অনাস্থা, সরলেন উত্তর দিনাজপুরের সভাধিপতি

বামফ্রন্ট পরিচালিত উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদের সিপিএমের সভাধিপতি লাডলি চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনাস্থা পাশ হল বৃহস্পতিবার। গত ১২ সেপ্টেম্বর জেলা পরিষদের কংগ্রেস, তৃণমূল ও বামফ্রন্টের ১৭ জন সদস্য লিখিতভাবে ওই অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:১৭
Share:

বামফ্রন্ট পরিচালিত উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদের সিপিএমের সভাধিপতি লাডলি চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনাস্থা পাশ হল বৃহস্পতিবার। গত ১২ সেপ্টেম্বর জেলা পরিষদের কংগ্রেস, তৃণমূল ও বামফ্রন্টের ১৭ জন সদস্য লিখিতভাবে ওই অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। সেই মতোই এদিন তলবি সভা ডাকে জেলা প্রশাসন। জেলা পরিষদের হলঘরে আয়োজিত ওই সভা পরিচালনা করেন অতিরিক্ত জেলাশাসক প্রভুদত্ত ডেভিড প্রধান। তলবি সভায় ভোটাভুটিতে ১৯-৫ ভোটে পরাজিত হয়েছেন সভাধিপতি। বামফ্রন্টের পাঁচ সদস্য সভাধিপতির উপর আস্থার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। এদিনের তলবি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন সভাধিপতি লাডলিদেবী ও গোয়ালপোখরের ফরওয়ার্ড ব্লক সদস্য লাল বানু।

Advertisement

জেলাশাসক স্মিতা পান্ডে বলেন, “জেলা পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য সভাধিপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রমাণ করায় সরকারি নিয়মে সভাধিপতি অপসারিত হয়েছেন।” ইসলামপুরের বাসিন্দা লাডলিদেবীর মোবাইল ফোন এদিন দিনভর বন্ধ থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে সহকারী সভাধিপতি প্রফুল্লকুমার দেব সিংহ জানান, বামফ্রন্টের সাত সদস্য জেলা পরিষদের বিরোধী আসনে বসার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। তিনি বলেন, “জেলা পরিষদের নতুন বোর্ড গঠনের সময়ে আমরা সভাধিপতি ও সহকারি সভাধিপতির আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।”

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সহকারী সভাধিপতির বিরুদ্ধে আস্থা-অনাস্থা প্রমাণ করতে আজ, শুক্রবার আরেকটি তলবি সভা ডেকেছে প্রশাসন। জেলা পরিষদে ইটাহারের তৃণমূল সদস্য মোশারফ হোসেনের দাবি, সহকারি সভাধিপতির অনাস্থার পক্ষে, জেলা পরিষদের ১৯ জন সদস্য ভোট দেবেন বলে এদিন লিখিতভাবে জানিয়ে দিয়েছেন।

Advertisement

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদের ২৬টি আসনের মধ্যে ১৩টি আসনে জয়ী হয়ে জেলা পরিষদে ক্ষমতা দখল করে বামফ্রন্ট। কংগ্রেস ও তৃণমূলের দখলে যায় আটটি ও পাঁচটি আসন। গত ১২ সেপ্টেম্বর চোপড়ার সিপিএম সদস্য শিবানী সিংহ, ইসলামপুরের সিপিএম সদস্য মহম্মদ হাফিজুদ্দিন, গোয়ালপোখরের সিপিএম সদস্য আলেমা নুরি, করণদিঘির সিপিএম সদস্য বিপাশা দাস সিংহ, হেমতাবাদের সিপিএম সদস্য প্রফুল্লচন্দ্র বর্মন ও হেমতাবাদের আরএসপি সদস্য মহসিনা খাতুন সহ তৃণমূলের পাঁচ ও কংগ্রেসের ছয় সদস্য সভাধিপতি ও সহকারী সভাধিপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে তাঁদের অপসারন দাবি করেন। এদিন অবশ্য কংগ্রেসের বাকি দুই সদস্যও অনাস্থার পক্ষে ভোট দিয়েছেন।

জেলা পরিষদে কংগ্রেসের বিরোধী দলনেতা পূর্ণেন্দু দে বলেন, “বামফ্রন্ট পরিচালিত জেলা পরিষদ গত এক বছরে জেলায় উন্নয়নমূলক কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে। সেই কারণে, জেলার সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থেই আমরা একজোট হয়ে সভাধিপতি ও সহকারী সভাধিপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে বাধ্য হয়েছি। পূর্ণেন্দুবাবু ও শিবানীদেবীর দাবি, বিরোধীদের সঙ্গে একজোট হয়ে অনাস্থা আনার দায়ে দল তাঁদের বহিস্কার করলে তাঁরা তৃণমূলে যাওয়ার কথা ভাববেন।”

গত ১৩ সেপ্টেম্বর তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে অনাস্থা আনার অভিযোগে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কংগ্রেস সদস্যদের বহিস্কার করার কথা জানিয়েছিলেন। জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দ এদিন বলেন, পুরো বিষয়টি দলের শীর্ষ নেতৃত্ব দেখছেন। তাঁরাই যা পদক্ষেপ করার করবেন। সিপিএমের জেলা সম্পাদক তথা জেলা বামফ্রন্টের সচিব বীরেশ্বর লাহিড়ী জানান, দলবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে বামফ্রন্টের ওই ছয় সদস্যকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, আগামী ২১ দিনের মধ্যে প্রশাসনের তরফে নতুন সভাধিপতি, সহকারী সভাধিপতি ও ১০ জন কর্মাধ্যক্ষ ঠিক করার জন্য বৈঠক ডাকা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন