কেরলে বন্যা, চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যু

মঙ্গলবার রাতে জামালদহের সিরাজি আলম যখন বাড়ি ফিরলেন, তাঁর কফিনবন্দি দেহ দেখে চার দিকের নিস্তব্ধতা ভেঙে ইদের আগের রাতে কান্নায় ভেঙে পড়ল জামালদহের ধুলিয়া বলদিয়াহাটি গ্রাম। মা ইলিজা বিবি বারবার বলছিলেন, “আমার ছেলে এ ভাবে কেন মারা গেল।”

Advertisement

সজল দে

জামালদহ শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৮ ০৩:২৫
Share:

মর্মান্তিক: কেরলে মৃত সিরাজি।

ছোটবেলা থেকেই চোখের সামনে শুধু অভাব দেখেছেন। মায়ের চিকিৎসা, ঘর তৈরি কিছুই যেন হয়ে উঠছিল না। এক দিন সব অভাব দূর করবেন তিনি, এই স্বপ্ন ছিল চোখে। ইতিহাস অনার্স নিয়ে পাশ করার পর কাজের সন্ধানে বেশ কিছু দিন ঘোরাঘুরি করেন। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষার মাধ্যমে স্নাতকোত্তর বিভাগে পড়াশোনা করছিলেন। কোথাও কাজ না পেয়ে এলাকার কয়েক জন যুবকের সঙ্গে শ্রমিকের কাজ করতে যান।

Advertisement

মঙ্গলবার রাতে জামালদহের সিরাজি আলম যখন বাড়ি ফিরলেন, তাঁর কফিনবন্দি দেহ দেখে চার দিকের নিস্তব্ধতা ভেঙে ইদের আগের রাতে কান্নায় ভেঙে পড়ল জামালদহের ধুলিয়া বলদিয়াহাটি গ্রাম। মা ইলিজা বিবি বারবার বলছিলেন, “আমার ছেলে এ ভাবে কেন মারা গেল।”

পারিবারিক সূত্রের খবর, বছর ছাব্বিশের সিরাজি কেরলের এর্নাকুলাম জেলার কাকানাদ এলাকায় নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন। যা পারিশ্রমিক পেতেন, সেটা দিয়ে পরিবারের সংসার খরচের অনেকটাই জোগাড় হত। কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি চলছিল। তাঁর মধ্যে ভিজে ভিজেই কাজে যোগ দিয়েছিলেন সিরাজি ও তাঁর বন্ধুরা। টানা ছ’দিন এমন ভাবে কাজ করার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন সিরাজি।

Advertisement

সিরাজির বাড়িতে তাঁর শোকস্তব্ধ পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র

গত বৃহস্পতিবার স্বাধীনতা দিবসের পর দিন সিরাজির অসুস্থতা বেড়ে যায়। তাঁরা যেখানে থাকতেন সেখান থেকে হাসপাতাল দুই কিলোমিটার দূরে। সেখানে বন্যার কারণে গাড়ি বন্ধ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তাঁর সঙ্গে থাকা শ্রমিকরা দুই কিলোমিটার হাটা পথে কাঁধে করে নিয়ে তাঁকে একটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করান। চিকিৎসকরা তাঁর জ্বর হয়েছে বলে জানান। সকাল ১১টা নাগাদ ভর্তি করা হলে বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়।

বন্যা পরিস্থিতির মধ্যেই শুক্রবার অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে তাঁর মৃতদেহ বাড়ি নিয়ে আসার চেষ্টা হয়। কিন্তু ভয়াবহ বন্যার কারণে ছ’ঘণ্টা পথ পেরনোর পর আর এগোতে পারেনি অ্যাম্বুল্যান্স। দেহ নিয়ে এসেছিলেন তাঁরই বন্ধু জয়নাল হোসেন ও রাজু বাদশারা জানান, “বন্যার কারণে সঠিক চিকিৎসা করা গেল না বন্ধুর।”

রবিবার তাঁর দেহ নিয়ে ফের রওনা হন বন্ধুরা। মঙ্গলবার শেষ রাতে সেই দেহ পৌঁছয় গ্রামে। এর পরেই কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা গ্রামের মানুষ। রাতেই সমাধিস্থ করা হয় সিরাজির দেহ। সিরাজির বাবা সোয়ারুদ্দিন মিয়াঁ পেশায় ভ্যানচালক। তাঁর দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে সিরাজিই বড়। পড়াশোনায় বরাবর ভাল। পঞ্চায়েত ভোটের সময় বাড়িতে বেশ কিছু দিন থেকে আবার কাজে যায়। তাঁর বাবা বলেন, “আমি অসহায় হয়ে পড়লাম।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন