছাড়াও প্রতিদিন সব্জি ও ফলের বাজার তোলা আদায় ঘিরেই গোলমাল বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ পৌঁছেছে। ওই বাজারের দখল নিয়ে ইদানীং বাউয়ের লোকজনের সঙ্গে অন্য একটি গোষ্ঠীর গোলমাল চলছিল বলেও অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ।
উপরন্তু, লাটুয়া গত পুর নির্বাচনে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপির প্রার্থীও হয়েছিলেন। বছর খানেক ধরে তিনি তৃণমূলে নাম লেখান। বাউ অতীতে সিপিএম করলেও এখন তৃণমূলে। তিনি ওই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সম্পাদকও। পুরভোটের আগে রাতে এনজেপিতে অবস্থান করে নিহত বাউকেই গ্রেফতারের দাবি তুলেছিলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, ‘‘কে কী পার্টি করল তা না দেখে পুলিশ কমিশনারকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। খুনোখুনি বরদাস্ত করা হবে না।’’ ঘটনার পর স্থানীয় তৃণমূলের একাংশ বিজেপির দিকে আঙুল তোলেন। জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘লাটুয়া আর বিজেপি করে না। বাউও তো দিদির দলে। অযথা আমাদের বদনাম করে লাভ নেই।’’
ব্যবসায়ীরা জানান, অভিযুক্তরা ৫ জন রেলগেট ধরে হেঁটে গিয়ে ওই বাজারে ঢোকে। তারপরে বাউ এবং লাটুয়াকে বাটাম, ধারালো অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করে বলে অভিযোগ। পরে রেলগেট ধরেই অভিযুক্তরা পালায়। নিহতের স্ত্রী গিরিবালা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সরব হন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ক্লাবের জমি, বাজারের দখল সব নিয়ে অভিযুক্তরা গোলমাল করছিল। উনি বাধা দেন। শিলিগুড়ি থানার পুলিশ আগে ব্যবস্থা নিলে এমন হত না।’’
থানা থেকে ২০০ মিটারের মধ্যে রক্তারক্তির ঘটনায় আতঙ্ক ছড়ায় এলাকায়। নর্থবেঙ্গল মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সঞ্জয় টিব্রেওয়াল বলেন, ‘‘পুলিশ কমিশনার আমাদের ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’’