নিজের সাজানো বাগানে শিস মহম্মদ। রতুয়ায় বাপি মজুমদারের তোলা ছবি।
কোথাও নিজের এক ফালি জমিতে চাষ করেছেন ফুল কপি। কোথাও বাঁধা কপি, ক্যাপসিকাম, বিনস বা উন্নত প্রজাতির লঙ্কা। কোনও জমিতে ধানের শিস দোল খাচ্ছে। কোনও খেতে শোভা পাচ্ছে লাল গোলাপ থেকে ডালিয়া। ফুল ও ফসল থেকে শুরু করে শাক সবজি যাই হোক না কেন, সব কিছুই নির্বিষ। জৈব সার প্রয়োগে একের পর এক চাষ করে নজির গড়েছেন তিনি। পুরস্কৃতও হয়েছেন ব্যতিক্রমী চাষ করে। মালদহের রতুয়ার সামসি সাহারাতলার ওই চাষির নাম আক্রামুদদৌলা ওরফে শিস মহম্মদ।
এক সময় জীবিকার তাগিদে চাষ শুরু করলে পরে নির্বিষ শস্য ফলানো হয়ে দাঁড়ায় তাঁর নেশা। আর সেই নেশার টানেই সকাল থেকে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে এক খেত থেকে অন্য খেতে ছুটে বেড়ান। তাঁর ব্যতিক্রমী রাসায়নিকহীন চাষের পদ্ধতি শেখাচ্ছেন এলাকার চাষিদেরও। কৃষি দফতরের পাশাপাশি চাষিদের কাছে এক প্রতিষ্ঠান হয়ে দাঁড়িয়েছেন শিস।
কৃষি দফতরের রতুয়া-১ ব্লকের সহকারি কৃষি অধিকর্তা শরৎচন্দ্র সরকার বলেন, “শিস মহম্মদ আমাদের কাছে এক সৃজনশীল চাষি হিসেবেই পরিচিত। নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজের মতো করে চাষ করে উনি সফল। গত বছর শ্রী পদ্ধতিতে ধান চাষ করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। এলাকার চাষিরা ওঁর কাছ থেকে নানা ভাবে উপকৃত হয়েছেন। আমরাও সব সময় ওঁর পাশে রয়েছি।”
কৃষি দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, আগে এই এলাকায় শীতের মরসুম ছাড়া ফুল কপি চাষ হত না। কিন্তু এখন কম হলেও সারা বছর বেশ কিছু চাষি ফুল কপি চাষ করেন। সেটা আগে নিজে করে পরে অন্যদের সেই পথ দেখিয়েছেন শিস মহম্মদ। শুধু ফুল কপি বা বাঁধা কপি নয়, আগে ব্যবসায়ীদের অগ্রিম বায়না দিলেই ক্যাপসিকাম, বিনস বা উন্নত প্রজাতির লঙ্কা পেতেন খুচরো ব্যবসায়ীরা। কিন্তু মহম্মদ নিজেই উদ্যোগী হয়ে এলাকায় সে সবের চাষ শুরু করেন। এখন এলাকায় সারা বছর সে সব চাষ হয়।
গবেষণা দূরের কথা, ১৯৭৭ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাশের পর অর্থাভাবে আর পড়াশুনা করতে পারেননি। তবুও নিজেকে এক জন গবেষক চাষি বলেই সব সময়ে ভাবেন তিনি। অনেক সময় কৃষি দফতরও তাঁর কাছে পরামর্শ নিয়ে থাকে। দুই ছেলেমেয়ে ও স্ত্রী রোকিয়া বিবিকে নিয়ে তার সংসার। গত বছরই কৃষকরত্ন পুরস্কার পান। শুধু ফসল বা সবজি নয়। ফুল চাষেও সমান পারদর্শী তিনি। তাঁর বাগানের একটি গোলাপ গাছে ১০০টি ফুল বা একটি ডালিয়া গাছে ২৫টি ফুল ধরাই নয়, তার রঙও বেশি প্রাকৃতিক। ফুল চাষেও তাঁর পরামর্শ নিয়ে চাষ করেন এলাকার বহু চাষি। শিস মহম্মদ বলেন, “বিভিন্ন চাষে জৈব সার কতটা পরিমাণে ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যায় তা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা ও হাতে-কলমে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেই দিন কেটে যায়। নিজে সফল হওয়ার পর সে ভাবে অন্যদের চাষে উৎসাহ দিই। সব থেকে বড় কথা আমার ফসল নির্বিষ। যা স্বাদে অনন্য। পাশাপাশি শরীরের পক্ষেও ক্ষতিকারক নয়।”