মহকুমা আদালত ভবনের একটি অংশের সম্প্রসারণের জন্য ৪৩ লক্ষ টাকার বরাদ্দ পেয়েছে দার্জিলিং জেলা প্রশাসন। রাজ্যের আইন দফতর থেকে এই বরাদ্দ সম্প্রতি পাওয়া গিয়েছে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে।
২০১২ সালে স্থায়ী ভবন তৈরির জন্য পুরোনো আদালত ভবন ভেঙে দেওয়া হলেও, নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি বলে অভিযোগ। পুরোনো ভবন ভেঙে ফেলায় আদালতের স্থানাভাবে আইনজীবী থেকে বিচারপ্রার্থী সকলকরেই সমস্যায় পড়তে হয় বলে অভিযোগ। বর্তমান আদালত চত্বরেই স্থায়ী ভবন তৈরি এবং ভক্তিনগর থানা এলাকাকে শিলিগুড়ি আদালতের অর্ন্তভুক্তির দাবিতে গত ৮ ডিসেম্বর থেকে কর্মবিরতি শুরু করেছেন বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। গত ৫ জানুয়ারি বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনায় বসে স্থায়ী ভবন তৈরি না হওয়া পর্যন্ত সমস্যা মেটাতে বর্তমান আদালত ভভনের একটি অংশে সম্প্রসারণের জন্য বরাদ্দের আশ্বাস দিয়েছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। দার্জিলিং জেলা তৃণমূলের লিগাল সেলের দাবি, আশ্বাস মতো মন্ত্রী উদ্যোগী হওয়াতেই দ্রুত জেলা প্রশাসনের কাছে সম্প্রসারণের বরাদ্দ এসেছে।
এ দিন গৌতমবাবু বলেন, “রাজ্যের আইন দফতর থেকেই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আমি বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। আইন দফতরের সচিবস্তরেও কথা বয়েছে। সেই মতো বরাদ্দ জেলা প্রশসানের হাতে চলে এসেছে বলে শুনেছি।’’ প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, বর্তমানে এসিজিএম আদালত ভবনের উপরে আড়াআড়িভাবে সম্প্রসারণের কাজ হবে বলে প্রস্তাব রয়েছে। তবে হাইকোর্ট তথা বিচারবিভাগের সম্মতি মিললেই সেই কাজ শুরু হবে বলে বলে প্রশাসন জানিয়েছে।
দার্জিলিঙের জেলাশাসক পুনীত যাদব বলেন, “কিছুদিন আগে আইন দফতর থেকে বরাদ্দ মঞ্জুরির কথা জানানো হয়েছিল। সম্প্রতি সেই বরাদ্দ পাওয়া গিয়েছে। হাইকোর্টের অনুমোদন পেলে নির্মাণ কাজও শুরু হয়ে যাবে।” স্থায়ী ভভন নির্মাণের জন্য এর আগেই আইন দফতর সাড়ে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। তারমধ্যে প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকা জেলা প্রশাসনকে দেওয়া হয়। সেই টাকার কিছু অংশ দিয়ে পুরোনো ভবন ভাঙার কাজ হয়েছে। নতুন ভবন তৈরি না হওয়া পর্যন্ত অন্য একটি ভবন সম্প্রসারণ করে কাজ চালানোর জন্যও সে সময় বরাদ্দ চেয়ে প্রস্তাব পাঠায় প্রশাসন। তবে বিচারবিভাগের সবুজ সঙ্কেত না মেলায় স্থায়ী ভবনের বরাদ্দ দিয়ে সম্প্রসারণের কাজ করা যায়নি। সে কারণেই এবার রাজ্য সরকার সম্প্রসারণের জন্য নতুন খাত তৈরি করে অর্থ মঞ্জুর এবং বরাদ্দ করলেন বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। তৃণমূল লিগাল সেলের জেলা সভাপতি পীযূষ ঘোষের দাবি, বার অ্যাসোসিয়েশনে এসে মন্ত্রী গৌতমবাবু যে আশ্বাস দিয়েছিল, তারই বাস্তবায়ন হয়েছে।
শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক চন্দন দে বলেন, “আদালত ভবনের সম্প্রসারণের উদ্যোগকে সবসময়েই স্বাগত জানাই। সেই খাতে বরাদ্দের কথা শুনেছি, তবে এখনও সরকারি ভাবে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। সম্প্রসারণে কিছুটা সমস্যা মিটলেও, আমাদের মূল দাবি বর্তমান চত্বরেই স্থায়ী ভবন নির্মাণ।”
বিজেপি প্রভাবিত আইনজীবীদের একাংশের দাবি, সম্প্রতি দার্জিলিঙের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া শিলিগুড়ির আইনজীবীদের সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হয়েছেন। সাংসদের চিঠির প্রেক্ষিতেই কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া শিলিগুড়ি আদালতের সমস্যা মেটাতে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে চিঠিও লেখেন। তারপরেই হাইকোর্টের প্রতিনিধি দল শিলিগুড়িতে আসে বলে বিজেপির দাবি। গত শনিবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর সহ ৫ বিচারপতির দল শিলিগুড়ি আদালত ভবন পরিদর্শনে আসেন। বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের সঙ্গেও তাঁদের আলোচনা হয়। সাংসদ নিজেও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করে সমস্যা সমাধানের আর্জি জানান বলে জানা গিয়েছে। সাংসদের কথায়, “আমাদের উদ্যোগ দেখে যদি, সকলেই এগিয়ে আসেন তবে তো ভালই হয়।”